নেগেটিভ এনার্জি দূর করার সহজ উপায় কি?

নেগেটিভ চিন্তা থেকে মুক্ত

আমি, আপনি প্রত্যেকেই শক্তির এক রূপ মাত্র। যেমন আপনি বিদ্যুৎ শক্তি, যান্ত্রিক শক্তি সম্পর্কে অবগত; ঠিক সেইরকমেই আমাদের সকলের প্রানশক্তি সম্পর্কে অবগত হওয়া উচিৎ। নেগেটিভ এনার্জি আর পজিটিভ এনার্জি এর মিশ্রনেই তো তৈরি হয় প্রানশক্তি।

আমরা সকলেই প্রানশক্তির এক উদাহরণ।

নেগেটিভ এনার্জি কি

মা পৃথিবী এনার্জির ভান্ডার। পৃথিবী একটি রিজার্ভার এর কাজ করে। যখন কোথাও এনার্জির দরকার হয়, পৃথিবী সেখানে এনার্জি বিকিরন করতে থাকে।

আবার পৃথিবীর এনার্জি কম হয়ে গেলে, পৃথিবী তার সদস্যদের থেকে এনার্জি নিয়ে নেয়। এনার্জিদের মধ্যে এই খেলা চলতে থাকে।

আলো অন্ধকার যেমন বিপরীত শব্দ, ঠিক তেমনি নেগেটিভ এবং পজিটিভ দুই বিপরীত শব্দ।

অন্ধকারের অস্ত্বিত্ব না থাকলে আলোর মাহাত্ম্য বুঝবেন কি করে? কোন খারাপ ব্যক্তির কন্টাক্টে না থাকলে ভালো ব্যক্তির গুরুত্ব বুঝবেন কি করে?

একই কয়েন এর এক পিঠে নেগেটিভ এনার্জি আর অন্য পিঠে পজিটিভ এনার্জি।

পজিটিভ এনার্জি পেলে মানুষ যেমন ভালো গঠনমূলক কিছু কাজ করে থাকে; সেইরকম নেগেটিভ এনার্জি মানুষকে দিয়ে ধ্বংসাত্মক কাজ করায়।

 নেগেটিভ এনার্জি এর অস্তিত্ব

নেগেটিভ এনার্জি এবং পজিটিভ এনার্জি – এই দুই শক্তির অস্তিত্বই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

পজিটিভ এনার্জি যদি থাকে, নেগেটিভ এনার্জিও থাকবে। কোন এনার্জিনই একদম নির্মূল করা সম্ভব নয়।

পৃথিবী যদি আপনাকে বলে- “আমার কাছে পজিটিভ এবং নেগেটিভ দুই এনার্জিই আছে, তোমাদের যখন যে এনার্জি দরকার, তখন সেই এনার্জি আমার কাছে থেকে চেয়ে নিও।“

আপনি কোন এনার্জি চাইবেন? আমরা সকলেই কী পজিটিভ এনার্জি চাইবো?

কিছু লোক যারা অল্পতেই রেগে যায়, যারা খারাপ কর্মে লিপ্ত থাকে; তারা তো রাগ, ক্রোধ এর মাধ্যমে নেগেটিভ এনার্জিকেই আহ্বান করে থাকে।

নেগেটিভ এনার্জি এর ও কি প্রয়োজনীয়তা আছে?

অন্ধকারের কি প্রয়োজনীয়তা আছে? নিশ্চয় আছে।

সূর্য আর পৃথিবী যদি স্থির থাকে; তাহলেই তো পৃথিবীর এক পৃষ্ঠে সবসময় আলো থাকবে, আর অন্য পৃষ্ঠে সব সময় অন্ধকার থাকবে।

আর এই ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন থাকবে না। আর পরিবর্তনই তো জীবন।

দুষ্টের দমন করতে হলে আপনাকে একটু হলেও রুঢ় হতেই হবে।

জীবনের কিছু কিছু পরিস্থিতিতে আমাদের কখনো কখনো নেগেটিভ এনার্জির প্রয়োজন পড়ে।

যে লোকটি প্রত্যহ ছাগল কেটে মাংস বিক্রি করে জীবন অতিবাহিত করে; সেই লোকটির মধ্যে নেগেটিভ এনার্জি না থাকলে সে এই কাজ করতেই পারবে না।

পরিবার কে ভালো রাখার জন্য, তার এই নেগেটিভ এনার্জির প্রয়োজন পড়ে।

কখনো কখনো পজিটিভ কিছু কাজ করার জন্য নেগেটিভ এনার্জির প্রয়োজন পড়ে।

যেমন রাতের চাঁদকে দেখার জন্য অন্ধকারের প্রয়োজন পড়ে কিংবা ভালোভাবে ঘুমানোর জন্য ঘরটিকে অন্ধকার করতে হয়; ঠিক তেমনি পুরো এলাকার মানুষকে বিপদমুক্ত করতে দুষ্ট লোকটিকে দমন করতে হয়। আর সেই দুষ্ট লোকটিকে দমন করতে নেগেটিভ এনার্জির প্রয়োজন পড়ে।

নেগেটিভ এনার্জি কখন ক্ষতিকর

যখন কোন নেগেটিভ এনার্জি দিয়ে পজিটিভ কর্ম সম্পন্ন হয়, তখন সেই নেগেটিভ এনার্জি ঠিক আছে।

কিন্তু যদি আপনার নেগেটিভ এনার্জি ভালো মানুষদের ক্ষতি ডেকে আনে কিংবা আপনার নিজেরেই ক্ষতি ডেকে আনে বা আপনাকে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়; আপনাকে দিয়ে অসৎ কর্ম সাধন করায়, তখন এই নেগেটিভ এনার্জি দূর করতেই হয়।

বেশীরভাগ সময়ে আমাদের মনে নেগেটিভ চিন্তা চলতে থাকে যাকে আমরা দুশ্চিন্তা বলে থাকি। যেমন চিন্তা তেমন কর্ম।

চিন্তা যদি শুদ্ধ হয়, কর্মও শুদ্ধ হবে। তাই আমাদের প্রত্যেকের মনের মধ্যে চলতে থাকা চিন্তাগুলোর দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা উচিৎ।

এই নেগেটিভ চিন্তাগুলোই কিন্তু নেগেটিভ বা ক্ষতিকর কাজের বীজ বপন করে থাকে। যেমন ডঃ এ পি জে আব্দুল কালাম বলেছেনঃ

Where there is righteousness in the heart,

There is beauty in the character.

When there is beauty in the character,

There is harmony in the home.

When there is harmony in the home,

There is an order in the nation.

When there is an order in the nation,

There is peace in the world.

By Dr. A.P.J Abdul Kalam

নেগেটিভ এনার্জি দূর করার উপায়

আমাদের হৃদয় রাইট হবে তখনই যখন আমরা নেগেটিভ চিন্তা দূর করে পজিটিভ ভাবতে পারবো। নেগেটিভ চিন্তা দূর করতে পারলে নেগেটিভ এনার্জিও দূর হয়ে যাবে। আর এই ৫ টি উপায়ে আমরা নেগেটিভ চিন্তা দূর করতে পারবো-

১। পজিটিভ কিছু কাজ করুন আর নেগেটিভ এনার্জি থেকে দূরে থাকুন

কোন কাজই খারাপ নয় ততোক্ষণ যতক্ষণ ঐ কাজ কারো ক্ষতি করছে না। কাজের কোন ছোট বা বড় হয় না। আপনি যদি আপনার পরিবেশকে পরিষ্কার রাখেন, মনে রাখবেন সেটাও একটা বড় কাজ।

আপনি যদি আপনার প্রতিবেশীর সাহায্যের প্রয়োজন হলেই ছুটে যান কিংবা কিছু বাচ্চাদের যাদের বাবা মা এর সামর্থ্য নেই টাকা দিয়ে টিচার রাখার, সেইসব বাচ্চাদের পড়ান, তাহলে জানবেন আপনি পজিটিভ কাজের মধ্যেই আছেন।

সবার প্রথমে প্রতিটি নাগরিকের উচিৎ দেশ বা রাজ্যের সেবা না করে নিজের নিজের পরিবার কে সুস্থ আর সুখী রাখা, আর এর জন্য যা যা কাজ করা দরকার সেইসব কাজ আগে করা উচিৎ।

আপনি যদি আপনার পরিবারকে কাঁদিয়ে দেশের জন্য কিছু ভালো কাজ করেন, সেই ভালো কাজের মধ্যে কোন মাহাত্ম্য থাকে না।

তাই নিজ পরিবারের জন্য কিছু পজিটিভ কাজ করুন। আমরা সকলেই যদি নিজ নিজ পরিবারকে পজিটিভ চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করে প্রতিটি পরিবারে শান্তি নিয়ে আসতে পারি, তাহলে প্রতিটি জিলা সুখী হবে।

প্রতিটি জিলা সুখী হলে, প্রতিটি রাজ্য সুখী হবে। আর প্রতিটি রাজ্য সুখী হলে, দেশ নিজে থেকেই সুখী হবে। আপনার দেশকে সুখী করার জন্য আলাদা করে কিছু করতে হবে না।

২। ব্যস্ততা

ব্যস্ততা সবচে বড় ওষুধ। কাজের মধ্যে ডুবে থাকলে, মনও ঐ কাজকে নিয়ে ভাবতে থাকে। এর ফলে মন অন্য কিছু বাজে চিন্তা করার কথা ভুলে যায়।

আপনি যখন ব্যস্ত থাকেন না, মনের মধ্যে নানান বাজে চিন্তা আশ্রয় নেয়। কোন কিছুই যেমন একদম শুন্য থাকতে পারে না, শুন্য হলেই সেখানে বাতাস প্রবেশ করে, ঠিক সেইরকম মন শুন্য হলেই মনের মধ্যে বাজে চিন্তা আসে।

আপনি যদি একটা বালতি কে একটা জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রেখে দেন, বেশ কয়েক মাস পরে আপনি দেখবেন যে ঐ বালতিতে প্রচুর আবর্জনা জমে গেছে, কোন ভালো জিনিষ আপনি দেখতে পাবেন না।

কিন্তু আপনি যদি ঐ বালতিটিকে প্রত্যহ কোন না কোন কাজে লাগান, দেখবেন বালতিটি কয়েক বছর ব্যবহারের পর ক্ষয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বালতিটি পরিষ্কারই আছে।

৩। ডায়েরি লিখা

নিয়মিত ডায়েরি লিখার সময় না পেলেও অন্ততপক্ষে যখন আপনি ফ্রি থাকবেন, তখন আপনি ডায়েরি লিখবেন। আপনার মনের মধ্যে কোন নেগেটিভ চিন্তা এলে আপনি ঠিক তার উলটো মানে পজিটিভ চিন্তা গুলো ডায়েরি তে লিখবেন।

আর এই পজিটিভ চিন্তাগুলো জোরে জোরে পড়বেন ,একলা একা এক রুমে।

ডায়রি লিখন
ডায়রি

৪। মনের মধ্যে একটা কাল্পনিক ডাস্টবিন তৈরি করুন

মনের মধ্যে একটা কাল্পনিক ডাস্টবিন তৈরি করে রাখুন। যখনই নেগেটিভ চিন্তা আসবে, সেইসব নেগেটিভ চিন্তাগুলোকে মনের আবর্জনা ভেবে ঐ ডাস্টবিনে ফেলে দিন। আর জানেন তো- যে আবর্জনা আপনি ডাস্টবিনে ফেলেছেন সেই আবর্জনা কখনো কুড়োতে নেই।

ডাস্টবিন ছুঁলেই আমরা সাথে সাথে হাত ধুই, তাই না? ঠিক সেইরকম, আপনি যদি কখনো ভুল করে ডাস্টবিনে ফেলা আবর্জনা মনের মধ্যে আবার আশ্রয় দিয়েও দেন, সাথে সাথে মনকে চান করাবেন।

কিন্তু এখন প্রশ্ন –মনকে কিভাবে চান করাবেন? কেন, যেভাবে আপনি মনের মধ্যে ডাস্টবিন তৈরি করেছেন। ঠিক সেইভাবে মানে কল্পনাতে মনকে গঙ্গার জলে চান করাবেন আর ভাববেন আর কক্ষনো আপনি ডাস্টবিনে হাত দেবেন না।

আর ডাস্টবিনে হাত না দিলে, ঐ একই বাজে চিন্তা যা আপনি একবার পরিত্যাগ করেছেন তা আবার আপনার মধ্যে কিছুতেই আসতে পারে না।  

৫। ঈশ্বরের কাছে নিবেদন (প্রার্থনা)

শুধু চান করে শরীর পবিত্র করে ঈশ্বরকে ডাকলেই হয় না, শরীর পবিত্র করার আগে, মন পবিত্র করা বেশী দরকার। তাই আগে মন কে চান করান তারপরে শরীরকে চান করান।

শুদ্ধ মন আর শুদ্ধ শরীর নিয়ে ঈশ্বরের কাছে বসে এটা বলুন –“ হে প্রভু- সঠিক পথে,সৎ পথে নিয়ে চলুন, আমায় পথ দেখান।“ 

নিবেদন
প্রার্থনা

৬। ভালো পজিটিভ চিন্তা মুলক বই পড়ুন 

যখন আপনি ফ্রী থাকবেন, তখন সেই সময়ে আপনি ভালো কিছু বই পড়ুন। বই পড়তে মন না চাইলে, মটিভেশনাল ভিডিও দেখুন বা মটিভেশনাল ব্লগ পড়ুন।

মাত্র এই ৬ টি উপায় ফলো করতে পারলেই দেখবেন জীবন কেমন বদলে গেছে।

নেগেটিভ চিন্তা দূর হওয়ার সাথে সাথে মনের মধ্যে শান্তিও এসেছে, আরও দেখবেন যে শুধু আপনি একা নন, আপনার চারপাশের মানুষ আপনার সংস্পর্শে এসে তারাও কেমন একটা শান্তি অনুভব করছে।

ধীরে ধীরে আপনি বুঝতে পারবেন যে –আপনার চারপাশ থেকে পজিটিভ এনার্জি বিকিরিত হচ্ছে। আর সেই পজিটিভ এনার্জিতে আপনার বাড়ীর অন্য সদস্যরাও এনারজাইজড হচ্ছে। 

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, সবাইকে ভালো রাখুন। চলুন, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে!  

One thought on “নেগেটিভ এনার্জি দূর করার সহজ উপায় কি?

Leave a Reply to Md Firan Mondal Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট