মাথা ব্যাথা কমানোর উপায় গুলো কি কি?

হেডেক

কিছু মানুষের কাছে মাথা ব্যথা এক প্রতিনিয়ত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই টপিকে আমরা মাথা ব্যাথা কমানোর উপায় গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।

প্রথমেই জানিয়ে দিই যে আমি কোন ডাক্তার নই। কিন্তু অভিজ্ঞতা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। অভিজ্ঞতা থেকেই আমি জীবন সম্পর্কে, জীবনের নানান সমস্যার সমাধান নিয়ে, শরীরের নানান সমস্যা এবং মন কে নিয়ন্ত্রনের উপায় ও শিখেছি। আর এখান থেকেই মাথা ব্যাথা কমানোর উপায় ও শিখেছি।

এই অভিজ্ঞতা থেকেই আজ আমি তোমাদের বলব কিভাবে খুব সহজেই মাথা ব্যথা সারান যায়।

তবে খুব জোরালো মাথা ব্যাথা দিনের পর দিন হতে থাকলে অবশ্যই ডাক্তার এর পরামর্শ নিও।

অনেককেই দেখেছি সামান্য ব্যথাতেই ওষুধ কিনে খেয়ে নেয় আমি তাদের উদ্দেশ্যেই কিছু টিপস দেব।

সবার আগে মাথা ব্যাথার কারন কি কি হতে পারে, তা জানা দরকার, তারপরে মাথা ব্যাথা কমানোর উপায় গুলো।

মাথা ব্যাথা এর সবচে বড় কারন হল সর্দি, কাশী; ভেতরে জমে থাকা কাফ এবং টেনশেন, অফিসে কাজের চাপ।

তাই সবার প্রথমে, সর্দি কাশী থেকে বা টেনশেন থেকে কি করে নিজেকে মুক্ত রাখবে তা জেনে নেওয়া দরকার।

আমি প্রচুর সর্দি কাশীতে ভুগতাম। ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। ডাক্তার বলেছিলেন ফুস্ফুস পরিষ্কার, কোন কফ জমে নেই। আর ওষুধ দিয়েছিলেন- কাফ সিরাপ।

কাফ সিরাপ খাওয়ার পর আমার কষ্টটা আর বেড়ে যেত। কফটা জমে যেত আর তাতে শুকনো কাশি আরো বেশী করে হত।

কিন্তু আজ আমি সম্পূর্ণরূপে সর্দি-কাশি থেকে মুক্ত। আর তাই মাথা ব্যথা থেকেও মুক্ত। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব হল সেইসব কিছুই এখানে বলব।

অনেকে বলে থাকে – যে এইসব ক্ষেত্রে হোমিওপ্যথি ওষুধে খুব কাজ দেয়। আমার তা বিশ্বাস হয় না।

কাজ দেয় কথাটা ভুল না, কিন্তু কাজ দেয় কি ওই ওষুধের জন্য? হাল্কা সর্দি-কাশী এমনিতেই কিছুদিন পরে সেরে যায়।

মাথা ব্যাথা কমানোর উপায় গুলো কি কি?

তাহলে দেখে নেওয়া যাক কি সেই টিপস গুলো যা আমার জীবনকে যেমন স্বস্তি দিয়েছে।

আর এই টিপসগুলো তোমাদেরও স্বস্তি দেবে তা নিশ্চিতরূপে বলতে পারি।

যখন তোমার সর্দি কাশি হয় নি বা মাথা ধরে নি সেই সময়ে নিচের টিপস গুলো নিয়মিত ফলো করলে আপনি এইসব টুকটাক রোগ থেকে দূরে থাকতে সক্ষম হবেন।

১। মাস্ক ব্যবহার করো

ধুলো বালি থেকে দূরে থাকতে মাস্ক। এর ফলে সর্দি কাশী হয় না আর মাথা ব্যাথা ও হয় না।
মাস্ক

অনেক সময় ধুলো বালি থেকে কপ জমে শ্বাসনালীতে।  এর ফলে ওই নালী তে চাপ বেড়ে যায়। ফলে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। আর তারপর মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়।

এইজন্য মাস্ক পরাটা রোজকার অভ্যেসে পরিনত করো। কিন্তু কখন পরবে এই মাস্ক? যখন তুমি বাইরে বেরোবে কিংবা বাড়ীতে কিছু সাফাই এর কাজ করবে।

২। নিয়মিত শ্বাস- প্রশ্বাসের ব্যায়াম করো

যোগাসন এর অভ্যেস থাকলে মাথা ব্যাথা দূরে থাকে।
যোগ ব্যায়াম

সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ করে পর ৫-১০ মিনিট ব্যায়াম করার অভ্যেস গড়ে তোল।

মাত্র ২-৩ তে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলেই যথেষ্ট। তুমি এর চেয়ে বেশীও করতে পারো।

প্রথম প্রথম তোমার খুব কষ্ট হবে, প্রত্যহ ব্যায়াম করতে ইচ্ছে করবে না। এই কষ্টটা ১৪-১৫ দিন পর থেকে কমতে থাকবে।

৩। প্রচুর জল খাও- মাথা ব্যাথা কমাও

জল আমাদের শরীর কে পরিষ্কার করে। আমাদের শরীরের মধ্যে তো মন থাকে। আর আমাদের মন তো মন্দির স্বরূপ। মনের মধ্যেই তো ঈশ্বরের বসবাস।

মন্দির যদি পরিষ্কার না থাকে, মন কেমনে ভালো থাকবে? আর মন যদি সুস্থ সুন্দর না থাকে, ঈশ্বর সেখানে থাকবে কি করে?

৪। মাথা ব্যাথা কমাতে ঠাণ্ডা জিনিষ খাওয়া ভুলে যাও

ঠাণ্ডা জিনিষ খাওয়া এই মুহূর্ত থেকে পরিত্যাগ করো। আমাদের শরীরের ভেতর টা খুব গরম থাকে।

গরম কড়াই এ জল দিলে কড়াই কেমন রেগে জ্বলে ওঠে, ঠিক তেমনি তুমি যখন ঠাণ্ডা কিছু খাও, তোমার শরীরের কোষ গুলিও জ্বলে ওঠে, যা তাদের অসুস্থ করে তুলতে সক্ষম।

৫। ঠাণ্ডা জলেই চান করো, কিন্তু কনকনে ঠাণ্ডা নয়

প্রত্যহ ঠাণ্ডা জলেই চান করো তবে কনকনে জল নয়।

জল যদি প্রচুর পরিমানে ঠাণ্ডা হয়, তাহলে সেই জল কে নর্মাল টেম্পারাচারে নিয়ে এসো আগে।

তবে গরম জলে চান করা পরিত্যাগ করো।

৬। নিয়মিত সাবান মেখে চান করো, দুদিন ছাড়া মাথায় জল নাও

চান করার সময়ে নিয়মিত সাবান ব্যবহার করো। যাদের তেল মাখা অভ্যেস, তারা তেল ( body oil) মাখতে পারে।

আর যাদের অভ্যেস নেই তারা সপ্তাহে একদিন হলেও তেল মাখো। দুদিন ছাড়া মাথা ভেজাও। আর যাদের ছোট চুল, তারা নিয়মিত মাথা ভেজাতে পারে।

৭। নিয়মিত ফল খাও কিংবা সকালে পাতি লেবু দিয়ে হাল্কা গরম জল খাও- মাথা ব্যাথা এর ওষুধ

একটা হলেও ফল খাওয়ার অভ্যেস গড়ে তোল। ভাত খাওয়ার পর ডেলি অন্ততপক্ষে একটা ফল খাও, ফল যদি না থাকে স্যালাড খেও।

আর যদি মনে হয় ফল কেনা খুব কষ্টকর, তাহলে ডেলি সকালে উঠে হাল্কা গরম জলে পাতি লেবুর রস মিশিয়ে সেই উষ্ণ জল খেও।

৮। দুপুরের মেনুতে ভাত কম খাও, সবজি বেশী খাও

ভাতের চেয়ে সব্জি এর পরিমান যেন বেশী হয়, বেশী না হলেও যেন দুত পরিমান ই সমান সমান হয়।

ভাত খেয়ে পেট না ভরিয়ে বরং সব্জি, দই, স্যালাড এইসব খেয়ে পেট ভরিও।

৯। রাত ৮.৩০ টা থেকে ৯.৩০ টার মধ্যে ডিনার সেরে নাও

রাত ৯.৩০ টার মধ্যে ডিনার কমপ্লিট করে নিও। ডিনারের পর সাথে সাথে বিছানায় সুয়ে পড় না।

ডিনারের পরে একটু হাঁটাহাঁটি করো ৫-১০ মিনিট।

১০। রাতের মেনু তে রুটি খেও, পরিমান যেন কম হয়

ডিনারে ভাত খেও না, বরং রুটি খেও। না, পরটা, লুচিও একদম ডিনারে খেও না। এইসব খাবার খেতে ইচ্ছে করলে সকালে ব্রেকফাস্ট এ খেয়ে নিও।

ডিনারে ভাত খেলে খুবই অল্প পরিমানে ভাত খেও।

১১। রাত ১১টার মধ্যে যেন ঘুমিয়ে যাও তাই ১০-৩০ টার মধ্যে বিছানাতে যেও

রাত ১১ টার মধ্যে যেন ঘুমিয়ে পড়, সেইদিকে বিশেষ খেয়াল রাখো। আর সেই কারনেই তো তোমাকে ১০-৩০ টার মধ্যে বিছানাতে যেতে হবে।

বিছানাতে যাওয়ার পরে আর ঘুমোবার আগের সময়টাতে চিন্তাগুলো যা মনের মধ্যে ঘোরাফেরা করে তা যেন শুদ্ধ হয়, পবিত্র হয়।

১২। সকালে ৬ টার মধ্যে উঠে যেও

আর তুমি যদি মাথা ব্যথায় বা সর্দি কাশীতে ভুগছো তাহলে নিচের স্টেপস গুলো ফলো করো আর তার সাথে ওপরে উল্লেখ করা স্টেপস গুলোও ফলো করো শুধুমাত্র ২ নম্বর স্টেপস টা বাদ দিয়ে।

নিচে যে টিপস গুলো দেবো, তার জন্য চাই বিশ্বাস। যাদের নিজেদের ওপর বিশ্বাস নেই, ঈশ্বর শক্তির ওপর বিশ্বাস নেই, তাদের এই টিপসগুলো বেকার মনে হবে।

তাই তাদের উদ্দ্যেশে বলবো যে তাদের আর না পড়াই ভালো।

১। রিলাক্স হওয়াটা খুবই জরুরী মাথা ব্যাথা থেকে দূরে থাকতে হলে

মাথা ব্যথার সময়ে তুমি কিছুক্ষণের জন্য বিছানাতে শুয়ে পড়ো। খেয়াল রেখো বিছানা যেন তুলতুলে নরম না হয় আবার খুব শক্তও যেন না হয়। চিত হয়ে সোজা শুয়ে পড়ো।

ভাবনা চিন্তা কে সাময়িকের জন্য দূরে রাখো।

২। মন

মন কে নিয়ে চলো সেই জায়গাতে বা সেই অঙ্গে যা তোমাকে ব্যথা দিচ্চে বা বিচলিত করছে। সেই অঙ্গে প্রবেশ করে- তার সমস্যার কথা তুমি জানো।

তাকে ভারচুয়ালি ভালোবাসা দিও, তাকে বলো যে তুমি এরপর থেকে তার যত্ন নেবে।

এটাও বলো যে তুমি দুঃখিত তার মধ্যে এই অসুবিধে তৈরি করার জন্য।

ঈশ্বরের থেকে শক্তি নিয়ে সেই শক্তি সেই ক্ষতস্থানে দিয়ে দিও। এইসব কিছুই তুমি মনে মনে সম্পন্ন করবে।

৩। সময়

প্রতিটি ওষুধেই তার কাজ সম্পন্ন করতে কিছু তো সময় নেই। ঠিক সেইরকম ভাবে, এক্ষেত্রেও অল্প সময়ের অপেক্ষা করো শুয়ে শুয়েই।

৪। বিশ্বাস

তারপর মনে মনে ভাবতে থাকো যে ওষুধ তো পড়েছে, তাই আর চিন্তা নেই। ঈশ্বর শক্তি যখন ওই ক্ষতস্থানে তখন আর কোন নেগেটিভ শক্তি থাকতেই পারে না ওই অঙ্গে।

যখন তোমার কোন জায়গা ব্যথা করছে তখন তার মানে তুমি কি বোঝো?

আমি বুঝি যে – ওই স্থান ঈশ্বর শক্তির আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে ইশ্বর শক্তি বিরাজমান।

আর যে স্থানেই ঈশ্বর শক্তি থাকবে না, সেই স্থানই দখল নেবে নেগেটিভ শক্তি।

আর নেগেটিভ শক্তি দখল নেওয়া মানেই তো নানান রকমের উপসর্গ এর আবির্ভাব। যেমন ধরুন সর্দি, কাশী,মাথা ব্যাথা, মন খারাপ ইত্যাদি।

এমন কি ক্যান্সার এর মতো দুরারোগ্য ব্যাধিও নেগেটিভ শক্তির প্রাচুর্যের কারনে হয়ে থাকে। এই ক্যান্সার রোগ মানে তো কোষের পচন।

কোষ তখনই পচতে থাকবে যখন সেখানে কোন ঈশ্বর শক্তি থাকবে না।

একটা কোষে নেগেটিভ শক্তি বিরাজ করলে, ক্রমশই তার ক্ষমতা সে বাড়াতে থাকে। ক্যান্সার রোগী রা নানান রকম ওষুধ খেতে থাকে, কেমো নিতে থাকে।

বাইরে থেকে আসা এই এজেন্ট গুলোর মধ্যে পজিটিভ শক্তির সাথে নেগেটিভ শক্তিও থাকে।

এতে নেগেটিভ শক্তির পরিমান ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আর রোগীরা কেউই পজিটিভ শক্তি বাড়ানোর প্রয়াস তো করেই না, উলটে নেগেটিভ শক্তেরই চর্চা করে বেশী।

এর ফলে নেগেটিভ শক্তির পরিমান আর বেড়ে যায়। পুরো শরীর যখন নেগেটিভ শক্তিতে ভরে যায়, তখন রোগীর মৃত্যু ঘটে।

তাই শরীরের প্রতিটি কোষকে পজিটিভ শক্তিতে ভরিয়ে রাখা তোমার দায়িত্ব।

৫। বেশী করে জল খাও আর রাত্রে গভীর ঘুম দিও

ওপরের ৪ টি স্টেপস ফলো করার পর যখন তুমি দেখলে যে তোমার মাথা ব্যথা একটু কমেছে তখন বিছানা থেকে উঠে ১-২ গ্লাস জল খেয়ে একটু হাল্কা মুডে ধীরে ধীরে পায়চারী করো। সারাদিনটাতে যেন বেশী করে জল পান করো সেদিকে নজর রেখো।

বিকেলে একটু হাঁটা চলা করো বা তোমার পছন্দের মতো শারীরিক পরিশ্রম করো যাতে রাত্রে ঘুমটা ডিপ হয়। 

মাথা ব্যাথা কমানোর উপায় গুলো ফলো করলে আমি নিশ্চিত রূপে বলতে পারি যে পরের দিন তোমার মাথা ব্যথা আর থাকবে না। এই দিন থেকেই প্রথমেই উল্লেখ করা ১২ টি স্টেপস ফলো করতে থাকো।

সুস্থ থেকো, ভালো থেকো, সবাইকে ভালো রাখো। চলো, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে!  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট