কি করলে জীবনে সুখী হবো?

জীবনে সুখী হওয়ার উপায়

কি করলে জীবনে সুখী হবো? এটাই কি ভাবছেন? প্রকৃত সুখ কি করে পাবেন, সুখী হওয়ার কিছু টিপস-এইসব কিছু নিয়েই আলোচনা করবো এখানে। তবে কিছু টিপস জানলে বা পড়লেই যে সুখী হয়ে যাবেন এমনটা নয় কিন্তু। আপনাকে সেগুলো প্রয়োগ করতে হবে তবেই আপনি সুখের স্বাদ পাবেন।

কি করলে জীবনে সুখী হবো

প্রকৃত সুখ কোথায় পাওয়া যায়?

আপনি কি প্রকৃত সুখের সন্ধানে? প্রকৃত সুখ কোথায় পাওয়া যায় –এই নিয়ে কি প্রচুর নেট সার্ফিং করেছেন? কিন্তু কোথাও তার সঠিক ঠিকানা খুঁজে পান নি? যে ঠিকানার অস্তিত্ব আপনার হৃদয়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে, তাকে আপনি যতই বাইরে খোঁজাখুঁজি করবেন, ততই সে হৃদয়ের গভীরে হারিয়ে যাবে।

প্রকৃত সুখ এর ঠিকানা জানার জন্য আপনাকে এদিক ওদিক খুঁজতে যেতে হবে না। শুধুমাত্র হাত খানা বাড়িয়ে দিতে হবে, মন দিয়ে দিতে হবে হৃদয়ের ডাক শোনার জন্য।

প্রকৃত সন্তান কোথায় পাওয়া যায়- এই প্রশ্ন যদি আপনাকে করা হয়, আপনি কি বলবেন? নিশ্চয়ই প্রকৃত সন্তান প্রকৃত মায়ের গর্ভ থেকেই জন্ম নেন। প্রকৃত মা বলতে কি বোঝায়? প্রকৃত মা তো সেই যিনি নিজে অন্ধকারে থাকলেও সন্তানকে আলো তে রাখেন; যিনি অভুক্ত থাকলেও সন্তানকে অভুক্তের স্বাদ কখনো পেতে দেন না ; যিনি নিজে কালো এর মধ্যে ডুবে থাকলেও, সন্তানকে সাদার মতো উজ্জ্বল করে তুলতে চান।

দুঃখের কষ্ট কেউ নিতে চায় না, কিন্তু সুখের স্বাদ থেকে কেই বা বঞ্চিত হতে চায়?

দুঃখ কে ভালবাসুন, দুঃখ কে সামলাতে শিখুন। কিন্তু দুঃখে কাবু হয়ে যাবেন না যেন। বেশী ভালোবাসা ও কিন্তু ভালো নয়। বেশী ভালবাসলে আমাদের নিজস্বতা কোথাও একটা বন্দী হয়ে পড়ে, কিম্বা আমাদের নিজস্বতা বাধা পায়। ঠিক সেইরকম দুঃখ কে তততাই ভালবাসুন যতটা ভালোবাসা সেই দুঃখের পাওয়া উচিত। ভালোবাসা এমন জিনিষ যা আপনাকে নদীর জলধারার মতো বইতে সাহায্য করবে। যে কোন অনুভূতি যা আপনারা গতি তে বাধা দেয়, যা আপনাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে দেয় না, সেইসব অনুভূতি গুলো কে বুদ্ধির সাথে সামলাতে হয়।

অন্ধকার কে ঘৃণা করবেন না, বরং যত্ন করবেন। আপনি যত্ন করলেই তো অন্ধকারের গর্ভ থেকে জন্ম নেবে আলো। যা দিয়ে আপনি সুখের চান করতে পারেন।

সুখ মানে কি?

সুখ হল মনের এক অনুভূতি, যে অনুভূতিতে আমাদের আরাম লাগে কিম্বা খুশীর ঢেউ জাগে মনে, যে অনুভূতিতে মন ভালো অনুভব করে, যে অনুভূতিতে কষ্ট গুলো চাপা পড়ে যায়। সুখের সাথেই দুঃখের বাস। কিন্তু যে মানুষ সুখে থাকে তার চোখে দুঃখ ধরা পড়ে না। 

সুখ এর সংজ্ঞা অবস্থা ও পরিবেশের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই সুখ আসলে এক খুবই ভালো অনুভূতি।

সুখ হল এমন এক অবস্থা যে অবস্থায় কোন দুঃখ বা কষ্ট থাকে না।, বা থাকলেও তা অনুভূত হয় না।

মানুষের সুখ কোথায়?

মানুষের সুখ দৃষ্টিভঙ্গিতে। মেচিউরিটি অর্জনের সাথে সাথে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পূর্ণতা পায়। দৃষ্টিভঙ্গি যতই পূর্ণতা পেতে থাকে সুখের সংজ্ঞা বদলাতে থাকে।

কেউ কুঁড়ে ঘরে থেকে দুইবেলা শুধু পেট ভরে খাবার পেলেই সুখের সাগরে নিমজ্জিত হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ বিশাল অট্টালিকা তে থেকে, বিশাল প্রাচুর্য আর অর্থের মধ্যে নিমজ্জিত থাকায় সুখের ঢেউ এর স্পর্শ পায় না।

সুখের ঠিকানা খুঁজছেন? একটা বিশাল বাড়ী যার পাশাপাশি শুধু শুন্যতা বিরজামান, সে যদি ইট, বালি খুঁজতে থাকে, সে কি তা খুঁজে পাবে? হ্যাঁ, অবশ্যই খুঁজে পাবে, যদি সে তার হৃদয় কে অনুভব করতে পারে। আমাদের মন ও অনেক সুখ আর দুঃখ দিয়ে তৈরি। কিন্তু আমাদের মনোযোগ শুধু দুঃখের দিকেই থাকে। আর তাই তো , আমরা দুঃখের মুভি, দুঃখের ঘটনা বেশী আগ্রহের সাথে শুনি। তাইতো প্রতিদিন সকালে আমরা খবরের কাগজে সবার প্রথমে নেগেটিভ ঘটনা গুলোর দিকে চোখ ফেলি আর সেই ঘটনা গুলো সবার আগে অন্যদের জানাই।

আমরাই দুঃখের ঘটনা গুলো কে ছড়িয়ে দিই, আর ভালো ঘটনা গুলোকে চাপা দিয়ে দিই। এইসব দেখে বোঝাই যায়, যে আমরা কতখানি দুঃখ কে পাত্তা দিই। আর সেখানে সুখের ভূমিকা হারিয়ে যায়।

আমরা যদি উল্টোটা করতে পারি, তাহলে আমরা সবাই সুখে তো থাকতে পারবই, এমন কি তার সাথে এক সুন্দর পৃথিবী উপহার হিসেবে পাবো। কিন্তু তা সম্ভব নয়। কারন নানা মুনির নানান চিন্তা। আপনি বা আমি অন্যদের বদলাতে পারবো না ঠিক ই। কিন্তু নিজেদের তো বদলাতে পারবো।

তাই আজ থেকে আর সুখের ঠিকানা খুঁজবেন না। সুখের ঠিকানা তৈরি করুন। দুঃখ সবারেই থাকে। থাক না দুঃখ, তাতে কি হয়েছে? তাকে বেশী পাত্তা দেবেন না, তাহলে সে আপনার মাথায় চড়ে বসবে। বরং সুখ কে পাত্তা দিন। মনের ভেতর সুখ তৈরি করুন। এমন সুখের বাসা তৈরি করুন নিজের শরীর ও মনে যেন পৃথিবীর যে কোন মানুষ আপনার সাথে দুটো কথা বললে সেই সুখের ছোঁয়ার স্বাদ পায়। এইরকম করতে পারলে, সুখ একদিন আপনার মাথায় চড়ে বসবে। তখন দেখবেন পৃথিবীর কোন দুঃখই আপনাকে ছুঁতে পারছে না। সে এক অদ্ভুত রকমের ভালো অনুভূতি। এইরকম অনুভূতিতে পৌছাতে পারলে, আপনি শুধু নিজেকেই না বরং আপনার আশেপাশের মানুষজন কেও ভালো রাখতে পারবেন।

কি করলে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী শান্তি পাওয়া যায়?

বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ভাবে শান্তি পেয়ে থাকি। আমি শান্তি পেয়ে থাকি অন্যদের মোটিভেট করে, ভালো কিছু লিখে, মনের ভেতর থেকে প্রচুর পজিটিভ শক্তি বার করে, সেই শক্তি কে বিশ্ব মাঝারে ছড়িয়ে দিতে।

আপনি কি করলে সবচেয়ে বেশী শান্তি পাবেন তা আপনাকেই খুঁজে বার করতে হবে, যদিও আমি এখানে কিছু টিপস দেবো। কিন্তু আপনাকে দেখে নিতে হবে কোন টিপস টি আপনার পক্ষে কার্যকরী হবে।

কি করলে জীবনে সুখী হবো?

জীবনে সুখী হওয়ার কিছু টিপস তো অবশ্যই আমি দেবো। কিন্তু এইসব টিপস কাজে লাগবে না যতক্ষণ না আপনি মেচিউর হচ্ছেন। মেচিউর হওয়ার পথ টা কিন্তু বড্ড দুর্গম। সেখানে ঝড়, ঝঞ্ঝাট এর সম্মুখীন যদি না হয়ে থাকেন ,তাহলে খুব সহজেই বলা যায় যে আপনি এখনও মেচিউর হন নি। খনি থেকে ধাতু (যেমন সনা,রুপা,ইত্যাদি) বের করে তাকে যেমন প্রচুর তাপ আর আঘাত সহ্য করতে হয় , তবেই সেই ধাতু সুন্দর একটি গহনা তে পরিবর্তিত হয় আর মানুষের শরীরে সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে; ঠিক তেমনি আপনি যত আঘাতের মধ্য দিয়ে যাবেন ততই মেচিউর হতে থাকবেন, বুঝতে পারবেন সুখের গভীরতা, খুঁজে পাবেন সুখের ঠিকানা।

সুখ কে পেতে গেলে দুঃখের মধ্য দিয়েই যেতে হয়। যেমন দুর্গম রাস্তা স্বর্গের মতো সুন্দর ঠিকানায় পৌঁছে দেয়, ঠিক তেমনি দুঃখ, কষ্ট এই সবই তো একজন মানুষ কে সুখের ঠিকানায় পৌঁছে দেয়।

প্রকৃত সুখী মানুষ কে?

প্রকৃত সুখী মানুষ সে যার কোন কিছু তে কোন অভিযোগ নেই, আছে শুধু কৃতজ্ঞতার ভাণ্ডার। প্রকৃত সুখী মানুষ সে যে দুঃখ টাকে সুখে পরিবর্তিত করে নিতে জানে, যে জানে দুঃখ ছাড়া সুখের অস্তিত্ব অনুভব করা অসম্ভব, যে যেকোনো অবস্থার জন্য অন্যকে দায়ী করে না বরং সেখান থেকে কিভাবে শিক্ষা গ্রহন করে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় সেই কথাই ভাবে।

সুখী হওয়ার ১০ টি উপায়

দেখে নেওয়া যাক সুখী থাকার প্রধান ১০ খানা উপায়ঃ

১। অলস মস্তিস্ক শয়তানের কারখানা

কাজ করুন। সবসময় নিজেকে কাজের মধ্যে ডুবিয়ে রাখুন। তবে মনে রাখবেন বিশ্রাম নেওয়াটাও একটা কাজ।

২। অন্যকে বদলানোর চেষ্টা না করে নিজেকে বদলে ফেলুন

অন্যকে বদলানোর কথা নে ভেবে নিজেকে বদলে ফেলুন। আমরা বেশীরভাগ সময়েই অন্যের ব্যবহারে, অন্যের কাজ কর্মে বিরক্ত হয়ে অসুখী হয়ে যায়। অন্যের মুখ থেকে বেরনো কথা আমরা বদলাতে পারি না। কিন্তু আমাদের নিজেদের মুখ থেকে বেরনো কথা গুলো কে অবশ্যই নিয়ন্ত্রন করতে পারি। তাই নিজেকে বদলান।

৩। দুঃখ কে সামলাতে শিখুন, দুঃখে দুমড়ে মোচড়ে যাবেন না

দুঃখ সবারেই থাকে। দুঃখ না থাকলে সুখ অনুভব করাই যাবে না। যদি আপনার মনে হয় যে আপনার জানাচেনা কেউ খুবই সুখী, আর তার কোন দুঃখই নেই; তাহলে জানবেন আপনার এই মনে হওয়াটা ভুল। আসলে কিছু ব্যক্তি দুঃখ কে চাপা দিয়ে সুখ কে দেখাতে পছন্দ করে থাকে। আপনিও তাই করুন। দেখবেন সুখের ভারে দুঃখ চাপা পড়ে গেছে।

৪। দুঃখ থেকে শিক্ষা গ্রহন করুন আর নিজেকে মজবুত করে তুলুন

প্রতিটা দুঃখ বা কষ্ট আমাদের কিছু শেখাতে চায়। আপনাকে তা খুঁজে বার করতে হবে। যে কোন রকমের দুঃখ কষ্ট পেলে, নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করুন – এই দুঃখ আপনাকে কি শেখাতে চেয়েছে? এই দুঃখের তাৎপর্য কি? এইসব প্রশ্নের উত্তর জানার পিপাসা যদি আপনার মধ্যে থাকে, তাহলে অবশ্যই উত্তর পাবেন।

৫। দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলুন

ভালো দেখুন, ভালো শুনুন, ভালো কথা বলুন। এইভাবে দৃষ্টিভঙ্গি টাকে বদলে ফেলুন। সবার খুঁত দেখতে যাবেন না। জানেন তো দোষ গুন এই দুটোই সবার মধ্যে থাকে। হাজার টা দোষ থাকলেও, ভালো করে খুঁজুন, একটা হলেও ভালো গুন পাবেন। আর এর জন্য চাই ভালো দৃষ্টিভঙ্গি।

৬। দুঃখ কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করুন

দুঃখ কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করুন। আর সেই অস্ত্র দিয়ে নেগেটিভ শক্তির বিনাশ করুন।

৭। দুঃখ থেকে সুখের জন্ম দিন

অন্ধকারের গর্ভ থেকেই আলোর জন্ম হয়। রাত্রির গর্ভ থেকে ভোরের জন্ম হয়। ঠিক তেমনভাবেই দুঃখের গর্ভ থেকেই তো সুখের জন্ম হয়। এইসব কিছু তো প্রকৃতির ই নিয়ম। শুধু নিজের ওপর আস্থা রাখুন আর ভরসা রাখুন। অতীত এ পড়ে না থেকে সামনের দিকে এগিয়ে চলুন।

৮। সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস রাখুন

ভগবানে বিশ্বাস করেন কিনা সেইসব তর্কের মধ্যে যাওয়ার দরকারই নেই। কারন সৃষ্টিকর্তা কে যারা অবিশ্বাস করে তারা অজ্ঞতার সমুদ্রে নিমজ্জিত বলেই আমার ধারনা। সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস রাখুন। এতে আপনারই লাভ। আপনি প্রচুর পজিটিভ শক্তি পাবেন এতে।

৯। যে কোন অবস্থাতে নিজেকে ভালবাসুন

নিজেকে ভালোবাসা কে স্বার্থপর বলে না। বরং উলটো। আপনি যদি নিজের খেয়াল রাখেন, যত্ন নেন, তাহলে আপনি আপনার বাড়ীর লোকের কাজ অনেক খানিই কমিয়ে দিলেন। এর ফলে সমাজের ও অনেক টা কাজ কমে যায়। আর তাতে সমাজ উপকৃত হয়ে থাকে। কারন সমাজ তখন অন্য দুঃস্থ মানুষদের দেখভাল এর জন্য সময় দিতে পারবে।

১০। কিছুক্ষণের জন্য হলেও একা থেকে আত্ম-বিশ্লেষণ করুন

কিছু মিনিট হলেও একা থাকতে হয়। একা থাকলে নিজেকে চেনা যায়। যেমন আয়নার সামনে দাঁড়ালে আপনি আপনার মুখ খানা দেখতে পান; ঠিক তেমনি একা থাকলে আপনি আপনার হৃদয় কে দেখতে পাবেন, মন কে দেখতে পাবেন।

উপসংহার

আশা করি এরপর সুখের স্পর্শ পেতে আপনার অসুবিধে হবে না। ইচ্ছে রাখুন, উপায় অবশ্যই হবে। সুখে না থাকতে পারলেও অন্ততপক্ষে সুখে থাকার অভিনয় করুন। দেখবেন ওই অভিনয় ই কখন যেন আপনাকে সুখ দিয়ে ঘিরে রেখেছে, আপনি তা টের ই পাবেন না।

আশা করি আমি বোঝাতে পেরেছি যে কি করলে জীবনে সুখী হবেন।

বন্ধুরা “কি করলে জীবনে সুখী হবো” –এই পোস্ট টি কেমন লাগল জানাবেন। এইরকম মোটিভেশনাল কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে লিখে অবশ্যই জানাবেন। প্রানপনে চেষ্টা করবো আপনাদের মোটিভেট করতে। কোন বাক্যে কোন বানানে ভুল থাকলে মার্জনা করবেন। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সকলকে ভালো রাখবেন। চলুন, সবাই মিলে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি যার প্রতিটি কোনা সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে ভরে উঠবে।

2 thoughts on “কি করলে জীবনে সুখী হবো?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট