শাশুড়িকে বশীকরণ এর সঠিক উপায় কি?

ভালোবাসা দিয়েই বাজি মাত করা যায়, করা যায় শাশুড়িকে বশীকরণ

অনেক মহিলাই প্রকাশ্যে না বললেও মনে মনে ঠিক খুঁজে বেড়ান শাশুড়িকে বশীকরণ এর উপায়।  

শাশুড়ি ছাড়া কি মহিলাদের সংসার সম্পূর্ণ হয়? যেসব মহিলারা শাশুড়ি কে বাদ দিয়ে সংসার করেন বা বিবাহের আগেই শাশুড়ি কে হারিয়েছেন, আমার মনে হয় তারা জীবনের একটা দিক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আপনারা হয়তো তাদের ভাগ্যবতী বলবেন। কিন্তু আমার তা মনে হয় না।

শাশুড়ি কে নিয়ে যারা সংসার করে চলেছেন তাদের জীবনে রয়েছে প্রচুর ওঠানামা। আর ওঠানামাই তো জীবন।

জীবনে যদি টুকটাক কলহ না থাকে, তাহলে কি সেই জীবন পরিপূর্ণ হবে? যেমন জীবনের একটা সময় বাবা মা কে ছেড়ে দূরে হোস্টেল এ যদি কেউ না থাকে, তাহলে কি সেই জীবন পূর্ণতা পাবে? কোন ছেলে যদি সারাটা জীবন বাবা মা এর কাছেই কাটিয়ে দেয়, তাহলে সে চিরকালেই বাচ্চা থেকে যাবে।

শাশুড়ি কে নিয়ে জীবন কাটালে মহিলাদের জীবনে পূর্ণতা আসে। তবুও কি জানতে চান শাশুড়িকে বশীকরন এর উপায় গুলো? শাশুড়িকে বাদ দিয়ে সংসার করার চেয়ে শাশুড়ি এর সাথে মিলেমিশে কিভাবে একাসাথে সংসার করা যায় –সেইসব কৌশল জেনে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।   

আপনি কি কিছুতেই এডজাস্ট করতে পারছেন না? আপনি কি তাই শ্বশুরবাড়ি তে থাকতে পারেন না? আর সেইজন্যই তো স্বামী কে অনুরোধ করেন শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে অন্য কথাও বাড়ী তৈরি করার জন্য?

এইসব নিয়ে হামেশাই আপনার সাথে আপনার স্বামীর ঝগড়া চলতে থাকে? অশান্তির প্রথম কারন তো এইসবই।

শাশুড়িকে বশীকরণ এর উপায়

আপনি যদি শাশুড়িকে বশীকরণ এর সব উপায় গুলো জেনে শাশুড়ির সাথে থাকতে পারেন; দেখবেন অশান্তিও দূর হয়ে গেছে।

তাহলে পড়ে নিন শাশুড়িকে বশীকরণ এর উপায়গুলো আর দূর করুন অশান্তিঃ

১। বশীকরণ না ভালোবাসুন

বশীকরণ কেন করতে চাইছেন? বশীকরণ মানে আপনি যা চাইবেন উনি তাই করবেন? সে তো ভালোবাসা দিয়েই করা যায়। ভালোবাসা তো অসাধ্য সাধন করে।

বশীকরণ শব্দটাই তো নেগেটিভ। নেগেটিভ শব্দ দিয়ে তো নেগেটিভ কাজই হয়। নেগেটিভ অস্ত্র ব্যবহার না করে পজিটিভ অস্ত্র ব্যবহার করুন।

ছোটদের বশীকরন করাটা সহজ। কিন্তু বড়দের কি সহজ? তারপর আবার শাশুড়িরা সংসার জীবনে বেশ অভিজ্ঞ মানুষ। অভিজ্ঞ মানুষদের সহজে বশে আনা যায় না। তাই একটাই উপায় ভালবাসুন। ভালো যদি বাসতে নাও পারেন; অভিনয় করুন যে আপনি তাকে ভালোবাসেন।

২। দৃষ্টিভঙ্গি বদলান

নচিকেতার একটা গান আছে, শুনেছেন নিশ্চয়- দৃষ্টিভঙ্গিটাকে শুধু বদলান, বউকে লাগবে ভালো আগেরেই মতো। ঠিক তেমনি – দৃষ্টিভঙ্গিটাকে বদলান, শাশুড়ি কে লাগবে ভালো কাকিমা বা জেঠিমার মতো।

আপনার দৃষ্টিভঙ্গিই পারে যাদু করতে।

৩। মুখে ভালো কথা বলুন, মনের ভেতর যাই হোক না কেন

আমাদের সকলের মনের ভেতরেই নানান দুশ্চিন্তা চলতে থাকে। শুধু কি আপনার মনে নেগেটিভ চিন্তা আসে? না, তা আসলে নয়। সকলের মনেই অন্যের সম্পর্কে অশুভ চিন্তা খেলা করতে থাকে। কিন্তু একজন সচেতন মানুষ কখনো এইসব নিয়ে মাথা ঘামান না, আর এইসবের বহিঃপ্রকাশ ও করেন না।

তাই মনের ভেতর শাশুড়ি মা সম্পর্কে যা বাজে ধারনাই আসুক না কেন, সেইসব ধারনা কে পাত্তা দেবেন না। মুখে ভালো কথা বলবেন। ভালো শব্দ প্রয়োগ ও কিন্তু ম্যাজিক করতে পারে।

৪। শাশুড়ি কে শাশুড়ি হিসেবেই দেখুন, নিজের মায়ের সাথে তুলনা করবেন না

ছোটবেলা তে কখনো বান্ধবীর বাড়ী গিয়েছেন? বান্ধবীর মায়ের সাথে কিছুটা সময় কাটিয়েছেন? ঠিক সেইরকমই, শাশুড়ি কে আপনার বন্ধুর মা হিসেবেই দেখুন। আপনার স্বামীর মা হিসেবেই দেখুন। আপনি যদি ভালো মনের মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয় অন্যদের সাথে ভালোই ব্যবহার করেন?

শাশুড়িকে কখনো নিজের মায়ের সাথে তুলনা করবেন না। মা একটাই হয়। আর বাকী সব – কাকীমা, জেঠিমা, শাশুড়িমা। শাশুড়িমারাও তা বোঝেন। তাই তো তারাও বউমাদের কখনোই নিজের মেয়ে ভাবেন না।

ভালো শাশুড়িমারা  চেষ্টা করেন বউমাদের নিজের মেয়ের মতো করে রাখতে। কিন্তু ওই যে চেষ্টা- ওর মধ্যেই একটা গ্যাপ থেকে যায়। নিজের মেয়ের বেলায় কিন্তু তা চেষ্টা করতে হয় না, ভালোবাসা টা স্বতঃস্ফূর্তই আসে।

ঠিক একইরকম ভাবে আপনাকেও সকলে চেষ্টা করতে বলবে; বলবে নিজের মায়ের মতো করে দেখো। আমি তা বলবো না। বরং বলবো- এই চেষ্টাটা করবেন না। এইরকম চেষ্টা করতে থাকলে মন আরোই ভারাক্রান্ত হবে।

শাশুড়ি কে শাশুড়ি মা হিসেবেই দেখুন। আর ভাবুন –উনি যেমনই হোক না কেন, উনি আপনার গুরুজন। তাই উনাকে সম্মান দিন।

৫। অযথা তর্ক করবেন না

বাড়ীতে যখন আপনার বাবা কিংবা মা তুমুল রেগে যান আপনার ওপর, তখন আপনি কি করেন? থেমে যান তো? কিংবা চুপচাপ শুনতে থাকেন তাদের বকাঝকা?

ঠিক একইরকম ভাবে, শাশুড়িও যখন রেগে যান, তখন চুপটি মেরে থাকুন। তর্ক করবেন না। তর্ক করলে উনার রাগ বেড়েই যাবে, আর উনি থামবেন না।

তাই এই কলহ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে, তর্ক করা বন্ধ করুন।

এইসব যদি আপনি মেনে চলেন তাহলে আপনি খুব সুখে সংসার করতে পারবেন । কিন্তু সব ক্ষেত্রেই কি এইসব উপদেশ কাজে দেবে? প্রশ্ন এখানেই?

যদি আপনার শাশুড়িমা খুবই বদ মেজাজি, অহংকারী, আর জেদি মহিলা হন। আর আপনার ওপর মানসিক অত্যাচার করতে থাকেন?  তাহলে কি ওপরের ফর্মুলাগুলো কাজে আসবে?

জেদি,অহঙ্কারি শাশুড়িকে বশীকরণ এর উপায়

এইসব ক্ষেত্রে কি করা উচিৎ দেখে নিন-

১। প্রয়োজনে মিথ্যে বলতে শিখুন

যদি আপনাকে আপনার শাশুড়ি এমন কিছু কাজ করতে বলে কিম্বা এমন কিছু নিয়ম পালন করতে বলে যা আপনার পছন্দ নয়; আপনি মিথ্যে বলুন। এইরকম মিথ্যে বলাতে কোন পাপ হয় না।

শুধু খেয়াল রাখবেন সেই মিথ্যে কথাগুলো যেন কারো ক্ষতি না করে।

২। কৌশল শিখুন

অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে শিখুন। শুধু শাশুড়ি নিয়েই তো পরিবার হয় না। পরিবারে আরো কিছু তো মানুষ আছে। অন্ততপক্ষে, তাদের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখুন।

৩। স্পষ্ট হোক কথা, কিন্তু মুখে থাকুক নম্রতা

অনেক সময়ে শাশুড়িরা বউমাদের এমন বাজে কথা বলে থাকেন, যে সত্যি তা সহ্য করা যায় না। আর সেইখেত্রে, আপনাদের ও ধারাল কথার ব্যবহার করতেই হয়। ধারাল কথা বলুন, কিন্তু খুব মিষ্টি সুরে বলুন।

৪। ধৈর্য হারাবেন না, ভালো সময় ভালো ক্ষণ আবার আসবে

পরিস্থিতি যতই জটিল হোক না কেন, ধৈর্য হারাবেন না। মনে রাখবেন- “এইছা দিন নাহি রহেগা”। সময় বয়ে চলেছে। আর পরিস্থিতি তো সময়ের ওপরেই ভাসমান।

৫। প্রয়োজনে না বলতে শিখুন

প্রয়োজনে না বলতে শিখুন। আর নিজের জন্য কিছুটা সময় বার করুন। এই সময়টাতে, আপনি আপনার সাথেই থাকবেন। মানে আপনি আপনার বাচ্চা কিম্বা স্বামীর সাথেও থাকবেন না, একদম একা নিজের সাথে কাটাবেন।

৬। আত্মনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করুন

যেসব মহিলারা চাকুরী করেন, তারা যে সব সাংসারিক সমস্যা থেকে দূরে থাকেন- এমনটা কিন্তু নয়। তবে আপনি যখন বাড়ীর বাইরে অফিসে বা কোন কোম্পানিতে যাবেন, আপনার মন অনেক পজিটিভ শক্তি নিয়ে আসবে। এর ফলে আপনার মনের জোর বাড়বে, আপনি ধৈর্য ধরতে শিখবেন।

তাই চেষ্টা করুন চাকুরী করার বা কোন ছোটোখাটো কাজ করার। আপনি যেন নিজের খরচ টা নিজের অর্জিত টাকা থেকেই করতে পারেন। আপনার নিজের জীবন চালানর জন্য যেন অন্যের থেকে টাকা নিতে না হয়।

৭। শাশুড়ি কে কিছু গিফট দিন

নিজের অর্জিত টাকা থেকে শাশুড়ির জন্য কিছু উপহার কিনুন। এতে উনাদের মন সাময়িক ভালো হবে। তবে জেদি, অহংকারী শাশুড়িরা বিশেষ করে যেসব শাশুড়িদের পুত্র সন্তানের জন্য এক বিশাল অহঙ্কার আছে; তাদের আপনি কিছুতেই খুশী করতে পারবেন না।

তাই এইরকম অহংকারী শাশুড়িদের আপনি গিফট দিতে পারেন, কিন্তু কিছু প্রত্যাশা রাখবেন না। কারন ইনারা অহঙ্কারের সমুদ্রে নিমজ্জিত, এদের চোখ কোন ভালো জিনিষ দেখে না। লক্ষ্য করে দেখবেন- এইসব শাশুড়িরা কখনোই সুখী হয় না।

ইনারা খালি ভাবতে থাকেন- ইনাদের পুত্র সন্তান কে যেন অন্যের মেয়ে কেড়ে নিয়েছে।

তাই এইরকম শাশুড়ি হলে একই বাড়ীতে না থাকাই শ্রেয়; কাছাকাছি দুরত্বে একটা ভাড়া বাড়ীতে হলেও দূরে থাকুন। আর মাঝে মাঝে তাদের সাথে দেখা করতে আসুন। আপনার শাশুড়ি কিন্তু আপনার স্বামীরেই মা। তাই আপনারও একটা দায়িত্ব থেকে যায়। তাই নিয়মিত তাদের খোঁজ খবর নিন।

এতে শান্তি বজায় থাকবে।

ভালো শাশুড়ির সাথে মানিয়ে চলার আর খারাপ শাশুরিদের বশীকরণ এর উপায়গুলো আশা করি আপনাদের কাজে লাগবে। এরপরেও আপনারা যদি শ্বশুরবাড়ি নিয়ে অন্য কোন সমস্যায় ভুগতে থাকেন; তাহলে তা অবশ্যই জানাবেন। আপনাদের সমস্যাগুলো জানতে পারলে আমরা নিয়ে আসতে পারবো নতুন কোন সমাধান।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, সবাইকে ভালো রাখুন। চলুন, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে!  

2 thoughts on “শাশুড়িকে বশীকরণ এর সঠিক উপায় কি?

  1. ছেলেরা সারাজীবন বাবা-মায়ের কাছে থাকলে যদি বাচ্চা থেকে যায় তাহলে মেয়েদের ক্ষেত্রে কি হবে? না কি মেয়েদেরতো ম্যাচিউরিটি একটা অপ্রাসঙ্গিক ব্যাপার? এ বিষয়ে লেখক আলোকপাত করলে ভালো হতো!

    1. প্রথমেই জানাই অনেক ধন্যবাদ লিখাটা পড়ার জন্য। একটা মেয়েও বাবা মা এর কাছে সারাটা জীবন কাটালে বাচ্চাই থেকে যায়। সেইজন্যই তো বলা হয়েছে শাশুড়ির সাথে সংসার করলে জীবনে পূর্ণতা আসবে। Adjustment শিখবে। এডজাস্টমেন্ট তো জীবনের একটা অংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট