বেকারত্ব দূর করার ৮ টি সহজ উপায়

কর্মহীনতা

বেকারত্ব এর সমস্যায় কি ভুগছেন? হটাত করে চাকরী চলে যাওয়াতে কি মাথার ছাদ ভেঙ্গে যাওয়ার মতো অবস্থা? পুরো পরিবারের দায়িত্ব কি আপনার হাতে? এই নিয়ে প্রচুর হতাশায় আছেন? বেকারত্ব দূর করার সহজ উপায় খুঁজছেন?

মন খারাপ একদম করবেন না। সবার আগে মনকে ধীর স্থির শান্ত করুন। নেগেটিভ চিন্তাকে প্রশ্রয় দেবেন না। মনে প্রচুর আত্মবিশ্বাস নিয়ে পোষ্টটি পড়ুন।

বেকারত্ব তো ভারতবর্ষে অনেকদিনের সমস্যা। আমাদের দেশের একটা বড় রোগ। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এই রোগীর সংখ্যা আরোই বেড়ে গেছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কখনোই খুব ভালো ছিল না। করোনা ভাইরাস সেই শোচনীয় অবস্থাকে আরোই শোচনীয় করে তুলেছে।

সময় যতই খারাপ যাক না কেন, আত্মহত্যার কথা কখনোই ভাববেন না। সমস্যার সমাধান খুঁজে সমস্যাকে দূর করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সমস্যা থেকে পালিয়ে যাওয়াটা নয়।

আমাদের দেশে বেকারত্ব ছাড়াও তো কতো সমস্যা রয়েছে যেমন ধরুন সরকারি হসপিটাল ফ্যাসিলিটি ভালো না, রাস্তায় কতো এক্সিডেন্ট হয়, ইত্যাদি। কই, সেইসব সমস্যার জন্য তো আপনি হতাশায় ভোগেন না? কেন জানেন? এই সমস্যাগুলো আপনাকে বিচলিত করে না।

বর্তমানে ১৩৫ কোটি লোকের ২৭% লোক বেকারত্ব সমস্যায় ভুগছে। মানে ৩৬ কোটি লোক এই সমস্যায় জর্জরিত। সংখ্যাটা সাঙ্ঘাতিকভাবে বেশী।

বেকারত্ব দূর করার উপায়গুলো জানার আগে অন্যদের দোষ দেওয়া বন্ধ করুন। দেশকে, বা সরকারকে দোষ দিয়ে, ফেসবুকে কিছু পোস্ট শেয়ার করে আপনার আমার মতো সাধারন মানুষের কিছু লাভ হবে না। দেখে নিন বেকারত্ব দূর করার কিছু সহজ উপায় আর বদলে ফেলুন জীবন, দূর করুন হতাশাঃ

১। নিজেকে এনালিসিস করুন

আপনি কি কাজ করতে ভালোবাসেন, তা ভালো করে জানুন। সেই সব কাজ করে কি চাকরী পাওয়া যায়? বা সেইসব কাজ করে কি কোনভাবে টাকা রোজগার করা যায়? এইসব তথ্যগুলো জানুন।

নিজেকে এনালিসিস করুন আর বেকারত্ব এর কারন খুঁজুন
এনালিসিস

আপনি কি ভাবছেন আপনার পছন্দের কাজের কোন ডিমান্ড নেই? প্রতিটি কাজই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি কাজ মানুষের জীবনযাত্রায় কোন না কোন ভাবে জড়িয়ে আছে। তাই আপনি যে কাজটাকে ভালোবাসেন, তাকে অবজ্ঞা করবেন না।

অবজ্ঞা করতে হলে তো সেই কারখানা বা কম্পানিটিকে করবেন যে আপনার জীবনকে জটিলতার মুখে বা চ্যালেঞ্জের মুখে ছুঁড়ে দিয়েছে। তবে জীবনের এই জটিল পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নেবেন।

Don’t love your company, love your job

ডঃ এ পি জে আব্দুল কালাম

২। দক্ষতা অর্জন করুন

ডিগ্রী নেই বলে কি চিন্তায় আছেন? এই বয়সে ডিগ্রী অর্জন খুবই চাপের, এইসবই কি ভাবছেন? না, এইসব নিয়ে চিন্তা করার কোন কারন নেই।

যে কাজটা আপনার ভালো লাগে, সেই কাজে দক্ষতা অর্জন করুন। সেই কাজে আপনি যেন সেরা হন, সেইদিকে বিশেষ নজর দিন। এই ধরনের কাজ করে যারা জীবিকা নির্বাহ করে তাদের জীবন কাহিনী পড়ুন বা শুনুন। তাদের মতো বা তাদের চেয়েও দক্ষ হওয়ার চেস্টা করুন।

কম্পিটিশেন এর যুগ। সব কাজেই কম্পিটিটর রয়েছে প্রচুর। তাই নার্ভাস ফিল না করে বরং কাজে নিপুন হন। আপনি আমি যে কেউ মিষ্টির দোকানে গেলে, মিষ্টিগুলো খেতে কেমন লাগছে তার দিকেই নজর দিই। মিষ্টিগুলো ভালো লাগলে সেই দোকানে আবার যায়।

একইরকম ভাবে যে কোন কোম্পানি বা কারখানা সবার আগে কাজের দক্ষতা দেখে। আপনি যদি আপনার কাজে সেরা হওয়ার চেষ্টায় মেতে থাকেন, খুব শিঘ্রই আপনার হাতে চাকুরি আসতে চলেছে।

৩। যুগের সাথে নিজেকে আপডেট করে রাখুন

বর্তমান যুগ কম্পিউটারের যুগ। সময়ের সাথে সাথে যুগও এগিয়ে চলেছে। আর আপনি যদি আগের যুগের টেকনিক ধরেই বসে থাকেন, তাহলে বর্তমান যুগ আপনাকে গ্রহন করবেই বা কেন?

আপনি যখন কোন জামা কাপড়ের দোকানে যান, আপনিও তো জিগ্যেস করেন –“নতুন ডিজাইনের কোন জামাকাপড় আসে নি?” আপনি নিজে যখন নতুন ডিজাইন চান, যুগ কেন চাইবে না?

তাই কম্পিউটার না জানলে, শীঘ্রই কম্পিউটার শিখে ফেলুন। যদি কম্পিউটার শেখাতে আর্থিক অসুবিধে থেকে থাকে, তাহলে আপনার স্মার্ট ফোনটাকে কাজে লাগান।

ফোন থেকেই একটা জি-মেল একাউন্ট খুলুন, মেল করতে শিখুন। আর এইসব কিছু যদি আপনার জানা আছে তাহলে আরো এডভান্সড হওয়ার চেষ্টা করুন।

৪। অনলাইন কাজ খুঁজুন- বেকারত্ব সমস্যা ঘোচান

বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে দোকানদার থেকে শুরু করে টিচার, ডাক্তার এরাও অনলাইন কাজ করছেন। তাই আজই আপনি আপনার মোবাইল এ গুগল এ সার্চ করে দেখুন আপনার পছন্দের কাজ দিয়ে কি করে অনলাইন কাজ করা যায়।

আপনি কি ট্র্যাভেল কোম্পানি তে কাজ করেন? তাহলে আপনি ট্র্যাভেল ব্লগ খুলুন। এই ফিল্ডে কাজ করে আপনার নিশ্চয় অনেক জায়গা সম্পর্কে খুব ভালো জ্ঞান আছে। সেই জ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে ব্লগ লিখুন কিংবা ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করুন। খুব সুন্দর সুন্দর সিনারি এর ছবি দিয়ে জায়গা টা সম্পর্কে ডিটেলস এ বলুন।

আপনি কি হোটেলে কাজ করতেন? হোটেল বন্ধ হওয়াতে আপনারও ইনকাম বন্ধ? বেশ তো, হোটেলে যখন কাজ করতেন তখন নিশ্চয় রান্না বান্না সম্পর্কে আপনার ভালোই জ্ঞান আছে। এই জ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে আপনি ব্লগ লিখতে পারেন কিংবা ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করতে পারেন।

তারই সাথে পাশাপাশি লোকজন কে বলে রাখতে পারেন যে আপনি কারো বাড়ীতে খাবার বানানো তে অসুবিধে থাকলে আপনি আপনার বাড়ীতে রান্না করে খাবার পৌঁছে দেবেন।

আপনি যে কাজ টা করতে ভালোবাসেন, সেই কাজের জ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে কি করে অনলাইন কাজ করা যায় তাই ভাবুন বা মোবাইল থেকে গুগুলে সার্চ করে দেখুন।

৫। বসে থেকে সময় নষ্ট করে বেকারত্ব কে প্রশ্রয় দেবেন না

অনলাইন কাজে অনেকটাই সময় লাগে টাকা রোজগার করতে এই ভেবে নিরাশ হবেন না। অনলাইন কাজে তো আপনার কোন খরচও নেই, তাহলে চালিয়ে যেতে অসুবিধে কি? দিনের কিছুটা সময় অনলাইন কাজের জন্য দিন।

You only fail, when you stop working.

Albert Einstein

বাকি সময়ে আরো অন্য কাজ করার চেষ্টা করুন। সময়ের অপব্যবহার করবেন না। আপনি সময় কে গুরুত্ব না দিলে সময়ও আপনাকে গুরুত্ব দেবে না।

সময়ের অপব্যবহার করে বেকারত্ব কে আওহ্বান করবেন না
অলসতা

৬। কোন কাজকেই ছোট করে দেখবেন না- বেকারত্ব যে কোন কাজের চেয়ে আরও ছোট

সব কাজই মহান। যে কাজ আপনাকে বেকারত্বের মতো কঠিন রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে, সেই কাজ কখনো ছোট হতে পারে না। শুধু খেয়াল রাখবেন অসৎ উপায়ে কিংবা কাউকে আঘাত দিয়ে টাকা রোজগার করবেন না। অসৎ উপায়ে রোজগার করা টাকা শীঘ্রই আবার বেকারত্বের রোগ ডেকে নিয়ে আসবে।

আবর্জনা পরিষ্কার, চা বানানো, ইলেক্ট্রনিক্স জিনিস রিপেয়ারিং, মুবাইল রিচারজ করা, ইত্যাদি –এইসব কাজই কিন্তু সমান গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি অনলাইন কোন কাজ খুঁজে না পাচ্ছেন, ব্লগ লিখে টাকা কামানো আপনার মুশকিল লাগছে, তাহলে আপনি অনলাইন টাইপের কাজ করতে পারেন, আমাজনে এফিলিয়েট লিঙ্কিং, মোবাইল রিচারজ , ইত্যাদি কাজও করতে পারেন।

৭। আত্মবিশ্বাস রাখুন- বেকারত্ব দূর করতে আপনিই পারবেন

যে কোন রোগেরেই একটা বড় ওষুধ হল বিশ্বাস। আপনি যদি ভাবেন যে আপনি কয়েক দিনের মধ্যেই বেকারত্বের রোগ থেকে মুক্তি পাবেন, তাহলে নিশ্চয় পাবেন। এমন জোরালো বিশ্বাস আপনাকে রাখতে হবে যা আপনার মধ্যে নতুন নতুন ভাবনার সঞ্চার করবে।

এই নতুন নতুন ভাবনাগুলো আপনাকে টাকা রোজগারের নানান পথ দেখিয়ে দেবে। এই ভাবনাগুলো যতদিন না অবধি কোন এক্সেন এ রুপান্তরিত হচ্ছে, ততদিন অবধি আপনাকে ঘুমোতে দেবে না। ভাবনাগুলোর ধার এমনই হওয়া উচিৎ।

৮। সময় থাকলে সাইডে আরো কিছু কাজ করুন আর বেকারত্ব দূর করুন

গ্রামে গঞ্জে এমন অনেক মানুষ আছে যারা চাষবাস থেকে জীবিকা নির্বাহ করে। চাষবাস বছরের প্রতিটি মাসের প্রতিটি দিনের কাজ নয়। তাই তারা চাইলে সাইডে আরো কিছু কাজ করতেই পারেন যাতে করে যে বছরে চাষ ভালো হবে না, সেই বছরে এই দ্বিতীয় জীবিকা টি যেন জীবনের পাশে দাঁড়ায়।

বেকারত্ব একটি রোগ। ৩৬ কোটি বেকার মানুষের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষের ইচ্ছাশক্তির অভাব। অনেকেই আছে, যারা পরিশ্রম করতেই চায় না, এক পা এগোবার আগেই দুই পা পিছিয়ে যায়। এই ১৩৫ কোটি মানুষের মধ্যে ৯৯ কোটি মানুষ কর্মরত। আপনি কি পারেন না ওই ৯৯ কোটি মানুষের শ্রেণীতে ঢুকতে?  

বেকারত্ব দেশের ও একটি সমস্যা। দেশেরও দায়িত্ব সেই পরিমানে কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করা যাতে একজনকেও কাজের জন্য দেশের বাইরে যেতে না হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দেশ রাতারাতি এই রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারছে না।

সেই কারনে কাজের জন্য যদি নিজের বাসস্থান ছাড়তে হয়, তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। আপনি যদি কাজে দক্ষ হয়ে থাকেন, আমাদের দেশ আপনাকে কাজ না দিতে পারলেও, অন্য দেশে কাজ আপনি অবশ্যই পাবেন।

সময় কে ব্যবহার করে সাইডে আরও কাজ করুন আর বেকারত্ব ঘোচান
কর্মের খোঁজে

তাই দেশের রোগ এর জন্য একে অকে দায়ী করে অযথা সময় নষ্ট না করে ওই ৮ টি স্টেপ্স ফলো করে জীবনে এগিয়ে চলুন। জীবনের আগত দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে বর্তমানে কাজের মধ্যে মনোনিবেশ করে সামনে এগিয়ে চলুন আর পৃথিবীকে বেকারত্ব সমস্যা থেকে দূরে রাখুন।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, সবাইকে ভালো রাখুন। চলুন, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে!  

13 thoughts on “বেকারত্ব দূর করার ৮ টি সহজ উপায়

  1. একটা লোকের বেতন 50,000 টাকা না দিয়ে দুই লোকের বেতন 50 000হতে পারে তাহলে কেউ না খেয়ে আবার কেউ বিলাস বহুল খরচ করা বন্ধ হতো

  2. খুবই সাজিয়ে গুছিয়ে লিখেছেন। আপনার চিন্তাশক্তি অনেক সুন্দর। এরকম লেখা আরো চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট