খেলাধুলা প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের জীবনে জড়িয়ে রয়েছে। তাই এখানে খেলাধুলার উপকারিতা গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রত্যেক মন্দির পরিষ্কার রাখা হয়। ঘর বাড়ীর ওপর কতবার ঝাড়ু চালানো হয়। মন্দির/ মসজিদ গুলোকে কি সুন্দরভাবে গুছিয়ে রাখা হয়। রাস্তা গুলোতেও ট্র্যাফিক রুল আছে। তাহলে শরীর নামক মন্দিরের বেলায় নয় কেন? সবচে বড় মন্দির আমাদের শরীর। খেলাধুলা করে সেই শরীরের প্রতিটি কোষকে, প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কে গুছিয়ে রাখা উচিৎ।
আমাদের শরীরের ভেতরে যে শিরা ধমনী রয়েছে, সেইসব তো রাস্তার মতোই। সব রাস্তাতে যদি ট্র্যাফিক রুল থাকে, তাহলে শিরা, ধমনী, শ্বাসনালী, এইসবের ক্ষেত্রে কেন নিয়ম থাকবে না? ট্র্যাফিক রুল ভঙ্গ করলে, যেমন এক্সিডেন্ট এর চান্স থাকে; সেইরকম শরীর ভালো রাখার জন্য যেসব নিয়ম কানুন রয়েছে; সেসব মেনে না চললে শরীর তো খারাপ হবেই।
ঘর বাড়ী পরিষ্কার না রাখলে যেমন বাড়ীতে নোংরা জমে যায়, ঠিক তেমনি খেলাধুলা না করলে, শরীরে চর্বির সাথে সাথে নোংরা জমতে থাকে।
তাই ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করে শরীরের প্রতিটি অংশকে সতেজ রাখাটা খুবই দরকার।
খেলাধুলা কি?
আপনার শরীরের ভেতরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো তো নিয়ম মতো কাজ করে চলেছে; যেমনটা সূর্য, পৃথিবী, আর নক্ষত্রগুলো করে চলছে। কিন্তু আপনার বাহিরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো কি নিয়ম মতো কাজ করছে? মানে আপনার হাত, পা এর যতখানি মুভমেন্ট দরকার, ততখানি প্রত্যহ হয় তো?
খেলাধুলা এমন এক শরীর চর্চা যা আপনার বাহিরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলোর মুভমেন্ট এর মাধ্যমে আপনার শরীরের ভেতরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলোকে রাখে সতেজ।
খেলাধুলা নিয়ে উক্তি
অসীম শক্তি এর সন্ধান পেতে হলে শরীরচর্চা ও ব্রম্ভচর্য পালন করুন। খেলাধুলা করে জীবন সংগ্রামে অভ্যস্ত হতে শিখুন। পরাজয় বরন করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে আসুন। তাহলেই আপনি অসীম শক্তির সন্ধান পাবেন।
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ
জীবন সংগ্রামে খেলাধুলা ই পারে মানুষ কে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে। তাই খেলাধুলা এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শ্রী বিধানচন্দ্র রায়।
মানুষের শরীর এক প্রাসাদ বিশেষ। এই প্রাসাদকে শত্রুর আক্রমন থেকে রক্ষা করতে হলে শরীরচর্চা করার মাধ্যমে অবশ্যই সুদৃঢ় করতে হবে।
ইকবাল
গীতা পাঠের চেয়ে ফুটবল খেলা অধিকতর শ্রেয়।
স্বামী বিবেকানন্দ
খেলাধুলার শ্রেণীবিভাগ
যেসব খেলা বাড়ীতে করা যায় না, সেইসব খেলা কে ইংরেজিতে আউটডোর গেমস বলে। আর যেসব খেলা বাড়ীর মধ্যেই খেলা যায়, সেইসব খেলা কে ইংরেজিতে ইন্দোর গেমস বলে। তবে এখানে আউটডোর গেমস এর ওপরেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ইন্দোর গেমস
লুডো, দাবা, তাস খেলা, ব্রেন ভিটা, ইত্যাদি খেলা হল ইন্দোর গেমস। এদের মধ্যে ব্রেন ভিটা এবং দাবা খেলা বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে।
আউটডোর গেমস
ব্যাডমিন্টন, হকি, ফুটবল, ক্রিকেট, কবাডি, টেনিস, ইত্যাদি হল আউটডোর গেমস। বর্তমানে এইসব গেমস এর সংস্থাও আছে।
খেলাধুলার উৎপত্তি
প্রাচীনকাল থেকেই এই খেলাধুলার রেওয়াজ চলে আসছে। প্রায় ৪০০০ বছরেরও আগে থেকেই দৌড়, মুষ্টিযুদ্ধ, অসি লড়াই, বর্শা ছোঁড়া, ইত্যাদি খেলাধুলার সুত্রপাত।
৭৭৬ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে গ্রীসে অলিম্পিক খেলার সূচনা হয়। সেই খেলা এখনো হয়ে আসছে।, এই প্রতিযোগিতায় ৩৫ ধরনের খেলা হয়ে থাকে। কিছু খেলা হল যেমন – দৌড়, সাঁতার, অসি চালনা, হকি, স্কেটিং, জিমনাস্টিক, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেট বল, ভলি বল ইত্যাদি।
১৮৪৪ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শুরু হয়।
১৮৬৩ সালে ইংল্যান্ডে ফুটবল খেলার সূচনা হয়। যদিও আনুমানিক ৩৫০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে, প্রথম ফুটবল খেলা শুরু হয়।
বর্তমানে এইসব খেলাধুলা টেলিভিশনের পর্দায় বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।
খেলাধুলার উপকারিতা গুলো কি কি?
খেলাধুলার উপকারিতা অসীম। প্রাচীনকালে খেলা ছিল ঠিকই, কিন্তু সেইভাবে কোন সংস্থা ছিল না। কিংবা সেইভাবে খেলাধুলা করার কোন রেওয়াজ ছিল না। মানুষ খেলাধুলা ছাড়াই, সারাদিনে এতো পরিশ্রম করে ফেলত, যে আলাদা করে খেলার দিকে ধ্যান দেওয়ার দরকার পড়ত না।
খেলাধুলার উপকারিতাগুলোর মাধ্যমে দেখে নেওয়া যাক বর্তমানে খেলাধুলার গুরুত্ব কতখানি।
১। সাস্থ্যই সম্পদ
সভ্যতা উন্নতির পথে হেঁটেই চলেছে। উন্নতি মানে প্রচুর মেশিনের জন্ম দেওয়া যা আপনার আর আমার কাজ কে কমিয়ে দেবে। এর ফলে, প্রাচীন কালের মানুষদের মতো আমাদের পরিশ্রম হয় না।
যে কোন পার্টস – আপনি যদি ব্যবহার না করেন; তা ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে পড়ে। ঠিক তেমনি, আমরা যদি আমাদের হাত পা এর যতখানি দরকার ততখানি মুভমেন্ট না করি, তাহলে তাদের কর্ম ক্ষমতাও কমে যাবে। আর এটাই স্বাভাবিক।
সেইজন্যই স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিহার্য। তবে সেই খেলা জিমনাস্টিক কিংবা দৌড়, কিংবা শ্বাস ব্যায়ামও হতে পারে।
২। মানসিক বিকাশ
মন খারাপ? আপনার বাড়ীর কাছাকাছি যদি সুইমিং পুল থাকে, তাহলে একটু সাঁতার কেটে আসুন। দেখবেন মন খারাপ সব দূর হয়ে গেছে। যদি তা না পারেন করতে, তাহলে পার্কে গিয়ে একটু দৌড়ে আসুন।
খেলাধুলা করলে শরীরে ঘাম হয়। আর এই ঘামের সাথে শুধুই কি শরীরের নোংরা বেরোয়? এর সাথে মনের আবর্জনাও দূর হয়ে যায়।
আপনি বলতে পারেন- তা তো সাময়িক ভাবে দূর হয়। পরের দিন আবার মন খারাপে ভুগেন, তাই তো? এটা তো হওয়াই উচিৎ। যেমন প্রত্যেকদিন সূর্য ওঠে; প্রত্যেকদিন আপনি ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করেন; ঠিক সেইভাবে প্রত্যেকদিন মনের মধ্যে আবর্জনা জমা হয়। আর তা পরিষ্কার করার জন্য, আপনার প্রত্যেকদিন শরীর চর্চা করা উচিৎ।
মানসিক বিকাশে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম।
৩। জাতীয়তাবোধ তৈরি
দুই দেশের মধ্যে যখন খেলাধুলা নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়, খেলোয়াডদের মনে তখন জাতীয়তাবোধ তৈরি হয়। তারা দেশকে আরও বেশী ভালবাসতে শেখে যখন তারা দেখে যে দেশের কোটি কোটি জনসাধারন তাদের জয়ের আশায় মুখ চেয়ে আছে।
খেলোয়াডদের কাছে সারা দেশ বাসি পরিবারের একজন হয়ে ওঠে।
৪। শৃঙ্খলাবোধ
বিভিন্ন খেলাধুলায় যোগদান করলে, সেই সংস্থার নিয়ম কানুন গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মেনে চলতে হয়। এতে খেলোয়াডদের মনে শৃঙ্খলাবোধ জন্মায়।
৫। যোগাযোগ বৃদ্ধি
পাড়ার খেলা বলুন, কিংবা বড় বড় সংস্থা দ্বারা আয়োজিত খেলাই বলুন না কেন- আপনি যে কোনটাতেই যোগদান করলে আপনার পরিচিতির যে পরিধি তা বৃদ্ধি পাবে। আপনি যত বেশী মানুষ এর সাথে যোগাযোগে আসবেন, আপনি ততই অভিজ্ঞ হবেন।
৬। শিক্ষার উন্নয়ন
আপনি যদি ফুটবল খেলে থাকেন; আর কখনো কোন কম্পিটেটিভ পরীক্ষায় বসেন; ফুটবল সম্পর্কিত সব প্রশ্নের উত্তর আপনি বই না পড়েই দিতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি ফুটবল খেলে না থাকেন, আপনি প্রচুর পড়ার পর তা চর্চা না করলে সহজেই ভুলে যাবেন।
যত আপনি এইসব এক্টিভিটিতে নিজেকে নিযুক্ত রাখবেন, আপনি তত বেশী শিক্ষা লাভ করবেন।
শুধু তাই নয়, খেলাধুলা করার পর, আপনার বাড়ীতে বই পড়ার দিকে মনোযোগ বাড়াতে পারবেন।
৭। ভালো কাজের মধ্যে সময় কাটানো
হাতে যদি সময় থাকে আপনিও সেই খেলাধুলাতে সময় দিন- যে খেলাধুলার এতো উপকারিতা; যা আপনার স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখে।
বেশীরভাগ মানুষেই সপ্তাহের কিছু দিনের বেশ কিছুটা সময় বসে বসেই কাটিয়ে দেয়। তাদের উদ্দ্যেশে বলবো- যদি কিছু কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না, তাহলে নিজের শরীর কে ভালবাসুন। শরীর চর্চা করুন।
৮। একাগ্রতা বৃদ্ধিতে খেলাধুলার ভূমিকা
দিনে অন্ততপক্ষে এক ঘণ্টা খেলাধুলা করলে, একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়। যে কোন কাজে আপনি মন বসাতে পারবেন। আপনার মন থেকে অশুভ চিন্তা দূরে হয়ে যাবে।
৯। টাকা রোজগারের এক মাধ্যম
বর্তমানে বড় বড় সংস্থাগুলো যারা ফুটবল, ক্রিকেট অরগেনাইজ করে থাকে, সেইসব সংস্থাগুলোতে কতো মানুষ কাজ করে। খেলোয়াড়রাও দেশের হয়ে অন্য দেশের সঙ্গে খেলায় অংশগ্রহণ করে প্রচুর পরিমানে টাকা রোজগার করে।
তাই আপনার যদি পড়াশুনার চেয়ে খেলাধুলা তে যেমন ধরুন ক্রিকেট বা ফুটবলে বেশী ইন্টারেস্ট লাগে, তাহলে অযথা চিন্তা করবেন না। সেক্ষেত্রে খেলাধুলা টাই ভালো করে করুন। এই খেলাধুলাও পারে আপনাকে আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করে তুলতে।
বর্তমানে এইসব খেলাধুলা প্রচুর মানুষের অন্ন সংস্থানের এক উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খেলাধুলার অপকারিতা কি?
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন- যা কিছু প্রয়োজনের চেয়ে অত্যধিক, তাহাই বিষ।
যেমন ধরুন টেলিভিশনে খবর শোনা ভালো, এতে চারিপাশে কি হচ্ছে জানা যায়। কিন্তু অত্যধিক তথ্য সরবরাহ কখনোই ভালো না।
ঠিক একই রকম ভাবে, অত্যধিক খেলাধুলা শরীরে ক্ষতি করতে পারে। শরীরে আঘাত লাগতে পারে। তাই প্রত্যহ এক রুটিন ফলো করা উচিৎ। ভর্তি পেটে জিমনাস্টিক এর মতো খেলাধুলা করাও উচিৎ নয়। খেলাধুলা করার আগে, খেলাধুলা করার নিয়মকানুন গুলোও জানা উচিৎ।
তবে কিছু শরীর চর্চা যেমন হাঁটা কখনোই খারাপ নয়।
আর এইসব খেলাধুলা নিয়মিত করতে থাকুন যা আপনার শরীরে ক্ষতি কখনোই করবে না।
অপকারিতার চেয়ে খেলাধুলার উপকারিতা ই খুব বেশী। সাবধানে নিয়ম মেনে যদি খেলাধুলা করেন তাহলে আপনার চোখে খেলাধুলার উপকারিতা ই ধরা পড়বে। আশা করি “খেলাধুলার উপকারিতা গুলো কি কি ” লিখাটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
অসাধারণ
অনেক ধন্যবাদ।
আরো ভালোভাবে বুঝালে ভালো হতো
You are right 👍👍👍
নাইস
আরো ভালো করে যদি বোঝাতে তাহলে অনেক ভালো হতো 😄😄😄😄😄😄