ভদ্রতা মানে দুর্বলতা নয়,বরং প্রকৃত শিক্ষার পরিচয়

ভদ্রতা -শিক্ষার মাপকাঠি

ডিগ্রি নয়, ভদ্রতা দিয়ে শিক্ষা মাপা যায়। ভদ্রতা যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ” Politeness”। এই ভদ্রতা দিয়ে ব্যক্তির চরিত্র বোঝা যায়।

যুগ বদলেছে। প্রযুক্তিবিদ্যা উন্নত হয়েছে। টাকার ভ্যালু কমেছে। মানুষের হাত টাকাতে ভরেছে। টাকার সাথে সাথে মানুষের মনে রাগ, ক্রোধ, মানসিক অবসাদ, রেষারেষি ভাব বাসা বেঁধেছে।

অভদ্রতার নমুনা

প্রাচীনকালে এক একটা বাড়ীতে ১৫-২০ জন লোক থাকতো। এর মধ্যে ১০-১২ টা বাচ্ছাই থাকতো। সবাই মিলেমিশে এক ভরা সংসারে ডুবে থাকতো।

মেয়েরা সংসার সামলাতো। পুরুষেরা বাইরের কাজ করার দায়িত্ব নিত। এর ফলে স্ত্রী, পুরুষ দুজনেই তাদের কাজ মন দিয়ে সামলাতে পারতো।

এখন স্ত্রী আর পুরুষ দুজনকেই ঘরের আর বাইরের কাজ একইসাথে সামলাতে হয়। এর ফলে কোন কাজই সন্তুষ্টি আসে না। সবসময় একটা অসন্তোষের মধ্যে কাটাতে হয়।

ভাইয়ে ভাইয়ে গালিগালাজ, কটুকথা, ঝগড়া বেড়েছে। সম্পত্তি এর এক ইঞ্চি এদিক ওদিক হলে ঝগড়া মারামারিতে পরিণত হয়েছে।

আপনি কি এইসব বলতে থাকেন-“ আপনার বাবার কি?” কিংবা “ যেমন বাপ, তেমনি বেটা”। অথবা “এমন বাপের এর চেয়ে ভালো সন্তান কি করে হবে?”

ধরুন আপনি একটা হোটেলে গেছেন। সেখানে লোকটার খাবার পরিবেশন করতে একটু লেট হচ্ছে। তাহলে কি আপনি রেগে যাবেন? হোটেলের মালিককে ঐ লোকটির নিয়ে অভিযোগ করবেন? এইরকম অনেক উদাহরণই কিন্তু দেখতে পাওয়া যায়।

কেউ কেউ বলে থাকেন- “কিরে দিবি কিনা বল”। যে লোকটি খাবার দিচ্ছে সে বাবার বয়সী। আর যে লোকটি উত্তেজিত হয়ে গেছে সেই লোকটির বয়স সবে ২৫ কি ২৬ হবে।

বড়দেরকে আপনি দিয়ে না বললেও অন্ততপক্ষে তুমি দিয়ে সম্বোধন করা উচিৎ। এই খেয়ালটা কেন তাদের থাকে না?

একটি বাড়ীতে খুব মিষ্টি একটি আম গাছ আছে। সেই আমের মিষ্টত্বের কথা গোটা এলাকা জানে। কিছু ছোট ছোট বাচ্চা আম পাড়ছে দেখে এক বয়স্ক মহিলা লাঠি হাতে বেরিয়ে আসেন।

মহিলাটি বলতে থাকেন –“কোন পশুর বাচ্চা, চোরগুলো আম পাড়তে এসেছে, দেখাচ্ছি মজা!”

মহিলাটি যদি অন্যভাবে বলতেন –“ এই বাচ্চারা শোন তো, আমার তো এই আমগুলোই সহায়। তোদের খেতে মন চাইলে আমার কাছে থেকে চেয়ে নিস। এইভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে পাড়াটা কি শোভা পায়। তোমাদের বাবা মা জানতে পারলে কতো কষ্ট পাবে বলতো। আর এইরকমটি করো না।“ 

এইভাবে বললে বাচ্চাগুলো বুঝতও আর হয়তো লুকিয়ে লুকিয়ে আম পাড়তো না।

ভদ্রতা কি  

ভদ্রতা হল ভালো ব্যবহার, রাগকে সংযত করে ভালো কথার মাধ্যমে উত্তর দেওয়া। অশ্লীল কথা দিয়ে কাউকে আঘাত না করায় হল ভদ্রতা।

অশ্লীল কথা ব্যবহার করে, অন্যকে অসম্মান করে কখনোই বড় হওয়া যায় না। প্রকৃতি তার উত্তর কোন না কোনভাবে তাকে দিয়েই দেয়।

অভদ্রতা কি আঘাত দেয়?

মনের আঘাত কখনো কখনো শরীরের চেয়েও বড় আঘাত হয় যা চোখে দেখা যায় না। শরীরেকে আঘাত করলে আপনারা তো সাথে সাথে ডাক্তারবাবুর কাছে যান, ওষুধ খান কিংবা মলম লাগান।

মনের ব্যাপারে আপনি কি সেই একইরকমভাবে সচেতন? মনে কেউ আঘাত দিলে, আপনারা কি ডাক্তারবাবুর কাছে যান?

অভদ্র ব্যবহার আমাদের মনে নিঃশব্দে আঁচড় কেটে যায়। কিন্তু আপনারা কি সেই মনের ব্যাথা নিরাময়ের ওষুধ খোঁজেন?

কেউ কেউ আছেন যারা অভদ্র ব্যবহারের উত্তর অভদ্র ব্যবহার বলেই মানেন। এতে এই রেষারেষির খেলা কখনোই থামে না।

এর ফলে মন বারে বারে ক্ষত বিক্ষত হতে থাকে।

মনকষ্ট
মনে আঘাত

ভদ্রতা মানে দুর্বলতা নয়

ভদ্র ব্যবহার করলে ব্যবহারকারী ছোট হয়ে যায় না। ভদ্র ব্যবহার দিয়ে জটিল জিনিষ সহজেই আদায় করা যায়। কিছু শব্দ ব্যবহার করলেই অন্যকে খুব সহজেই প্রসন্ন করা যায়।

ভদ্রতা- আসল চরিত্র
ভদ্রতা মানে দুর্বলতা নয়

আর এই শব্দগুলো হল- প্লিজ, সরি, ইত্যাদি। এই শব্দগুলোর মধ্যে কিছু তো ম্যাজিক আছে।

মানুষ মাত্রই ভুল করে। ভুল করা কোন অপরাধ নয় যদি সেই ভুল অন্যের ক্ষতি না করে। ভুলের পুনরাবৃত্তি হলে ভুল করার পাপ ক্ষমা হয় না।

আপনি কি প্রথমবার ভুল করেছেন? তাহলে যার কাছে ভুল করেছেন তাকে একবার ‘Sorry’ বলে দেখুন। অন্যজন সহজেই আপনার ওপর প্রসন্ন হয়ে যাবে।

আপনি যদি ছোট বড় সবার সাথে ভালো ব্যবহার করেন, আপনার পরিবারে যে ছোট ছোট বাচ্চারা আছে তারাও কিন্তু আপনাকে দেখে ভদ্রতা শিখবে।

আপনি যদি সবার সাথে অশ্লীল আচরন করেন, বাড়ীর বাচ্চারাও বড় হয়ে তাই করবে। ওরা তো আপনারই প্রতিরূপ হবে।

আপনার মুখ থেকে বেরোনো শব্দ দিয়েই বোঝা যাবে আপনার মনে কি ধরনের চিন্তা চলছে।

শব্দগুলো বলার ওয়ে, বলার সময় আপনার মুখের ভঙ্গি, আপনার অস্থিরতা – এইসব কিছু তো বলে দেবে আপনার মনে কি চলছে।

আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন আসছে যে যদি কেউ আপনাকে আঘাত করে, আপনি কি সেই আঘাত নীরবে সহ্য করে যাবেন? না, নীরবে সহ্য করবেন না।

মিষ্টি কথায় বোঝাবেন তাকে। এইভাবে আমরা সবাই যদি একে একে পরিবর্তিত হয়, তাহলেই তো সমাজ বদলাবে। সমাজ বদলালে দেশ বদলাবে।

নীচের এই কয়েকটি উপায়ে আপনি সহজেই অন্যের সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারবেনঃ

১। নিজের রাগ সংযত করুন

সাধারনত কেউ কেউ রেগে গেলেই দুটো গালিগালাজ করে ফেলেন। তারা ভাবেন যে এই সব বাজে কথা দিয়ে তারা তাদের রাগের মতো নেগেটিভ শক্তিকে বার করে ফেলেছেন। কিন্তু আসলে তা নয়।

কটূ কথা ব্যবহার করে রাগ কমে না। সাময়িক হয়তো রাগের তেজটা একটু কমে। কিন্তু সেই রাগ একেবারে নির্মূল হয় না। আগে নিজের রাগকে অন্য কোনভাবে কমান। ভদ্রতা দিয়ে কি করে অন্যকে বাজে কাজ থেকে আটকানো যায়, সেই ব্যাপারে ভাবুন।

খুব রেগে গেলে কাউকে উত্তর দেবেন না। অন্যজন কেন এমনভাবে বলল তা নিয়ে ভাববেন না। আপনি নিজেকে বদলানোর দায়িত্ব নিন। আর এই ভালো ব্যবহারের পুরস্কারস্বরূপ আপনি দেখবেন যে অন্যজনও বদলে গেছে।

কিভাবে রাগ কমাবেন তা জানতে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন-

https://bengalimotivation.com/%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%97-%e0%a6%95%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%8b%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%b9%e0%a6%9c-%e0%a6%89%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a7%9f/
রাগ কমানোর উপায়

২। অন্যকে সম্মান দিন

অন্যকে কিছু বাজে কথা বলার আগে নিজেকে ঐ জায়গায় বসিয়ে দেখবেন। ঐ কথাগুলো আপনাকে যদি কেও বলতো আপনারও খারাপ লাগতো। ছোট বড় প্রত্যেককে সম্মান দিন। অন্যদের সম্মান দিলে আপনারও সম্মান বাড়বে।

৩। আপনার ব্যবহারই আপনার পরিচয়

আপনার ব্যবহারই কিন্তু আসল পরিচয়।

অনেক গার্হস্থ্য বাড়ীতে শাশুড়ি আর বউমার মধ্যে খুনসুটি লেগেই থাকে।

এখনকার বউমারা প্রায়ই উচ্চবাচ্চ্য করে থাকে। সহনশীলতা তাদের খুবই কম। আবার শাশুড়ীমারাও তাদের জেদে অটল।

আপনিই কিন্তু পারেন বাড়ীর এই পরিবেশকে সুন্দর করে তুলতে। আপনি কি মনে মনে কষ্ট পাচ্ছেন? আপনার শাশুড়ীমা কি কথায় কথায় আপনার বাবা মা কে নিয়ে কথা শোনায়? এমনও কি বলেন যে আপনার বাবা মা আপনাকে কিছুই শেখায় নি?

এর প্রতিক্রিয়া স্বরুপ আপনিও কি তাই করেন? মানে আপনার হাজবেন্ডকে কি ঐ একই কথা শোনান? আর এখানেই আপনি ভুল করেন। রাগের উত্তর রাগ নয়। মিষ্টি কথার ধার আরও বেশী।

যেমন ধরুন আপনি তার উত্তরে যদি বলেন- “মা, আপনিও তো আমারই মা। তাহলে কি আপনি আমাকে শেখাতে পারছেন না?” দেখবেন ধীরে ধীরে প্রসঙ্গ কেমন বদলে গেছে। আপনার শাশুড়ীমা এর মন ও কেমন বদলে গেছে।  

৪। আপনার চারিপাশে বাচ্চাদের কথা ভাবুন

এখনকার বাচ্চারাইতো আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ওদের ভবিষ্যৎকে দূষিত করার অধিকার আপনার নেই।

তাই কিছু বাজে কথা বলার আগে আপনার কাছে থাকা বাচ্চাগুলোর কথা ভাবুন।

৫। ম্যাজিক ওয়ার্ড ব্যবহার করা অভ্যেস করুন

জানেন তো ভালো খাবার খেতে কখনো ভালো হয় না। আবার অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে খুব টেস্টি হয়।

ঠিক সেইরকম প্রথম প্রথম ম্যাজিক ওয়ার্ড ব্যবহার করতে আপনার অসুবিধেই হবে। কিন্তু এই ম্যাজিক ওয়ার্ডগুলো পরিবারের পক্ষে, সমাজের পক্ষে মঙ্গলজনক। তাই অভ্যেস করুন এই ম্যাজিক ওয়ার্ডগুলো ব্যবহার করা।

কটূ কথা বলার সময়ে আমাদের বেশী শক্তিক্ষয় হয়। ভদ্র ব্যবহারে পরিশ্রম কম হয়। এতে দুই পক্ষেরেই মন ভালো হয়ে যায়। রেজাল্টও ভালো হয়। তাই আজ এই মুহূর্ত থেকে অশ্লীল কথা বর্জন করুন, অন্যদের সম্মান দিন।

দেখবেন আপনার সাথেও সবাই ভালো ব্যবহার করছে, সম্মান দিচ্ছে। আপনি যা দেবেন তাই ফেরত পাবেন। তাই চিন্তা না করে আজ থেকেই ভদ্র ব্যবহার করা অভ্যেস করুন।

সুস্থ থাকুন। ভালো থাকুন। সবাইকে ভালো রাখুন। চলুন, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে!  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট