সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য ম্যাজিক করার মতো ৭ টি উপায়

জীবনে তারা সুখী হয় না যাদের কাছে অঢেল টাকা থাকে বরং জীবনে তারাই সুখী হয় যাদের কাছে সম্পর্ক মধুর হয়; যারা সব রকম সম্পর্কের মধ্যে মিষ্টতা বজায় রাখতে পারে। সম্পর্ক ভালো রাখার উপায়গুলো জন্ম থেকেই তাদের হাতের মুঠোয়।

এখানে সব রকম সম্পর্ক মধুর করার কথা বলছি।

শুধু মাত্র স্বামী স্ত্রীর মধ্যেকার সম্পর্ক ভালো কিন্তু পাশাপাশি বা আত্মীয় স্বজন কারো সাথেই ভালো সম্পর্ক যদি না থাকে; জীবন এক অস্থিরতা, বিচলতার মধ্যে কাটাতে হয় যা আপনাকে কোনদিন সুখী হতে দেয় না।

আজকাল সোশেল মিডিয়াতে প্রচুর পরিমানে সুখী দম্পতির ছবি দেখে আপনি কি এটাই ভাবেন যে সবাই খুব সুখী?

আপনি কি আপনার বন্ধুদের থেকে টিপস ও চেয়েছেন ভালো, মধুর সম্পর্কের জন্য? কিন্তু সেইসব টিপস এও কোন কাজ দেয় নি?

শুধু আপনি একা এই সমস্যায় ভুগছেন না। বেশীরভাগ দুঃখ ও কষ্টের কারন কিন্তু “তিক্ত সম্পর্ক”। জানেন কম টাকা পয়সাওয়ালা কিছু মানুষ বেশী ধনী লোকদের চেয়েও সুখী? কারন কি জানেন?

এর কারন হল –ওই যে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর পরিবারে নিজেদের মধ্যে কলহ নেই, বরং আছে গভীর টান, একে অপরের প্রতি অটুট বিশ্বাস, আর আছে গভীর কিন্তু সুপ্ত ভালোবাসা।

সুপ্ত এই কারনেই, তারা তাদের সম্পর্কের গভীরতা সকলকে দেখানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়াতে শো করে না।

“Relationships are more important than life, but it is important for those relationships to have life in them”

Swami Vivekananda

আসুন দেখে নেওয়া যাক কি সেই টিপস যা ফলো করলে জীবনে সব সম্পর্ক টিকে থাকবে।

১। নির্ভরতা সম্পর্ক বজায় রাখতে বাধ্য করে

নির্ভরতা সম্পর্ক বজায় রাখতে বাধ্য করে।

একটি বাচ্চা তার মা বাবাকে খুব ভালবাসে। কেন জানেন? কারন বাচ্চাটির পৃথিবী তার মা বাবা। মা বাবা ছাড়া সে সম্পূর্ণরূপে অচল। মা বাবার মতো এতো বেশী কেউ তাকে ভালবাসে না।

বাচ্চাটি জানে যে সে দোষ করে ফেললেও তার মা বাবা তাকে বকাবকি করবে ঠিকই, কিন্তু ভালো তো আগের মতোই বাসবে।

আবার বাবা মাও বাচ্চাটির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু তা কি করে? বাচ্চাটিকে যখন তার মা বাবা আদর করে, তখন তার মা বাবার আলাদা একটা অনুভূতি জাগে মনে।

সে এমন এক অনুভূতি যা আর কোন সম্পর্ক দিতেই পারে না। এই অনুভূতির কি কোন মুল্য নেই?

এই অনুভূতি কি আপনি বাজার থেকে কিনতে পারবেন? এই অনুভূতি কেনা তো দুরের কথা, এমন কি ভাষায় প্রকাশ করাও যাবে না।

এইরকম অনুভূতি সেই মা বাবা যার কাছে পেয়ে থাকে, তার ওপর তো অবশ্যই নির্ভরশীল সেই মা বাবা।

ইংরেজীতে একে বলে- “ Co-dependency “। এক তরফা নির্ভরতা ভালো না। কিন্তু যখন নির্ভরতা দুই তরফা হয়ে যায় তখন সেখানে  ধীরে ধীরে ভালবাসা জন্ম নেয়।

Co-dependency does not keep you warm, it keeps you from breathing fresh air.

তাই আপনি যেমন অন্যের ওপর নির্ভরশীল, ঠিক তেমনি এটাও খেয়াল রাখবেন যেন অনেকে আপনার ওপরও নির্ভরশীল হয়ে থাকে। 

২। বিশ্বাস- সম্পর্ক এর বন্ধন মজবুত করে

বিশ্বাস সম্পর্ক এর বন্ধন দৃঢ় করে।

“Faith is the gaze of a soul upon a saving God”.

A.W.Tozer

যেখানে বিশ্বাস, সেখানে আস্থা। যেখানে আস্থা সেখানে ভরসা। যেখানে ভরসা সেখানে ভালবাসা। যেখানে ভালবাসা সেখানেই সম্পর্কের দৃঢ়তা।

ভালোবাসা থাকলেই বিশ্বাস আসবে – এমনটা নয়। বিশ্বাস থাকলেই ভালোবাসা আসবে। বিশ্বাসের মধ্যেই তো থাকে ভালোবাসার বীজ। এই ভালোবাসার বীজ বড় হলেই তো ফল হিসেবে দেয় সুদৃঢ় সম্পর্ক।

বিশ্বাস হল সম্পর্কের ভীত। ভীত যদি মজবুত না হয়, সম্পর্ক কিভাবে মজবুত হবে?

৩। সম্মান- সম্পর্ক এর মাধুর্য বাড়িয়ে দেয়

Respect yourself and others will respect you.

Confucius

কে বলেছে সম্মান করাটা শুধু ছোটদের দায়িত্ব? বড়রাই কি শুধু সম্মান পাওয়ার যোগ্য হয়? না, এমনটা নয়।

ছোট বড় সবারেই একটা নির্দিষ্ট সম্মান আছে। তাই বাড়ীর সকলেরই উচিৎ সকলকে সম্মানের  মর্যাদা দেওয়া। তবে হ্যাঁ, সম্মান দেওয়ার ওয়ে টা ভিন্ন হয়। ছোটদের জন্য এক রকম আর বড়দের জন্য এক রকম।

৪। উপহার- সম্পর্ক এর মধ্যে ভালোবাসার সঞ্চার করে

উপহার দেওয়া নেওয়ার মাধ্যমে সম্পর্ক আরো গভীর হয়।

Giving to others will not take away from what you have but will in fact add to your life.

CatherinePulsifer

আপনার বাড়ীতে কতজন চাকুরী বা আয় করে? যদি আপনি বাড়ীর বাউন্ডারি টা বাড়ান, তাহলে নিশ্চয় কমপক্ষে ৩-৪ জন তো থাকবেই যারা আয় করে।  এই প্রসঙ্গে একটা উদাহরন দেওয়া যাক-

ধরুন, একটি লোকের আরও দুটি ভাই আছে, একটি বোন আছে। এদের ৪ জনেরেই বিয়ে হয়ে গেছে। সবাই আলাদা আলাদা থাকে। সকলের ঘরেই ২-৩ টে করে বাচ্চা আছে।

দুর্গা পূজার প্রাক্কালে সকল বাঙ্গালিই নতুন নতুন জামা কাপড় কিনে থাকে। যাদের টাকা পয়সা কম থাকে, তারা শুধু নিজের বাচ্চাদের জন্য কিনে থাকে, নিজেদের জন্য কিনে না। কিন্তু কেমন হবে যদি একজন অন্যজনের বাচ্চাদের পুজার জামা কাপড় টা কিনে দেয়?

আপনি যদি নিজের জন্য না কিনে আপনার ভাই বোনদের কিনে দেন? আর আপনার ভাই বোনেরা যদি আপনাকে কিনে দেয়- কেমন লাগবে আপনার?

বা ধরুন আপনি অনেকদিন পরে আপনার ভাইয়ের বাড়ীতে গিয়ে দেখলেন যে আপনার ভাই এর বাচ্চার স্কুলের ব্যাগ টা বা টিফিন বক্স টা অনেক পুরান হয়ে গেছে।

পরের বার আপনি যখন আবার ভাইয়ের বাড়ি গেলেন বা আপনার ভাই যদি আপনাদের বাড়ীতে আসে; আর তখন যদি আপনি আপনার ভাইএর বাচ্চাকে  স্কুল ব্যাগ বা পেন্সিল বক্স দিয়ে থাকেন, কেমন হবে তাহলে?

There is no more expensive thing than a free gift.

Michel De Montaigne

আপনি দেখবেন যে এই উপহারের চেন টা বেড়েই চলেছে। উপহার দেওয়া নেওয়া এর এই চেনটা যতই বাড়তে থাকবে, সম্পর্ক ততই মধুর হতে থাকবে।

৫। ক্ষমা- সম্পর্ক কে এক নিমেষে সুন্দর করে তুলে

ক্ষমা- এই একটা শব্দ সম্পর্ক এ  ম্যাজিক এনে দেয়।

Forgive others not because they deserve forgiveness, but because you deserve peace.

Jonathan Lockwood Huie

ক্ষমা এক পরম ধর্ম, এক বড় গুন। যারা কখনো কাউকে ক্ষমা করেনি, তাদের পক্ষে ক্ষমা করাটা খুব জটিল কাজ। যে কোন কাজই শুরুতে কঠিন মনে হয়। দীর্ঘদিন করার ফলে ধীরে ধীরে তা সহজ হয়ে যায়।

ধরুন আপনার সাথে আপনার ভাইএর কোন বেপারে খুব বচসা হয়েছে। যদিও আপনার ভাই এরই দোষ ছিল। শেষমেশ আপনি যেটা চাইছিলেন না সেটাই করতে হল। কারন তা না হলে আপনার ভাই হুমকি দিচ্ছিল, আপনার ভাই এর কিছু অসুবিধেও হচ্ছিল।

এইসব দেখে ভাইএর কথা ভেবে, ওর চেঁচামিচি শুনে আপনি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ও যেটা বলছিল সেটাই করলেন। কিন্তু মনের ভেতরে আপনার খুব রাগ। আপনার মন জ্বলছে। সুযোগ পেলেই প্রতিশোধ নেবেন, আপনি সেই দিনের জন্য প্রতীক্ষা করছেন।

কিন্তু আপনি সেইরকম কোন সুযোগ পাচ্ছেন না। এদিকে আপনি খুব রেগে আছেন। সেইদিনের ঘটনা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। এইরকম কখনো কারো সাথে ফেস করেছেন?

এই ক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার ভাইকে মনে মনে ক্ষমা করে দেন, আপনি অনেক হাল্কা বোধ করবেন। প্রকাশ্যে ক্ষমা করার দরকার নেই যতক্ষণ না অবধি উলটো দিক থেকে অন্যজন ক্ষমা চাইছে।

আপনার রাগ হচ্ছে তো মনে মনে। মনের রাগ দূর করার একমাত্র উপায় মনে মনে ক্ষমা করে দেওয়া। আপনি ক্ষমা করে দিলে, ধীরে ধীরে ওই দিনের ঘটনা টা আপনি ভুলেই যাবেন। তখন আবার ভাইয়ের সাথে কথা বলার ইচ্ছে হবে যা এতদিন ধরে ওই একটি ঘটনার জন্য বন্ধ ছিল।

৬। স্বাধীনতা- সুখ এনে দেয়

ফ্রিডাম

Freedom is the oxygen of the Soul

Moshe Dayan

অন্যকে বেঁধে রাখলে, জোর জবরদস্তি করলে, অন্যের স্বাধীনতা কেড়ে নিলে ,সেখানে সম্পর্ক কিছুতেই মধুর হবে না।

আপনি বোঝাতে পারেন, সাজেসেন দিতে পারেন, ভালো পথে ছোটদের গাইড করতে পারেন কিন্তু জোর জবরদস্তি করতে পারেন না।

নির্ভরতা থাকবে কিন্তু পরাধীনতা নয়। পরাধীনতা মানে অন্যকে দিয়ে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া।

কিন্তু বাড়ীতে কেউ যদি জেদ করে দিনের পর দিনে মদ্য পান করে আর কারো ওপর অত্যাচার করে, তাহলে এই ক্ষেত্রে সে ওই ব্যাক্তিকে নিজের অধীনে রাখতেই পারে।

এটাও পরাধীনতা নয়। আপনার ইচ্ছেমত সময়ে আপনার ভাইকে যদি আপনার কড়া নির্দেশে আসতেই হয়, আপনি পারমিসেন দিলেই যদি আপনার ভাই বাড়ীর বাইরে পা রাখতে পারে, আপনি যা বলেন তাই তাকে বাজার করতে হয়, ইত্যাদি ক্ষেত্রে আপনি জানবেন যে যখন আপনার ভাই এর ভালো টাকা পয়সা হবে; তখন সে আর আপনার কথা কিছুতেই শুনবে না।

কে না চায় স্বাধীন থাকতে? একটা নিজের বাড়ি, সচ্ছলতা। হোক না সে ছোট, হোক না সে কুঁড়ে ঘর, নেই কোন বাধা শাসন, যখন খুশী যা ইচ্ছে করো, নিজের ইচ্ছেমতো। ভুল করলে – বড়রা বকাবকি করছে ঠিকই কিন্তু তার মধ্যেও রয়েছে একটা মিষ্টতা, ভালোবাসা। 

তাই সম্পর্ক ভালো করতে গেলে অন্যদের বেঁধে রাখবেন না, অন্যদের স্বাধীনতা কেড়ে নেবেন না।

৭। পারফেক্টনেস খোঁজার চেষ্টা করবেন না

কোন কিছুই নিখুঁত নয়

কোন মানুষই যখন পারফেক্ট নয়, তখন সম্পর্ক কি করে পারফেক্ট হতে পারে? সম্পর্ক তো মানুষে মানুষেই হয়।

No relationship is perfect, ever. There are always some ways, you have to bend, to compromise, to give something up in order to gain something greater.

Sarah Dessen

এই ৭ টি টিপস সঠিক ভাবে ফলো করলে আপনি সব সম্পর্ককে জয় করে নেবেন খুব সহজেই। আপনি এই টিপস গুলো ফলো করে যাদের সম্পর্ক মধুর করে তুলবেন, কয়েক মাস পরে দেখবেন যে তারাও তোমার সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।

এরপরে তাদের সাথে যাদের এইভাবে সম্পর্ক ভালো হয়েছে, সেই লোকজনেরাও সম্পর্ক গড়ে তোলায় এক্সপার্ট হয়ে যাবে।

এই জিনসটা একটা চেন এর মতো। ধীরে ধীরে অনেকেই জেনে যাবে সম্পর্ক মধুর করার কৌশল।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, সবাইকে ভালো রাখুন। চলুন, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে!  

4 thoughts on “সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য ম্যাজিক করার মতো ৭ টি উপায়

      1. আমার মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো করার জন্য আমি কি কি করতে পারি?মাকে কীভাবে বোঝাত পারি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই ।যদি সাহায্য করেন তাহলে উপকৃত থাকব। ধন্যবাদ ।

        1. মায়ের সাথে আপনার কি নিয়ে মতবিরোধ , বা কিসের জন্য মায়ের সাথে সম্পর্ক তিক্ত, সেইসব তো জানা দরকার। ডিটেলস না জেনে সাহায্য করা তো সম্ভব নয়। আপনি 6291157902
          নাম্বারে হয়াতস্যাপ করে জানাতে পারেন। তাহলে আমি আপনাকে কিছু টিপস দিতে পারবো।
          কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট