ডিয়ার এক্স – এক ছোট গল্প

ডিয়ার এক্স

হ্যালো পাঠক / পাঠিকাগণ! আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজ আপনাদের কে এক গল্প বলতে চলেছি। প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদ, স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদ আজ বড্ড বেশী পরিমানে হ্রদয় কে ব্যথিত করে। এই সমস্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। তাই “ডিয়ার এক্স” কে নিয়ে এমন এক ছোট গল্প উপস্থাপনা করলাম যা থেকে সমাজ যেন একটুখানি হলেও উপকৃত হয়।

ডিয়ার এক্স - এক ছোট গল্প

গল্পের পটভূমিকা

একটি মেয়ে বিবাহের কয়েক বছর পর তার স্বামীর সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে স্বামী এর সাথে ডিভোর্সের আবেদন জানায়। ছেলেটি কিছুই বুঝতে না পেরে হতচকিত হয়ে যায়। কারন মেয়েটিই একসময় ছেলেটিকে ভালবেসে বিয়ের প্রোপজ্যাল দিয়েছিল।

সেই মুহূর্তের কিছু ভাবনা

ছেলেটি ভাবতে থাকে- “এ কি করে সম্ভব? বাচ্চার কাছে কি উত্তর দেবো। এই নিষ্ঠুর আবেদন করার আগে, একবারের জন্যও ওর মনে বাচ্চার ব্যাপারে চিন্তা হল না? সময়ের সাথে সাথে সব বদলে যায় জানতাম। কিন্তু তখন তো বুঝতে পারি নি যে সেইদিনের ভালোবাসা যেদিন তুমি আমাকে বিয়ে করার জন্য চঞ্চল হয়ে উঠেছিলে তা আসলে খাদ ছিল। ভাবি নি খাদের কথা। ভেবেছিলাম –সত্যিকারের সোনা ছিলে। হতে পারে আমার কাছে যা খাদ রূপে গন্য হচ্ছে আজ, সেই খাদই অন্য কারো কাছে সোনা রূপে গন্য হবে।“

তাদের মধ্যেকার কিছু কথোপকথন

রিজু প্রশ্ন করে তার স্ত্রী কে-“ আমার কি দোষ বল? আমি কি তোমার সাথে কখনো বাজে ব্যবহার করেছি, বা তুমি যা চেয়েছ তা দিই নি? তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দাও। একটা সুযোগ দাও সেই ভুল শুধরে নেওয়ার।“

রিয়া উত্তরে জানিয়ে দেয়-“ এটাই আমার ফাইনাল সিদ্ধান্ত। তোমার যা ইচ্ছে করে নাও। আমি কাল এই বাড়ী ছেড়ে রিক কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ব। কিছু মাস পরে ডিভোর্সের জন্য এপ্লায় করবো। তখন দয়া করে সাইন টা করে দিও”।

রিজু ভাবে- “এ কেমন অন্ধকার, যা রাত্রির চেয়েও কাল। তাহলে আর কি আগের মতো সকাল কোনদিনই হবে না?“

ছেলেরা বেশী কিছু বলতে পারে না। মনের কথা মনেই রেখে দেয়। রিজু যদি এমনটা করতো রিয়ার সাথে রিয়া হয়তো চীৎকার করে আশে পাশের লোকজন কে জানিয়ে দিত। কিন্তু না, রিজু এমন টা করে নি। রিজু নীরবে উত্তর দিল-“ ঠিক আছে তোমার যেটা ভালো মনে হচ্ছে সেটাই করো। তবে রিক কে ছেড়ে থাকাটা আমার আরও কষ্ট হবে। পারলে মাঝে মাঝে রিক কে পাঠিয়ে দিও তোমার এই পুরানো বাড়ীতে।“

রিয়া –“ এই বাড়ী আর আমার বাড়ী নয়। আর রিকের ও নয়। রিক এর ইচ্ছে হলে আসবে, না ইচ্ছে হলে আসবে না, সেটা ওর ব্যাপার।“ বলেই রিয়া তার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আর রিজু হলঘরে বসে সারা রাত কাঁদতে থাকে। এমন কান্না সে আগে কখনো কাঁদে নি। নীরবের কান্নার গভীরতা যেন অনেক বেশী।

পরের দিন সকালেই ওই তিনটে মানুষ ২ঃ১ ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। তার কয়েক মাস পরে রিজু রিয়া কে কোর্টে দেখেছিল বেশ কয়েকবার । এছাড়া আর কোনদিন ওদের আর সাক্ষাৎ হয় নি। বিধাতার কি নিষ্ঠুর পরিহাস! এ এমন এক ভুল যা শুধরে নেওয়া যায় না, যা নাকি ক্ষমা করা যায় না। এ এমন এক ভাঙ্গন যা জোড়া লাগা যায় না। এমন কোন ফেবিকল কোথাও কি নেই যা ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক কে জুড়তে পারে? বেশ কয়েক দিন না ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে রিজু খুবই ক্লান্ত। তার চোখে মুখে সেই ছাপ পরিষ্কার ফুটে ওঠে।

বেশ কয়েক বছর পর এই ক্ষত রিজুর থেকে বিদায় নিয়েছে। কবে সেই ঘা শুকিয়ে গিয়ে, তার চিহ্নটুকু রাখে নি রিজু তা বুঝতেই পারি নি। একদিন হটাত অফিসে কাজের চাপ কম হওয়াতে রিজু অনুভব করলো –কই , সেই আঘাত গুলো তো আর নেই। মনের ভেতরে ঢুকে ,মন কে অতীতের চিন্তা স্মরন করিয়ে রিজু তার নিজের মনের পরীক্ষা নিচ্ছিল- “দেখি তো , মন একটু হলেও কাঁদে কিনা- পুরানো সব স্মৃতি স্মরন করে”।

অনেক কিছু স্মরনে এল-কোন কারন ছাড়াই তাদের মধ্যেকার ঝগড়া। রিক কে ওর সাথে মিশতে না দেওয়া। রিকের কাছে রিজুর সম্পর্কে বাজে কথা বলা। রিজুর বাবা মা এর সাথে বাজে ব্যবহার। শেষে- রিজুর শাসন রিয়ার প্রতি। ব্যাস তার দুদিন পরেই সম্পর্কের ইতি।

রিজু বিড় বিড় করে বলতে থাকে- “কই, চোখে জল তো এল না। কোন ব্যথাও অনুভূত হল না। আজ আমি সত্যিই সবচেয়ে বড় যোদ্ধা। আজ আমি বিজয়ী। সাব্বাস! রিজু, তুমি সব পারবে। আরও এগিয়ে চল জীবনে। অন্যের উপকারে মেতে ওঠো। ওর চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছুতে নেই।“ রিজু ভাবতে থাকল- আজ এই খুশীর দিনে রিক এর মা কে একটা চিঠি লিখা যাক।

রিজুর লিখা চিঠি রিয়া কে  

ডিয়ার এক্স

শরতের আগমনে শিউলি ফুলের আসার কথা কিন্তু শিউলি ফুলের জায়গায় এক মুষলধারে বৃষ্টি এসে মন কে যখন হটাত করে ভিজিয়ে দেয়, সেই মুহূর্তে চিঠি লিখছি তোমাকে। মনের মধ্যে প্রকৃতির বৃষ্টির ফোঁটা ঢুকেছে ঠিকই, কিন্তু তা আমার মন কে চোখের জলে ভেজাতে পারে নি, বরং আরাম অনুভব করিয়েছে, কিভাবে তা সম্ভব হল সেই নিয়েই তোমাকে লিখছি।

যখন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে, মনে পড়ে তোমার? আজ কতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে। আশা করি তুমি তোমার নতুন স্বামী কে নিয়ে সুখেই আছো। সেদিন আমার বড্ড রাগ হয়েছিল তোমার ওপর। জমেছিল একরাশ অভিমান। আজ জানিনা সেসব কিছুই নেই।

সত্যি সময় যে সব কিছু কে বদলে দেয়, আমার চেয়ে ভালো কে আর জানে? সেদিন তোমায় কত বুঝিয়েছিলাম। আমি তোমার জন্য দুই চোখের পাতা এক করতে পারি নি সারা রাত। কি করে এক করবো, সেদিন চক্ষু তে হয়েছিল মুষলধারে বৃষ্টি। এমন বৃষ্টি বোন মারা যাওয়ার সময়ও হয় নি। আজ মনে হয়- কি বোকা ছিলাম আমি তখন। ঠিক বোকা নয়, মেচিউর ছিলাম না।

আজ আমি তোমাকে আমার মেচিউরিটি অর্জনের গল্প শোনাব। গল্প টা পড় কিন্তু। এ গল্প এমন এক গল্প যা প্রতিটি মানুষ কে তার প্রেমিক বা প্রেমিকার বিচ্ছেদ এর যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করবে, যা প্রত্যেক টি প্রেমিক বা প্রেমিকা কে মনে শক্তি জোগাবে। যদি তুমি ভালো না আছো, তাহলে পড়ো, আর যদি তুমি ভালো আছো তাও পড়ো। কেননা সেক্ষেত্রে তুমি অন্যদের সাহায্য করতে পারবে যদি এই ব্যাপারে তোমার কিছু জানা থাকে।

তবে একথা অস্বীকার করা যায় না যে আমার এই আমূল পরিবর্তনের জন্য তুমিই দায়ী। আর এইজন্য আমি তোমার ওপর সারা জীবন কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো। এখন মনে হয় ভাগ্যিস তুমি কষ্ট দিয়েছিলে!

ভাগ্যিস আমি সেদিন সেই কষ্টকে গ্রহন করেছিলাম। গর্ব বোধ হয় এই ভেবে যে আমি কাউকে কষ্ট দিই নি, আমি কষ্ট গ্রহন করেছি। দিয়েছি স্বাধীনতা। যাকে ভালবাসার শিকলে বন্দী করেছিলাম, সে শিকল ছেড়ে যেতে চেয়েছিল বলে তাকে মুক্ত করে দিয়েছিলাম।

যেদিন তুমি শিকল ছেড়ে পালিয়ে গেলে

কেঁদেছি অনেক সেদিন। শুধু সৃষ্টিকর্তার কাছে এই টুকুই জানতে চেয়েছিলাম- যখন সে পালিয়েই যাবে, তখন সে এসেছিল কেন আমার কাছে? জানো সেদিন প্রথম সেই শক্তি কে অনুভব করেছিলাম। যিনি আমায় বলেছিলেন-“ যে আসে ,তাকে তো যেতেই হয়। কখনো আগে কখনো পরে। শুধু সময়ের পার্থক্য।“ যিনি আমায় বলেছিলেন-“ ওঠো, এই ব্যথা দিয়ে শরীর আর মন কে শক্ত করো।“ তুমি তো জানো ঈশ্বর বা আল্লাহ তে আমার কোন বিশ্বাস ছিল না। কিন্তু সেদিন থেকে আমি বিশ্বাস করি। অনুভব করি। সেদিন রাত্রে আমি শুধু কেঁদেছি আর শুনেছি সেই সৃষ্টিকর্তার কথা। উনি শুধু বলেছেন।

এখন মনে হয় সমস্ত সমস্যা যার সমাধান বিজ্ঞানের কাছে নেই, যার সমাধান ডক্টরদের কাছে নেই; সেইসব কিছু সমস্যার সমাধান সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস এ আছে। উনি আমায় যা যা বলেছেন তারই কিছু মুল্যবান কথা তোমার সাথে শেয়ার করছি। জীবনের উত্থান পতনে এই কথাগুলো তোমাকে ভীষণভাবে শক্তি দেবে।

উনি বলেছিলেন-“ তোমার মনের ব্যথাগুলো কে হারিয়ে যেতে দিও না।“

আমি বলেছিলাম-“ কিন্তু ওই ব্যথা গুলোই তো আমাকে কষ্ট দিচ্ছে, আমি সব ব্যথা কে হারাতে চাই”।

উনি বলেছিলেন-“ এমন ভুল করো না। ওই ব্যথা গুলোকে অস্ত্র বানাও।“

আমি- “তা কি করে সম্ভব? আমার এখন কিচ্ছু ভালো লাগছে না। আমাকে বিরক্ত করো না।“

উনি-“ তুমি কষ্ট গ্রহন করেছো, সেই কষ্ট দিয়ে অস্ত্র বানাও। মনের অস্ত্র তো দুঃখ, কষ্ট দিয়ে বানালেই ধার বেশী পাওয়া যায়। ইচ্ছে করলেই উপায় হয়। লিখো, পাতার পর পাতা লিখো। তোমার লিখা পড়ে যেন অনেক মানুষের কষ্ট লাঘব হয়। লিখার ওপর দিয়ে ঝেড়ে দাও তোমার দুঃখ, কষ্ট। লিখা দেখবে অস্ত্র হয়ে উঠবে।“

তারপর দিন থেকেই আমার লিখার জীবন শুরু। আজ আমার লিখা গল্প দেশে বিদেশে সব মানুষেরা পড়ে। আজ আমি অনেক মানুষ কে আনন্দের পথ দেখাই। জীবন সেদিন থেকে এক অদ্ভুতভাবে টারনিং নিয়ে নিয়েছে।

জানো, আমি এখনও বিবাহ করি নি। বিবাহ করা এখন আমার কাছে তুচ্ছ ব্যাপার। জীবন কে অনেক বড় দৃষ্টি তে দেখতে শিখেছি। এখন মনে হয় আমাদের ভালোবাসা আসলে খুব সঙ্কীর্ণ ছিল। যা ভাঙ্গার ,তা একদিন না একদিন ভাঙতই, এতে তোমার কোন দোষ নেই।

আজ আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে তাদের জন্য মঙ্গল প্রার্থনা করি, যারা আমাকে ঘৃণা করে কিম্বা কষ্ট দেয়। কারন সেই কষ্ট বা ঘৃণা দিয়েই তো শক্তিশালী অস্ত্র বানান যায়। আর এই অস্ত্রই তো আমার মনে এতো শক্তি জোগান দেয়।

তুমি আমার জীবন থেকে চলে যাওয়ার পর আমি ভাবতাম সময় কি করে কাটাবো। কিন্তু দেখো- এখন আমি অনেক ব্যস্ত হয়ে গেছি। হয়তো আর কখনোই তোমাকে চিঠি লিখার সময় পাবো না। কেননা এখন আমি তাদের কে সারিয়ে তুলতে ব্যস্ত থাকি, যারা নিজেদের কে অভাগী ভেবে কষ্ট পায়; যারা আমার মতো করে কষ্ট টাকে অস্ত্র বানাতে পারে না।

ভাবছি একটা চেম্বার খুলবো। যার নামে রাখবো –“বিবাহ বিচ্ছেদ যন্ত্রণার মুক্তি কক্ষ”। ভাবছি অনলাইনেই ট্রিটমেন্ট করবো যাতে সারা বিশ্বের মানুষের ব্যথা দূর করতে পারি। আবার অফিস থেকে অনসাইট যাওয়ার আপ্রান চেষ্টা করছি। এই সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে আর কোনদিন তোমাকে লিখার সময় পাবো না।

তবে তোমাকে ভুলেও যাবো না। এ আমার দুর্বলতা নয়। এ আমার শক্তি। তোমার জন্য আজ আমি এতো শক্তিশালী অস্ত্রের মালিক। তুমি সুখে সংসার করো। তবে জীবনের পথে চলতে চলতে যদি এমন কারোর সন্ধান পেয়ে থাকো যে নিজেকে বিবাহ বিচ্ছেদ এর যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করতে পারছে না, দিন রাত পাগলের মতো করে সময় কাটাচ্ছে, তাহলে তাকে বল আমার সাথে যোগাযোগ করতে। আশা করি তুমি যখন এইরকম কারো সাথে আমাকে যোগাযোগ করিয়ে দেবে, ততদিনে আমি বিশেষজ্ঞ হয়ে যাবো এই ট্রিটমেন্ট এ। ভালো থেকো সপরিবারে। জীবনে জয়ী হয়ে ওঠো। “

ইতি- তোমার এক্স

আশা করি গল্প টি আপনাদের ভালো লেগেছে। তবে এই গল্পে যেমন রিজু খুবই ভালো, অনেক বিবাহ বিচ্ছেদ এ দেখা যায় মেয়েরা খারাপ না। ছেলেরাই বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন আনে। এই গল্পে ছেলে টিকে ভালো দেখিয়েছি মানে এই নয় যে ছেলেরা সব সময়ই ভালো। এই গল্পের ঠিক উলটো টাও হয়ে থাকে। তাই গল্প টি ছেলে-মেয়ে হিসেবে বিচার না করার অনুরোধ রইল। এইভাবে দেখতে পারেন- একজন কষ্ট গ্রহন কারী, আর অন্যজন কষ্ট দান কারী; একজন মানিয়ে নিতে জানে আর অন্যজন তা জানে না। যদি গল্পে ব্যবহার করা নাম গুলো কারো সত্যিকারের জীবনে ম্যাচ করে যায়, তাহলে তা একেবারেই অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয়।

“ডিয়ার এক্স” এই ছোট গল্প টি কেমন লাগল তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন। সবাইকে ভালো রাখবেন। চলুন সবাই মিলে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি, যার প্রতিটি কোনা সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে ভরে উঠবে।

3 thoughts on “ডিয়ার এক্স – এক ছোট গল্প

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট