নারী পুরুষের সম অধিকার রচনা

নারী পুরুষের সম অধিকার

নারী পুরুষের সম অধিকার রচনা টি আশা করি আপনাদের উৎসাহিত করবে। কেন নারী পুরুষের সম অধিকার হওয়া উচিত; তা বুঝতেও সাহায্য করবে।

পুরুষ শাসিত সমাজ। মান্ধাতার আমলেও ছিল। এখনও আছে। প্রাচীনকালে, নারীরা চুপটি করে সব সহ্য করে গেছে। কিন্তু এখন নারীরা বুঝতে পেরেছে যে নারী পুরুষের সম অধিকার হওয়া উচিৎ।

বুঝতে পারার জন্য প্রয়োজন ছিল চেতনা শক্তির। এই চেতনা শক্তির যোগান দিয়েছিল কিন্তু পুরুষেরাই।

পুরুষ শাসিত সমাজের মধ্যেও কিছু পরিবার আগেও ছিল যেখানে নারীদের মায়ের আসনে বসানো হত।

সেইরকম এখনো অনেক পরিবার আছে। দোষ সমাজের না। দোষ মানসিকতার। দোষ দৃষ্টিভঙ্গির।

অনুন্নত মানসিকতা এবং অনুন্নত দৃষ্টিভঙ্গির কারন শিক্ষার অভাব। গার্হস্থের কাজে মাতিয়ে রাখা হত নারীদের।

শিক্ষা লাভের জন্য সুযোগও দেওয়া হত না। নারীরা শিক্ষালাভের জন্য বাড়ীর বাইরে গুরুকুলে বেরোলে, বাড়ী কে সামলাবে?

কিছু শিক্ষিত পুরুষ মানুষ নারীদের কথা ভেবেছিল বলেই তো কিছু নারী শিক্ষালাভের সুযোগ পেয়েছিল।

আর তারপর থেকেই সেই শিক্ষা ছড়াতে থাকল নারীদের মধ্যে।

নারী পুরুষের সম অধিকার হতে পারে না বলে সোচ্চার হল সমাজের কিছু বলিষ্ঠ পুরুষেরা।

সমাজ উন্নত হয়েছে ঠিকই তবে আংশিক ভাবে।

বেশীরভাগ নারীর মধ্যে শিক্ষা লাভের জন্য আগ্রহ জন্মেছে ঠিকই; কিন্তু তা সত্বেও কিছু গ্রামে এখনো নারীরা মান্ধাতার আমলের মতোই বঞ্চিত।

অবশ্য এই পিছিয়ে থাকার পেছনে তারা নিজেরাই দায়ী।

যদিও নারীদের উন্নতির পেছনে পুরুষদের অবদান অপরিসীম; তাও ধিক্কার হয় এই পুরুষ শাসিত সমাজ এর সেই সব পুরুষের ওপর যাদের নিজের ওপর ভরসা নেই আর তাই তো ভাবতে থাকে যে পুরুষদের বেকারত্বের জন্য নারীরাই দায়ী।

নারী পুরুষের সম অধিকার এর জন্য কি কি করা উচিৎ

নারী পুরুষের সম অধিকার এর জন্য কোন কোন দিকের ওপর বিশেষ নজর দেওয়া উচিৎ দেখে নেওয়া যাক এক নজরে-

১। নারীরা পুরুষের শিকড়

একটি গাছ যদি তার শিকড় কে ভুলে যায়, তাহলে কি সেই গাছ টি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে?

নারীরা তো পুরুষের শিকড়। যে গাছে শিকড় নেই, সেই গাছের জীবন যেতেও বেশী দেরি নেই।

তাই শিকড়ের যত্ন নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

If you want something said, ask a man. If you want something done, ask a woman.

Margaret Thatcher

A woman is a full circle. Within her, is the power to create, nurture, and transform.

Diane Mariechild.

২। পুত্র কন্যার বিভেদ বন্ধ করা উচিৎ

পুত্র কন্যার বিভেদ এর জন্যই তো এখনো ভ্রূণ হত্যা হয়; এই উন্নত যুগেও কন্যা শিশুকে হত্যা করতে বাধ্য হয় এক মাতা।

ভ্রূণ হত্যা বা কন্যা শিশু হত্যা তখনই বন্ধ হবে যখন পুত্র আর কন্যা কে সমান চোখে দেখা হবে।

The greatest destroyer of peace is abortion because if a mother can kill her own child, what is left for me to kill you and you to kill me? There is nothing in between.

Mother Teresa.

এই যুগে দাঁড়িয়েও, কিছু কিছু পরিবারে দেখেছি- কন্যা শিশুকে বেশী দূর পড়ানো হয় না,

ছোটবেলা থেকে মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যে সে কয়েক বছর পরেই শশুরবাড়ী যাবে।

এমন কি ভালো ভালো খাবার যেমন- ফল, দুধ ইত্যাদি কন্যা শিশুটিকে দেওয়াও হয় না।

যে কন্যা শিশুটি কয়েক বছর পরেই শশুরবাড়ী চলে যাবে, অন্য বাড়ী কে আপন করে নেবে, আসল পিতা মাতা থেকে অনেক দূরে থাকবে; সেই কন্যা শিশুটির ওপর খরচ করে কি লাভ?

সত্যিই তো- বিবাহের পর মেয়েরাই কেন ছেলের বাড়ীতে গিয়ে সংসার করবে?

ছেলেরাও তো মেয়েটার বাড়ীতে এসে সংসার করতে পারে। একটা মেয়েই কেন সব সময় শশুর-শাশুড়ীর দেখাশোনার দায়িত্ব নেবে, একটা ছেলে নয় কেন?

যেদিন ছেলেটির ও দায়িত্ব হবে তার শশুর শাশুড়ী কে দেখাশোনা করা, যেদিন ছেলেটিও বাধ্য হবে মেয়েটির বাড়ীতে গিয়ে সংসার করতে; সেইদিনই কন্যা পুত্র সমান হবে সবার চোখে।

সেইদিন ভ্রূণ হত্যা হবে না, মেয়ের বাবা মা এর কাছে মেয়ে বোঝা হবে না, পুত্রের আশায় কোন এক মায়ের ৭-৮ টা বাচ্চা হবে না।

৩। কর্ম ক্ষেত্রে নারীর সুরক্ষা দেওয়া উচিৎ

শারীরিক ভাবে নেচারেলিই নারীরা পুরুষের চেয়ে কম শক্তির অধিকারী। আর এই সুযোগই তো নিয়ে থাকে পুরুষ শাসিত সমাজের কিছু পুরুষেরা।

মানসিক দিক দিয়ে নারীরা খুবই শক্তিশালী। আর সেই মানসিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখা যায় তার শিক্ষা দেওয়া উচিৎ প্রতিটি নারীকে।

৪। বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র পাত্রী এর নিজেদের নিজেদেরকে পছন্দ করা উচিৎ

বিবাহের ক্ষেত্রে ছেলেরা যেমন মেয়েদেরকে পছন্দ করে ঠিক তেমনি মেয়েদের ও ছেলেদের ব্যাপারে পছন্দ ও অপছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ।

৫। দুটি এর বেশী সন্তানের জন্য নারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি বন্ধ করা উচিৎ

এখনো কোন কোন পরিবারে মেয়েদের প্রথম বাচ্চা পুত্র সন্তান না হলে; তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয় আরও বাচ্চা নেওয়ার জন্য। যতক্ষণ না অবধি পুত্র সন্তান হয়, ততক্ষণ অবধি মেয়েদের বাধ্য করা হয় বাচ্চা নেওয়ার জন্য।

মেয়েদের ওপর চাপ সৃষ্টি বন্ধ করে তাদের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ। সন্তান জন্ম দেওয়ার ব্যাপারে মেয়েদের ইচ্ছেকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।

৬। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য নারীদের উৎসাহ দেওয়া উচিৎ

You educate a man; you educate a man. You educate a woman; you educate a generation.

Brigham Young

ছেলে মেয়ে হিসেবে বিচার না করে, প্রত্যেক মানুষেরই নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিৎ। আর্থিক দিক দিয়ে প্রত্যেকেরই শুধুমাত্র নিজের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিৎ।

অন্ততপক্ষে নিজের খরচ চালানোর জন্য যে টুকু টাকা দরকার, সেইটুকু টাকা রোজগার করার ক্ষমতা শুধু মাত্র পুরুষ মানুষ কেন, প্রতিটি নারীরও থাকা উচিৎ।

৭। গ্রামগুলোতে নারীদের ফ্রি তে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দেওয়া উচিৎ

I speak not for myself but for those without a voice – those who have fought for their right to live in peace, their right to be treated with dignity, their right to equality of opportunity, their right to be educated.-

Malala Yousafzai

প্রতিটি গ্রামে মেয়েদের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে, প্রশাসনের বিশেষ নজর দেওয়া উচিৎ। গ্রামগুলো কে উন্নত করার জন্য শুরুতে নারীদের ফ্রি তে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দেওয়া উচিৎ।

আমাদের দেশে শহরের চেয়ে গ্রামের সংখ্যা বেশী। গ্রামগুলোতে সেইভাবে কোন সুযোগ সুবিধা নেই।

শহরের মতো উন্নত স্কুলও নেই কিছু কিছু গ্রামে। এইজন্য গ্রামের ছেলেরা শিক্ষায় সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যায়।

কিন্তু মেয়েদের পক্ষে গ্রাম ছেড়ে দূরে যাওয়া টা অসুবিধেজনক। তাছাড়া বাড়ীর লোকজন কিছুতেই একটি মেয়ে কে উচ্চ শিক্ষার জন্য গ্রাম ছাড়তে দেয় না কারন এতে তাদের টেনশেন অনেক গুনে বেড়ে যায়।

সেই দেশ কেই উন্নত দেশ বলা যায় যে দেশে নারী পুরুষের সম অধিকার থাকে। এই জন্য পুরুষদের তেজ কমানো দরকার আর নারীদের দরকার সাহায্যের।

নারী পুরুষের মধ্যে সবচে বেশী বৈষম্য পরিলক্ষিত হয় গ্রামগুলোতে। তাই প্রশাসনের গ্রামগুলোর উন্নতির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিৎ। গ্রামের মধ্যেই যদি খুব ভালো ভালো কলেজ খোলা হয়, মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার পথ প্রশস্ত হয়ে যায়।

গ্রামে নারীরা বেশী বঞ্চিত হয়, বেশী প্রতারিত হয়, বেশী অপমানিত হয়। তবে এই বঞ্চনা, প্রতারনা এবং অপমান এই সব কিছুই ব্যাক্তির নিজস্ব পরিবার এর মধ্যেই ঘটে থাকে।

পরিবার থেকেই গড়ে তোলা উচিৎ -নারী পুরুষের সম অধিকার

পরিবার এর সঠিক পরিবেশ এই প্রতিটি মানুষকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে থাকে। পরিবেশ যদি সঠিক না হয়, শুধু নারী কেন, পুরুষদের পক্ষেও জীবনে উন্নতি করা টাফ হয়ে যায়।

একটি পুরুষ নিজে যখন হ্যাপি থাকে না, তখন তো সে নানান বাহানা দিয়ে শেষ মেশ প্রমান করতে চায় যে এর জন্য নারীই দায়ী।

তাই নারী পুরুষের সম অধিকার বজায় রাখার জন্য পুরুষদের উন্নতির দিকেও লক্ষ্য রাখা উচিৎ। আর এইসব ব্যাপারে প্রশাসনের চেয়ে একটা পরিবারের দায়িত্ব বেশী।

প্রায় ১০০ বছর আগে  নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের বাড়ীতে যে পরিবেশ ছিল তা সত্যিই অতুলনীয়। সেই আমলেও নেতাজী তাঁর বউদিরই কথা শুনতেন। নেতাজীর বাড়ীতে নেতাজীর মা এর কথায় সব হত।

প্রতিটি পরিবার নেতাজীর পরিবারের মতো হওয়া উচিৎ যেখানে নারী পুরুষের সম অধিকার বিরাজমান।

প্রতিটি পরিবারে সঠিক পরিবেশ হলে, প্রতিটি জিলাতেও সঠিক পরিবেশ হতে বাধ্য। আর প্রতিটি জিলাতে সঠিক পরিবেশ হলে,প্রতিটি রাজ্যেও সঠিক পরিবেশ হবে।

প্রতিটি রাজ্যে ভালো পরিবেশ হলে, প্রতিটি দেশেও ভালো পরিবেশ হবে। তাই যেসব দেশে নারী পুরুষের সম অধিকার নেই, সেই সব দেশে প্রতিটি পরিবারের দিকে আগে নজর দেওয়া উচিৎ।

আশা করি নারী পুরুষের সম অধিকার রচনা টি তে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, সবাইকে ভালো রাখুন। চলুন, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে! ভালো লাগলে কিম্বা কাজে লাগলে নারী পুরুষের সম অধিকার রচনা টি শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট