আধুনিক যুগে বেশীরভাগ মানুষেই এই সমস্যাই ভোগেন। অনেকে রাত্রে বিছানায় শোয়া মাত্র গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়। তারা জানেন না নিদ্রাহীনতা দূর করার জন্য কিছু মানুষকে কতো কিছুই না করতে হয়। ভালো ঘুমের জন্য কতজনকে ওষুধ খেতে হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত জানতে পড়তে থাকুন শেষ অবধি। আর তারপরে নিদ্রাহীনতা দূর করার উপায় গুলো ফলো করে নিজেকে রাখনু টেনশন ফ্রি।
রাতে ঘুম আসে না কেন, এই ঘুম না আসার কারন গুলো কি আর তা দূর করার উপায় গুলো কি জানতে হলে পুরো লিখাটি শেষ অবধি পড়ুন।
বেশীরভাগ ক্ষেত্রে বয়স্ক মানুষেরা এই সমস্যায় ভোগেন। নানান রকম চিন্তা তাদের গ্রাস করে। দুশ্চিন্তা কি কম? দুশ্চিন্তা এমন জিনিষ, আপনি তাকে যত বেশী স্মরন করবেন, সেও আপনার কাছে তত বেশী এগিয়ে আসবে।
মশার কামড় খেয়েছেন কখনো? দেখবেন- আপনি যত চুলকবেন, তত বেশী চুলকাবে। আপনি যদি কিছুক্ষণ মন স্থির করেন যে যতই চুলকাক না কেন আপনি কিছুতেই চুলকাবেন না, দেখবেন কিছু সময় পরে সব চুলকানি বন্ধ হয়ে গেছে।
সমস্ত নেগেটিভ জিনিষগুলোই তাই। একদিক দিয়ে তারা খুবই ভালো। ভালো এই কারনে আপনি তাদের আদর আপ্যায়ন না করলে তারা আপনার কাছে থাকবে না। আর আদর আপ্যায়ন দিলে তারা মাথায় চড়ে বসবে। ধীরে ধীরে আপনার সমগ্র শরীরের ওপর দখল নেবে।
তাই দুশ্চিন্তার মতো নেগেটিভ জিনিষকে দূরে সরিয়ে পড়তে থাকুন ভালো ঘুম হওয়ার উপায়গুলো। ওই উপায় গুলো ফলো করলে ঘুমের সমস্যা ক্রমশ যাবে দূরে সরে। দেখে নিন ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত আর কি এর প্রয়োজনীয়তা।
ভালো ঘুমের প্রয়োজনীয়তা
ভালো ঘুম আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিসে কিসে সাহায্য করে দেখে নেওয়া যাক এক নজরেঃ
- আমাদের শরীরের হরমোন বেলেন্সিং এ সাহায্য করে। হরমোনগুলোর মধ্যে ব্যালেন্স না থাকলে শরীর ও মনে নানান রকমের ব্যাধির উপসর্গ দেখা যায়।
- আমাদের প্রতিটি দিন কে এক নতুন উদ্দীপনায় সামনের দিকে এগোতে সাহায্য করে।
- আমাদের শরীর ও মন কে সতেজ করে তুলে।
- রাগ, হিংসা – এইসব থেকে দূরে রাখে।
- শক্তি বাড়িয়ে দেয়।
- ধীরতা, ধৈর্য বাড়িয়ে তোলে।
- পরিশ্রম করতে সাহায্য করে।
ভালো ঘুমের প্রয়োজন-কোন বয়সে কতটা?
দেখে নেওয়া যাক কোন বয়সে কতটা ঘুমের প্রয়োজন। বেশী ঘুমও কিন্তু আমাদের শরীর ও মনকে বাজে ভাবে প্রভাবিত করে। “ National Sleep Foundation” এর তথ্য অনুযায়ী বয়ঃসন্ধির সময়ে অনেকের ১০-১১ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। এই সংস্থা অনুযায়ী কোন বয়সে কতখানি ঘুমের দরকার তা নিচে টেবিলের ফরম্যাটে দেওয়া হল-
বয়স | মিনিমাম ঘুমের সময় | মাক্সিমাম ঘুমের সময় |
০-৩ মাস | ১২-১৪ | ১৭-১৮ |
৪-১১ মাস | ১২-১৪ | ১৫-১৭ |
১-২ বছর | ১১-১২ | ১২-১৪ |
৩-৫ বছর | ১০-১১ | ১২-১৩ |
৬-১৩ | ৯-১০ | ১০-১১ |
১৪-১৭ | ৮-৯ ঘণ্টা | ৯-১০ ঘণ্টা |
১৮-২৫ | ৭-৮ ঘণ্টা | ৮-১০ ঘণ্টা |
২৬-৬৪ | ৬-৭ ঘণ্টা | ৭-৯ ঘণ্টা |
৬৫ বা তার বেশী | ৫ ঘণ্টা রাতে, ১-২ ঘণ্টা দিনে | ৭-৮ ঘণ্টা |
ডিটেল পড়ার জন্য আপনি নিচের এই লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন।
https://www.sleepfoundation.org/press-release/national-sleep-foundation-recommends-new-sleep-times
ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত/ নিদ্রাহীনতা দূর করার উপায় গুলো কি কি?
প্রাচীনকালে এই সমস্যা খুব একটা বেশী ছিল না কারন তখন মানুষ প্রকৃতির সাথে জুড়ে ছিল। এখন এই আধুনিক সময়ে আমরা প্রকৃতি থেকে ক্রমশই দূরে সরে গেছি। তাই ভালো ঘুমের জন্য নীচের উপায়গুলো ফলো করুন।
১। দিনের বেলা আলোর মধ্যে থাকুন

মান্ধাতার আমলে ছিল না কোন ঘড়ি। সূর্যই ঘড়ি হিসেবে কাজ করতো। সূর্যালোক মানেই কাজের সময় আর অন্ধকার মানেই রেস্ট বা ঘুমোবার সময়। এই তো চলে আসছিলো।
বদলে গেল রুটিন। ঘরে ঢুকল জমকালো লাইট। ঢুকতে দিই না সূর্যালোক কে। স্বাগত জানাই কৃত্রিম আলো কে। সাথে বিদায় জানান হয় প্রাকৃতিক হাওয়াকেও। আর স্বাগত জানাই এয়ার কন্ডিসেনার কে।
তাইতো শরীরের মধ্যে যে একটা প্রাকৃতিক ছন্দ চলত নষ্ট হয়ে গেল সেই ছন্দ। এই প্রাকৃতিক ছন্দই তো হরমোন সাইকেল কে নিয়ন্ত্রন করে সঠিক সময়ে দুই চোখের পাতা খুলে দিত আর বন্ধও করে দিত।
যদি ভালো করে ঘুমোতে চান, বিছানায় শুতে শুতেই তীব্র নিদ্রার মধুর গ্রাস এর স্বাদ পেতে চান, তাহলে প্রাকৃতিক ছন্দে ফিরে আসুন। দিনের বেলা, সূর্যের আলো গায়ে মাখুন। এতে শরীরের মধ্যে যে সারকাডিয়ান ছন্দ সাস্থ্যকর হয়ে ওঠে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে দিনের বেলা আপনি যদি ২ ঘণ্টা সূর্যালোকে থাকতে পারেন তাহলে তা আপনার ঘুমের পরিমান ২ ঘণ্টা বাড়িয়ে দেবে। এফিসিএন্সি ৮০% বাড়িয়ে দেবে এবং বিছানায় যাওয়া মাত্র ঘুম আসার টেন্ডেন্সি ৮৩% বাড়িয়ে দেবে।
সামারি
প্রত্যহ সূর্যালোকে কিংবা কৃত্রিম তীব্র আলোতে আপনার স্থিতি আপনার ঘুমের সমস্যা দূর করে দিতে সক্ষম।
২। সন্ধ্যে থেকে ব্লু লাইটের তীব্রতা কমান- ভালো ঘুম নিশ্চিত
কখনো সূর্যাস্ত দেখেছেন? বিকেলবেলা খোলা আকাশের নীচে পায়চারী করতে করতে দেখবেন কেমন ভাবে দিনের আলোর রঙ ও তীব্রতা গোধূলির সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক ছন্দে ফিরতে গেলে, আপনি ইট বালি সিমেন্টের চার দেওয়ালে বন্দি থাকলেও, ওই বন্দি ঘরের মধ্যেই এই প্রাকৃতিক ছন্দ ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা আপনাকেই করতে হবে।
যতই রাত্রি ঘনিয়ে আসবে, আপনি লাইটের তীব্রতা কমাবেন। রাত ৯-৯.৩০টার পর ডিম লাইটে থাকা অভ্যেস করুন।
ব্লু লাইটের ফোকাস কমানোর অনেক পদ্ধতি আছে-
আপনি গ্লাস পরতে পারেন যা ব্লু লাইটকে কন্ট্রোল করে।
অনেক এপ্স ও আছে যা আপনার কম্পিউটারে বা ল্যাপটপে ব্লু লাইটকে আসতে দেয় না।
এন্ড্রয়েড ফোনেও এই ধরনের অনেক এপ্স আছে।
ঘুমোবার ২ ঘন্টা আগেই টিভি দেখা বন্ধ করুন।
তীব্র ব্লু লাইটের মধ্যে আপনি যদি থাকেন, আপনার ব্রেন ভাবতে থাকে যে এখনো দিন যা ঘুমের সময় নয়। আর এই অনুযায়ী ব্রেন সেই সিগন্যাল পাঠায়।
সামারি
রাতের বেলা বিশেষ করে ঘুমোবার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই ব্লু লাইটের এক্সপোজার কমান।
৩। দিনের শেষের দিকে কেফাইন খাওয়া বন্ধ করুন
ভারতে অনেক মানুষেই কেফাইন এর সাথে অভ্যস্ত এবং তা তাদের ডেলি খাবারের তালিকায় থাকে। অনেকে আবার রাত্রেবেলাও চা, কফি খেয়ে থাকেন।
এই কেফাইন জাতীয় পানীয় আমাদের নার্ভগুলোকে উত্তেজিত করে তোলে। এই কেফাইনের প্রভাব ৬-৮ ঘণ্টা অবধি আমাদের শরীরে থাকে। যদি আপনার ইনসমনিয়ার মতো ব্যধি থেকে থাকে, আর কেফাইনের প্রতি আসক্তিও থাকে তাহলে আপনি বিকেলে ৪ টের আগেই সেসব খেয়ে নিন।
৪টের পর কেফাইন জাতীয় কোন পানীয় গ্রহন করবেন না।
সামারি
বিকেলের পর থেকে কেফাইন জাতীয় পানীয় বর্জন করুন।
৪। দিনের বেলা ন্যাপ নেওয়ার সময় ফিক্সড করুন এবং কম ডিউরেশেন এর ন্যাপ নিন দুপুরে
এখানে একটা গল্পের কথা বলা যাক। একটি লোকের বাড়ীতে প্রত্যহ একটা ঘন্টা বাজিয়ে খাবার দেওয়া হত তার বাড়ীর পোষা কুকুরটিকে। ঘণ্টা বাজলেই কুকুরটি খাবার জায়গায় পৌঁছে যেত। আর দেখত খাবারের থালা। এইভাবেই তার খাওয়া টা শুরু হত।
ঘন্টাটা প্রত্যেকদিন একই সময়ে বাজত। কয়েক মাস পরে দেখা গেল যে ওই কুকুরটি ঘন্টা বাজলেই খিদে পাচ্ছে। একদিন ঘণ্টা বেজেছে, কিন্তু খাবার ছিল না। তাতে দেখা গেছল যে কুকুরটির মুখ থেকে লালা ক্ষরণ হচ্ছে।
আরও একদিন দেখা গেল যে ঘন্টাই বাজলো না, কিন্তু কুকুরটির এতোই খিদে পেয়েছে যে ঠিক ওই ঘণ্টা বাজানর সময়ে সে হাজির খাবারের টেবিলের সামনে।
এই থেকে বোঝা যে- যে কোন কাজেই রুটিন খুব প্রভাব ফেলে থাকে।
অনেকে আছেন যারা সকালে চা খাওয়ার পরই প্রাতঃক্রিয়া সারতে বাথরুমে ছোটেন। অভ্যাস। এই অভ্যাসেই পারে সব সমস্যার সমাধান করতে।
তাই দিনের বেলা যদি একান্তই ঘুমোতে চান, তাহলে তার সময় ফিক্সড করুন। দীর্ঘ সময় ধরে দিনের বেলা ঘুমবেন না। মাত্র ৩০ মিনিট ঘুম যথেষ্ট সবার জন্য, শুধুমাত্র শিশু আর বয়স্করা বাদ দিয়ে। বয়স্করা ১-২ ঘণ্টা ঘুমোতে পারেন। কিন্তু লক্ষ্য রাখবেন সময়সীমা যেন ফিক্সড হয়।
সামারি
দিনের বেলা যদি ঘুমোতেই চান, নির্দিষ্ট সময়ে স্বল্প সময়ের জন্য ঘুমোন।
৫। ঘুমোবার সময় বা জেগে ওঠার সময় ফিক্সড করুন
শুধু দুপুরে ঘুমোবার সময়টাই নয়, রাত্রে ঘুমোবার সময়টাও ফিক্সড করুন। তাহলে দেখবেন সকালে আপনি উঠতেও পারছেন।
অনেকে বলে থাকেন যে সকালে কিছুতেই ঘুম থেকে উঠতে পারেন না। যারা এইরকম সকালে উঠতে পারেন না, লক্ষ্য করে দেখবেন তাদের রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার সময় ফিক্সড নয়, কোনোদিন হয়তো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছেন কিন্তু তার পরের দিনই আবার খুব রাত্রিতে শুয়েছেন।
আপনি ঘুমোবার সময়টার ওপর ধ্যান দিন। প্রথম কিছুদিন প্রয়োজনে এলারম দিয়ে উঠতে পারেন। বেশ কিছুদিন পরে আর এলারমের দরকার পড়বে না। ওটোমেটিকেলি, আপনি সকালে উঠতে পারবেন।
সামারি
প্রত্যহ ফিক্সড সময়ে ঘুমোতে যান।
৬। ব্যায়াম করুন

প্রত্যহ যদি নাও পারেন, অন্ততপক্ষে সপ্তাহে ৪-৫ দিন ব্যায়াম করুন। খুব ভারি বা কঠিন ব্যায়ামেরও দরকার নেই। দরকার হল- ৪ দিন যদি ঠিক করেছেন ব্যায়াম করবেন, তাহলে তাই করুন। তার নড়চড় যেন না হয়।
শুধু দেখবেন ব্যায়াম করার পর যেন আপনার ঘাম হয় কিংবা পরিশ্রম হলে যে অনুভূতি হয়, সেই অনুভূতি যেন হয়।
সামারি
নিয়মিত না হলেও সপ্তাহে ৩-৪ দিন কিছু ব্যায়াম করুন। আপনি ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজও করতে পারেন।
৭। ফুড হেবিট ঠিক করুন

আপনি যেমন শরীরকে দেবেন, শরীরও ঠিক তেমনি আপনাকে ফিরিয়ে দেবে। আপনি যদি ভালো খাবার খান, শরীর আপনাকে ভালো ঘুম দেবে, সতেজ রাখবে।
আপনি যদি জাঙ্ক ফুড খান, সেই মশলা বা ঝাঁঝ মধ্য রাত্রেও আপনার শরীরকে ঝাঁঝ দিতে থাকবে। ফলে আপনি জেগেই থাকবেন।
সামারি
সঠিক ফুড হেবিট বজায় রাখুন।
৮। পরিশ্রম করুন
“ক্লান্তি যদি নামে / শরীর চায় ঘুমোতে”

ক্লান্তি এলে তো শরীর অটোমেটিক রেস্ট করতেই পছন্দ করবে। সবারেই বিশ্রাম চাই। এমনকি মেশিনগুলোরেও, আর আপনার হাতের মুঠোয় থাকা মুবাইলটাও।
ঘড়ির ব্যাটারিও একদিন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেয়। ঠিক তেমনি আমরা যখন বিশ্রাম নিই, আমাদের শরীর চার্জড হয়।
আপনি যখন শারীরিক পরিশ্রম বেশ ভালো মতোই করবেন, তখন বিশ্রাম নেওয়া আপনার কাছে সহজ হয়ে যাবে মানে আপনি সহজেই ঘুমোতে পারবেন।
সামারি
দিনের বেলা প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম করুন। আপনি ইউনিভার্স কে পরিশ্রম দিন, ইউনিভার্স আপনাকে ঘুম দেবে।
৯। এলকোহল ও ধূমপান থেকে দূরে থাকুন
শুধুই কি ঘুম, আরও কতো কারনে এলকোহল থেকে দূরে থাকাটাই শ্রেয়। এলকোহল নানান ভাবে আমাদের শরীর ও মন কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সাময়িকভাবে আপনার নার্ভগুলোকে খুবই উত্তেজিত করে তোলে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পর, আপনার সমগ্র শক্তি কে আচমকাই কমিয়ে দেয়।
সামারি
সিগারেট খাওয়া ও এলকোহল পান বন্ধ করুন।
১০। ভালো ঘুমের জন্য রুমের পরিবেশ ঠিক রাখুন
আমি গ্রামের বাড়ীতে গেলে, ১০ টার মধ্যে রোজ ঘুমিয়ে পড়ি। আবার সকালে ৬টায় উঠেও যায়। না, কোন এলারমের দরকার পড়ে না। দরকার পড়ে পরিবেশ এর।
আপনার বাড়ীতে , বাড়ীর প্রত্যেকটি সদস্য কি রাত্রি ৯.৩০টায় ঘুমোতে যায়, প্রত্যেকে কি রাত্রি ৯ টার মধ্যে ডিনার সেরে ফেলে? রাত্রি ১০টার মধ্যে কি পুরো বাড়ীতে লাইট বন্ধ হয়?
জানি এইসব করা আপনার পক্ষে খুব মুশকিল। ছেলে তো প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। ফেরে তো রাত্রি ১০টায়, কোনদিন আবার রাত্রি ১১ টায়। সেক্ষেত্রে কি করে সম্ভব এই রুটিন ফলো করা?
এক কাজ করুন। পুরো বাড়ীতে যদি পরিবেশ বজায় রাখতে না পারেন, তাহলে আপনার নিজস্ব রুমের মধ্যে এই পরিবেশ বজায় রাখুন।
আপনার ঘুমের যে খুব সমস্যা , আপনি রাতের পর রাত ঘুমোতে পারেন না, তা বাড়ীর সদস্যদের জানান। আর বলুন আপনার জন্য একটা আলাদা রুমের ব্যবস্থা করতে। আর সেই রুমের মধ্যে আপনি রাত্রি ১০টার মধ্যে লাইট অফ করে দিন।
সামারি
পুরো বাড়ীতে যদি ঘুমের পরিবেশ তৈরি করতে না পারেন, তাহলে নিজের রুমে অন্ততপক্ষে ঘুমের পরিবেশ বজায় রাখুন।
১১। বিছানা ঠিক রাখুন ভালো ঘুমের জন্য

বিছানা পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন রাখুন। ১০-১২ দিন ছাড়া বিছানার চাদর বদলে ফেলুন। ঘুম হল এক শান্তি স্বরূপ। সারা পৃথিবী যখন ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে, তখন পৃথিবী কেমন শান্ত হয়ে যায়। মন্দিরগুলো শান্তিতে ভরে ওঠে।
শান্ত, স্নিগধতা যেখানে , শান্তি সেখানে। আর শান্তি তো সেখানেই বেশী থাকবে যেখানে পরিচ্ছন্নতা আছে। পরিষ্কার বিছানাতে ভাবনা চিন্তাগুলোও পরিষ্কার হয়।
সামারি
বিছানা পরিষ্কার রাখুন।
১২। বেডরুমের টেম্পারেচার মেনটেন করুন
আপনি যে রুমে ঘুমোন, সেই রুমের সঠিক উষ্ণটা বজায় রাখুন। যে উষ্ণটা তে আপনি আরাম অনুভব করেন, চেষ্টা করুন সেই উষ্ণটা বজায় রাখার।
সামারি
শোবার রুমে সঠিক উষ্ণটা বজায় রাখুন।
১৩। সন্ধ্যেবেলা ভুল করেও ঘুম দেবেন না এমন কি শোবেনও না
বিকেল ৩ টার পর আর ঘুমোবেন না। যদি আপনি দিনের বেলা ঘুমতেই চান, তাহলে দুপুর ১টা থেকে ৩ টার মধ্যেই ঘুমিয়ে নিন।
সন্ধ্যেবেলা ঘুমোলে আপনি রাত্রে কিছুতেই সহজে ঘুমোতে পারবেন না।
সামারি
বিকেল ৩ টার পর আর দিনের বেলা ঘুমোবেন না।
১৪। বিছানাতে যাওয়ার আগে হাত,পা,মুখ ধুয়ে যান
অনেকে আছেন যারা ঘুমোতে যাওয়ার আগে চান করেন। চান করলে ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই থেকে যায়। চান না করলেও অসুবিধে নেই যদি আপনি হাত,পা, মুখ খুব ভালো করে ধুয়ে নিন।
শুধু বিছানা পরিষ্কার রাখলেই তো হবে না, নিজেকেও পরিষ্কার রাখতে হবে। আর সেইজন্যই তো ফ্রেশ হয়ে বিছানাতে যান।
সামারি
ফ্রেশ হয়ে ঘুমোতে যান।
১৫। সন্ধ্যের পর থেকে মন কে হাল্কা করুন
সারা দিনে অনেক টাইপের মানুষের সাথে আপনার কথা হয়েছে, হয়তো কথা কাটাকাটিও হয়েছে। আপনিও বকা খেয়েছেন, হয়তো বা বিনা কারনেই। আপনি নিজেও অনেকের ওপর রাগ দেখিয়েছেন।
এইসব কিছু ভুলে যান। যে ভারি গ্লাস টা সারা দিন ধরে বয়েছেন, তা সন্ধ্যেবেলা মন থেকে শরীর থেকে দূরে সরিয়ে দিন।
সামারি
সন্ধ্যে থেকে মন কে হাল্কা করুন। বোঝা গুলো কে দূরে রাখুন।
১৬। ঘুমোবার ১-২ ঘন্টা আগে খাওয়া দাওয়া সেরে নিন
ঘুমোবার ১-২ ঘণ্টা আগেই ডিনার সেরে ফেলুন। ঘুমোবার ঠিক আগে কিছু খাবেন না। ডিনারের পর ব্রাশ করুন যাতে করে আপনার দাঁত গুলোও পরিষ্কার থাকে।
সামারি
লাস্ট খাওয়াটা ঘুমোবার ১-২ ঘন্টা আগেই সেরে ফেলুন।
১৭। ঘুমোবার আগে ভালো চিন্তা নিয়ে বিছানায় যান
পরিষ্কার বিছানায় পরিষ্কার শরীর ও মন নিয়ে যাচ্ছেন যখন, তখন চিন্তাগুলোকেও পরিষ্কার করে নিন। মনের মধ্যে একটা ডাস্টবিন তৈরি করুন। সন্ধ্যেবেলা মেডীটেশেন এ বসুন। আর মনের সব আবর্জনা গুলোকে ওই ডাস্টবিনে ফেলুন।
সবার আগে মন পরিষ্কার করুন, তারপর শরীর। তারও পরে বিছানা আর শোবার রুম।
সামারি
মনে ভালো চিন্তা নিয়ে বিছানাতে যান।
এই ১৭ টি উপায় ফলো করতে পারলে আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন যে ঘুম হবেই। ঘুম হচ্ছে না, ঘুম হচ্ছে না করে চিন্তা করবেন না। এমনটাও দেখা গেছে বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে- তারা দিনের বেলা টুকটাক করে ঘুমিয়ে আর রাত্রেও ৩-৪ ঘন্টা ঘুমিয়ে মোটামুটি ৬-৭ ঘন্টা ঘুম ঘুমিয়েই নেন। কিন্তু তারা তা টেরও পান না। আর খালি চিন্তা করতে থাকেন।
বয়স্কদের উদ্দ্যেশে বলবো- টুকটাক যখন তখন শুয়ে পড়বেন না। এতে অনেক সময় আপনি নিজেও বুঝতে পারেন না কখন ১০ মিনিট ঘুমিয়ে গেছলেন। তাই ঘুমোতে চাইলে দুপুরে লাঞ্চের পরে ঘুমোন।

আর ইয়াংদের জন্য বলবো- দিনের বেলা ঘুমোবেন না। বিশ্রাম নিতে পারেন মানে শুয়ে থাকতে পারেন ১০-১৫ মিনিটের জন্য।
দিনের বেলা যতটা পারবেন পরিশ্রম করুন আর পর্যাপ্ত পরিমানে আলোর মধ্যে থাকুন। রাত্রেবেলা পুরো রুম অন্ধকার করুন।
কিছুদিন অভ্যেস করলে, দেখবেন যে ভালো ঘুমের জন্য রুম অন্ধকার করাটাই যথেষ্ট; কোন ওষুধের প্রয়োজন নেই।
আশা করি ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয় তা আপনার কাছে পরিশকার। এবার আপনাকে সেইসব ফলো করতে হবে। ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত তা আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, সবাইকে ভালো রাখুন। চলুন, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে! আর ভালো ঘুমের জন্য ওষুধ নয়, অভ্যেস বদলে ফেলুন। যারা ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন তাদের কেও জানান- ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত।
Khub bhalo laglo, anek kichu janlam
Thanks a lot.