এখানে মহাভারত নিয়ে কিছু কথা লিখবো। লিখবো মহাভারত নিয়ে আমার চিন্তাধারা কি আর তোমরাও জানাইও তোমাদের চিন্তাধারা কি কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে। অনেকে মহাভারতের অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলে আবার অনেকে মহাভারতকেই জীবনের সারথি মনে করে।তাহলে মহাভারত নিয়ে উক্তি তুলে ধরার আগে মহাভারত নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।
তুমি কি মনে করবে, তুমি কি বিশ্বাস করবে তা নির্ভর করছে তোমার ওপরে। আর তোমার চিন্তাধারা অনুযায়ী তুমি জীবনে ফল ও পাবে। যাই হোক মহাভারত এর মুল কথা বা বলতে পারো আমি যেটুকু বুঝেছি সেইসব কিছু তুলে ধরবো। তাই প্রথমেই জানিয়ে রাখি যে তোমাদের কারো যদি আমার চিন্তাধারা সেকেলে মনে হয় বা ভালো না লাগে, তাহলে দয়া করে সামনের দিকে আর এগোনোর প্রয়োজন নেই বলেই আমি মনে করি।
তোমাদের যদি জানতে ইচ্ছে করে কি সেইসব চিন্তাধারা যা জীবন কে সঠিক পথ দেখায়, তাহলে অবশ্যই পড়তে থাকো।

পান্ডব ও কৌরব
মহাভারতের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে, অর্জুনের হাত কাঁপছিল। যদিও ছোটবেলা থেকেই অর্জুন আর ওর পরিবারের ওপর অনেক অন্যায় হয়েছিল, তবুও অর্জুন বলেছিল- সত্যিই কি যুদ্ধের প্রয়োজন আছে? শ্রী কৃষ্ণ বলেছিলেন-“হে পার্থ! তুমি যুদ্ধের তাৎপর্যই বোঝো নি। এই যুদ্ধ ধর্মের সাথে অধর্মের। আর তোমার কাজ হবে শুধু যুদ্ধ করা। তুমি যদি যুদ্ধের সাথে জড়িত ফল নিয়ে ভাবতে থাকো, তাহলেই তুমি চিন্তিত হয়ে পড়বে আর মন দিয়ে যুদ্ধ করতে পারবে না।“
ভগোবান শ্রীকৃষ্ণ এক জায়গায় বলেছেন –“ আমিই অর্জুন আর আমিই দুর্যোধন”। উনি বলতে চেয়েছেন যে “মানুষের মনের মধ্যে যে দুই রকমের মন এর বসবাস সেই দুই মনই আমি”।প্রশ্ন হল তাহলে কি আমাদের খারাপ মন কে কন্ট্রোল করার দরকার নেই?
অবশ্যই দরকার আছে। যেমন করে শ্রী কৃষ্ণ করেছেন- দুর্যোধন কে হারিয়ে অর্জুনের সাথে থেকে অর্জুন কে জিতিয়ে দিয়েছেন। উনি বলেছেন যে উনি ধর্মের পক্ষে। আর প্রতিটি মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত ধর্মের পথে এগোনো। আর এখানে ধর্ম বলতে উনি বলেছেন যে প্রতিটি মানুষের মন পরমাত্মার অভিমুখে হওয়া উচিত।
লক্ষ্য করে দেখে থাকবে যে – আমাদের মনে যেমন ভালো চিন্তা আসে, ঠিক তেমনি খারাপ চিন্তাও আসে। কারো কাছে ভালো চিন্তার পাল্লাটা ভারী হয় আবার কারো কাছে খারাপ চিন্তার পাল্লাটা ভারী হয়ে থাকে। আর আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত ভালো চিন্তার দিকে ফোকাস করা।
যদি কারো কাছে খারাপ চিন্তার পাল্লাটা ভারী হয়ে থাকে, আর যদি সেই ব্যাক্তি খারাপ চিন্তা কে তাড়াবার কোন প্রয়াসই না করে, তাহলে পরিস্থতি তাকে দিয়ে খারাপ কাজগুলোই করিয়ে থাকবে। আর যে ব্যাক্তির চিন্তা ভালো চিন্তার অভিমুখে, পরিস্থিতি সেই ব্যাক্তিকে ভালো কাজের জন্য বেছে নিয়ে থাকে।
আমাদের প্রত্যেকের মনে যেমন যুধিষ্ঠির এর বসবাস ঠিক তেমনিভাবেই দুর্যোধনেরও বসবাস। আর আমরা যদি প্রতিনিয়ত শ্রী কৃষ্ণ বা সৃষ্টিকর্তা কে স্মরন করে থাকি, তাহলে উনি অবশ্যই প্রয়োজন পড়লে মনের মধ্যে মহাভারতের মতো এক বড় যুদ্ধ ঘটিয়ে পজিটিভ মনের জয় ঘটিয়ে থাকবেন।
অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করেছিলেন – “হে মাধব, যদি সব কিছুই পরমাত্মাই করে থাকেন, তাহলে অধর্মকারীর প্রতি দণ্ড প্রদান কেন, দণ্ডের তাৎপর্য কি”?
শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন- “অধর্মের পথে হাঁটা ব্যাক্তি যখন ধর্মের পথে হাঁটার প্রয়াসই করে না, তখন দণ্ডপ্রদানই দয়া”।
মহাভারতে এটাও বলা হয়েছে যে আমাদের কোন বিনাশ হয় না। বিনাশ হয় আমাদের শরীরের। আমাদের শরীর প্রান পেয়ে থাকে যখন পরমাত্মার অংশ আত্মার সাথে প্রকৃতির মেলবন্ধন হয়ে আত্মা শরীর নামক যন্ত্রে বসবাস করে থাকে। আর এই আত্মার কোন বিনাশ হয় না। আত্মা কে বার বার জন্ম নিতে হয়। তারপরে যখন ওই আত্মা পবিত্র হয়ে ওঠে আর পরমাত্মার অভিমুখী হয়ে ওঠে তখন তা পরমাত্মার সাথে মিলিয়ে যায়। তখন সেই আত্মাকে আর জন্ম নিতে হয় না।
কিন্তু এ এক অদ্ভুত অনুভুতি। প্রশ্ন হল তাহলে কি যে পাপ করে সে কি এই জন্মে পাপের শাস্তি পায় না? আমরা কি কখনো কোন পাপীর জীবনের শেষ দিন অবধি সে কিরকম থাকে তার খোঁজ পেয়ে থাকি বা নেওয়ার চেষ্টা করি?
আমার মনে হয় কিছু কিছু মানুষ তার পাপের ফল এই জন্মেই পেয়ে থাকে। আবার কিছু কিছু মানুষ তার পাপের ফল পরের জন্মে পেয়ে থাকে। এরপর প্রশ্ন জাগতে পারে যে পরের জন্মে শাস্তি পেয়ে কি লাভ? আসলে এখানে লাভ বা ক্ষতির প্রশ্নই নেই। শুধু একটাই উদ্দ্যেশ্য আত্মার উন্নতি। এই কারনেই আত্মাকে বারে বারে জন্ম নিতে হয় বলেই আমার ধারনা।
মহাভারত আমাদের জীবনের পথ দেখায়। মহাভারত আমাদের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য বলে। মহাভারত শুধু এক ধর্মগ্রন্থ নয়। মহাভারত হিন্দু, মুসলিম, শিখ সমস্ত ধর্মের মানুষকে জীবনকে উন্নত করার উপায় দেখায়।
মহাভারত নিয়ে উক্তি
এবার মহাভারত নিয়ে উক্তি বলা যাক –
লোভে পাপ, আর পাপে মৃত্যু। দুর্যোধনের জীবন কাহিনী থেকে তা স্পষ্ট।
হিংসায় হিংসা বাড়ে। আর সেই হিংসা মানুষকে পতনের দিকে নিয়ে যায়।
নারীরা মাতৃসম। যে পুরুষ নারীর অপমান করে, প্রকৃতিও তাকে ছাড়ে না।
তুমি যে ধরনের কষ্টের মধ্যে আছো, ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবে যে অনেক মানুষ সেই একই ধরনের কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। তুমি যদি মানসিক আর শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকো, তাহলে তোমার দায়িত্ত্ব হল ঐ সকল মানুষের কষ্ট নিবারনের উপায় খোঁজা। তোমার মধ্যে সেই কষ্টের অনুভুতিও আছে, যা তোমাকে সাহায্য করবে বাকী ঐ সকল মানুষের কষ্ট নিবারনের উপায় খুঁজতে।
(কর্ণের জীবনী থেকে তা স্পষ্ট।)
সময়ের সাথে সাথে কিছু প্রথার পরিবর্তন আবশ্যক। (কর্ণের ভাইয়ের জীবনী থেকে তা স্পষ্ট।)
সমাজের ভালোর জন্য যদি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে তা ভঙ্গ করাই উচিৎ। (ভীষ্মের জীবনী থেকে তা স্পষ্ট।)
হতে পারে নারীরা অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের থেকে পিছিয়ে। কিন্তু একজন নারী কাকে বিবাহ করবে, তা সেই নারীকেই পছন্দ করতে দেওয়া উচিৎ, যদি সেই নারী জীবন সম্পর্কে সচেতন হয়ে থাকে। (দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভা থেকে তা স্পষ্ট।)
যখন তুমি বিপদে পড়বে, অবশ্যই ঈশ্বরশক্তির স্মরনাপন্ন হও। (পাশা খেলার শুরুতে শ্রী কৃষ্ণ কে স্মরন না করা এরই প্রমান বহন করে।)
যে কোন ব্যাপারেই, অত্যধিক বিশ্বাস বা ওভার কনফিডেন্ট হওয়া ভালো না। (যুধিষ্ঠিরের পাশা খেলা তাই প্রমান করে।)
ছলনা সাময়িক আনন্দ অবশ্যই দিতে পারে, কিন্তু তা কখনোই দীর্ঘ সময়ের জন্য আনন্দ দিতে পারে না। (শকুনির জীবনী থেকে তা স্পষ্ট।)
কিছু অন্তর্নিহিত উক্তি
পান্ডব মানে পজিটিভ শক্তি আর কৌরব নেগেটিভ শক্তিকে প্রতিনিধিত্ত্ব করে। আমাদের মনে এমন কি বাতাসের মধ্যেও এই দুই শক্তিরেই বসবাস। ধর্মের জয়ের জন্য এই দুই শক্তির সাথে যুদ্ধ করা তোমারেই কাজ কিন্তু ফলের আশা না রেখে। এই যুদ্ধে যদি নেগেটিভ শক্তির জয় হয়ে থাকে, ঈশ্বর তোমাকে কষ্ট দিয়ে ঠিক সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসবেন। আর এই যুদ্ধে যদি পজিটিভ শক্তির জয় হয়ে থাকে, তাহলে তোমার পরবর্তী কাজ হল সেই পজিটিভ শক্তি অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া।
ওপরে উল্লিখিত এই দশটি উক্তি খুবই সাধারন। আমরা তা সবাই জানি। আর এইসব সাধারন উক্তিগুলো মহাভারত থেকেই বোঝা যায়। মহাভারতে শ্রী কৃষ্ণ এই দশটি উক্তি ছাড়াও আরও অনেক কিছু বলেছেন কর্ণকে, দুর্যোধনকে, অর্জুনকে। সেইসব কিছু আর এখানে লিখলাম না কারন সেইসব কিছু তোমরা মহাভারত দেখলেই বুঝতে পারবে।
আশা করি তোমরা এই অন্তর্নিহিত অর্থটিতে আমার সাথে সহমত। এই ব্যাপারে তোমাদের যদি কিছু জানার থাকে, কমেন্ট বক্সে লিখে অবশ্যই জানিও। মহাভারত নিয়ে উক্তি আর্টিকেলটি তোমাদের কেমন লাগলো জানাতে ভুলো না যেন।