পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা [ For Class 4,5,6, and 7]

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা টি বাচ্চা থেকে শুরু করে ছোট বড় সকলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রচনা টি পাঠ্য বিষয়ে যেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সেইরকমই গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তোমাদের –আমাদের সকলের কাজের মধ্যে। আমি এখানে পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা টি ছোট বড় সবার জন্যই ফুটিয়ে তুলবো। কোন ক্লাসে কতোটা লিখতে হবে সেইসব ও বলব রচনাটির শেষে।

তাহলে শুরু করা যাক রচনা টি।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

ভূমিকা

যার মধ্যে আমরা বাস করি, তাই পরিবেশ। যা কিছুর অস্তিত্ব বিরাজমান আমাদের চারপাশে তাই পরিবেশ। যেহেতু পরিবেশের মধ্যেই আমাদের বসবাস, তাই পরিবেশের প্রতি আমাদের কিছু দায়িত্ত্ব ও কর্তব্যও আছে। পরিবেশ ভালো না থাকলে, আমরা কেউই ভালো থাকবো না। পরিবেশ যেন আমাদের বেঁচে থাকার আধার।

পরিবেশ দূষণ বলতে কি বোঝায়?

যখন সবে সবে মানুষ সভ্যতার বুকে পা রেখেছিল, সভ্যতার সেই শুরুতে চারিদিক ছিল ঘন সবুজ। সবুজে ঘেরা গাছ-গাছালির মধ্যে যেন কতিপয় মানুষ। ছিল এক নিস্তব্ধতা চারিদিকে। ছিল না কোন যন্ত্র যা দিয়ে গোটা পরিবেশ কে কাঁপিয়ে তুলবে। ছিল না প্লাস্টিকের ব্যবহার, যা চারিপাশে ছড়িয়ে বিগড়ে দেবে সভ্যতার আসল চেহারা।

বর্তমানে প্রযুক্তিবিদ্যা উন্নতির সাথে সাথে নতুন নতুন বাজি, বিভিন্ন রকমের প্লাস্টিকের জিনিষের ব্যবহার, বিভিন্ন শিল্প থেকে নির্গত Byproduct সঠিক ভাবে ব্যবহার না করার ফলেই পরিবেশের চেহারায় মলিনতার ছাপ পড়েছে।

পরিবেশ এর আসল রুপ কে নানান ভাবে বদলে ফেলাকেই পরিবেশ দূষণ বলে। বাতাস আর মাটি কে নানান আবর্জনা দিয়ে আক্রমন করাকেই পরিবেশ দূষণ বলে।

পরিবেশ দূষণ কয় প্রকার ও কি কি?

মাটি, বাতাস ,জল, শব্দ –এই সব কিছু মিলেই তো তৈরি হয় পরিবেশ। এরাই তো পরিবেশের উপাদান। আর তাই পরিবেশ দূষণ কেও প্রধানত এই চার ভাগেই ভাগ করা যায়- মাটি দূষণ, বাতাস বা বায়ু দূষণ, জল দূষণ ও শব্দ দূষণ।

পরিবেশ দূষণের কারণগুলো কি কি?

মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হলেও পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ মানুষই। মানুষেই তো অপরিকল্পিত ভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করেছে এবং আজও তা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে অরণ্য তাদের জায়গা হারিয়েছে।

খালি জায়গা পেলেই মানুষ তৈরি করেছে শিল্প। বিশাল অরণ্যদের নষ্ট করে বাড়ীর বেলকনি কিম্বা অফিসের করিডোর কিম্বা পার্ক এ টবের মধ্যে বৃক্ষ রোপণ করেছে। কিন্তু তবুও এইভাবে বৃক্ষ রোপণ আজও সেই হারিয়ে যাওয়া অরণ্যদের জন্য যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করতে পারে নি।

এইরকমেই নানান কারনে দূষিত হয়েছে মাটি, বায়ু, জল ও শব্দ।

মাটি দূষণ

কৃষি তে বেশী ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকেরা ব্যবহার করছে নানান রকমের কীটনাশক ওষুধ। এর ফলে দূষিত হচ্ছে মাটি। যেসব কারখানাতে তৈরি হচ্ছে এইসব ওষুধ, সেখানে ব্যবহার হচ্ছে নানান রকমের কেমিকেলস। কারখানা তে কীটনাশক ওষুধ উৎপাদনের সাথে সাথে, কিছু ক্ষতিকারক দ্রব্যও তৈরি হচ্ছে যা ফেলে দেওয়া হচ্ছে মাটিতে।

গাছের সংখ্যা কমে যাওয়াও মাটি দূষণের অন্যতম কারণ।

নানান রকমের ইলেকট্রনিক দ্রব্যের অপব্যবহার, পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত ক্ষতিকারক তেজস্ক্রিয় পদার্থ সমূহ মাটিতে মিশে দূষিত করে তোলে মাটিকে।

বায়ু দূষণ

বিভিন্ন উৎসবে, অনুষ্ঠানে বাজি পুড়িয়ে ,সেই বাজি থেকে নির্গত ধোঁয়া বাতাসে মিশে দূষিত করে তোলে পরিবেশ। বাস,ট্রাক, ট্যাক্সি থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ু কে দূষিত করে তোলে। বিভিন্ন কল-কারাখানার চিমনি থেকে বেরিয়ে আসা ধোঁয়া বাতাস কে দূষিত করে তোলে।

জল দূষণ

জল দূষণের অন্যতম কারণ গুলো হল কারখানা থেকে প্রধান দ্রব্যের সাথে উৎপাদিত উপজাত দ্রব্য গুলো নদী বা পুকুরে ছুঁড়ে ফেলা।

বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ যেমন ইউরেনিয়াম, প্লুটোনিয়াম ইত্যাদি জলের মধ্যে মিশে জল কে দূষিত করে তোলে।

জৈব দূষক যেমন কীটনাশক ওষুধ এবং অজৈব দূষক যেমন ডিটারজেন্ট পাউডার জলের মধ্যে মিশে জল দূষণ তৈরি করে।

শব্দ দূষণ

মানুষের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে যানবাহনের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। সঠিক প্ল্যানের অভাবে ট্র্যাফিক জ্যাম বেড়েছে। এর ফলে রাস্তায় নামলেই সর্বক্ষণ কানে ভেসে আসে গাড়ীর হর্ন এর আওয়াজ। কখনো দুর্ঘটনা এড়াতে হর্ন, আবার কখনো ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে ধৈর্য হারিয়ে বিনা কারনেই হর্ন বাজিয়ে চলেছেন গাড়ী চালকরা। এর ফলে বাড়ছে শব্দ দূষণ।

বিভিন্ন পূজা অনুষ্ঠানে বাজি ফাটানোর ফলে হচ্ছে শব্দ দূষণ।  

মানবজীবনে দূষণের প্রভাব

মানবজীবন যে পরিবেশের কোলে লালিত পালিত হচ্ছে, সেই কোল কেই করে তুলছে বিষাক্ত। আসলে আমরা যে ডালে বসে আছি সেই ডাল কেই আমাদেরই অজান্তে কুড়োল দিয়ে আঘাত করছি প্রতিনিয়ত।

পরিবেশের প্রতিটি উপাদান যদি নানান ভাবে দূষিত হতে থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের খাবারের মধ্যেও তার প্রভাব পড়বে।

জমিতে তাড়াতাড়ি অনেক খানি ফসল পাওয়ার জন্য নানান রকমের ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। আর সেই ফসল আমরাই খাচ্ছি। এর ফলে দেখা দিচ্ছে পেটের সমস্যা, হজমের সমস্যা। মাটি দূষণের ফলে হচ্ছে চর্ম রোগ, ক্যান্সার, ইত্যাদি।

গরু থেকে বেশী পরিমানে দুধ পাওয়ার জন্য, গরুকে দেওয়া হচ্ছে ইঞ্জেক্সেন। আর সেই দুধ আমরাও পান করছি। এর ফলে নানান রকমের রোগের জন্ম হচ্ছে আমাদের শরীরে।

আর যে বাতাস এ নানান রকমের ক্ষতিকারক গ্যাস মিশিয়ে আমরা দূষণ করছি সেই দূষিত বাতাসেই আমরা শ্বাস নিচ্ছি। এর ফলে হচ্ছে শ্বাস কষ্ট, ফুস্ফুসে নানান সমস্যা।  আসলে আমরা নিজেরাই নিজেদের রোগ কে জন্ম দিই।

শব্দ দূষণের ফলে বাড়ছে রক্ত চাপ, দেখা দিচ্ছে হার্টের সমস্যা, শ্রবন শক্তি হ্রাস।

পরিবেশ দূষণের প্রতিকার

কৃষি ব্যবস্থায় চায় ধৈর্য, ক্ষতিকর নয় এমন ওষুধ এর জমিতে প্রয়োগ, ক্ষতিকর দ্রব্যগুলোকে মাটিতে না মেশানো – এই কয়েক টি উপায়ে মাটি কে বাঁচান যাবে দূষণের হাত থেকে। মাটি আমাদের মা এর মতো। তাই তার বিশেষ খেয়াল রাখা আমাদের প্রত্যেকেরই কর্তব্য।

কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া কে নিয়ন্ত্রন করে কমিয়ে আনা, বাস ট্রাক থেকে যাতে ধোঁয়া না বেরোয় তার ব্যবস্থা করতে পারলে আমরা অনেকটাই বায়ু দূষণ কমাতে পারবো।

আর যদি আমরা প্রত্যেকেই পাবলিক গাড়ী ব্যবহার করি, কিম্বা শেয়ারিং গাড়ী ব্যবহার করি, তাহলে যানবাহনের সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে। এর ফলে গাড়ীর ধোঁয়া, আর হর্নের প্রভাব ও কমে যাবে। ফলে বায়ু দূষণ ও শব্দ দূষণ দুটোই আমরা কমাতে পারবো।

উপসংহার

সময় এসেছে আমাদের সকলের মধ্যে সচেতনতাকে জাগিয়ে তোলা। যানবাহনের সংখ্যা কমিয়ে, বাজি ফাটানো নিষিদ্ধ করে, অরণ্যের জন্ম দিয়ে আমরাই পারি পরিবেশ এর দূষণ কমিয়ে পরিবেশ কে সতেজ করে তুলতে। যদি পরিবেশ দূষণ এর প্রতিকার আমরা করতে না পারি, তাহলে আমরা নিজেদের কে রোগ মুক্ত করতে কখনোই পারবো না। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত প্রতি মুহূর্তে পরিবেশের খেয়াল রাখা ঠিক যেমন ভাবে আমরা আমাদের আপন জনদের খেয়াল রাখি বা আমাদের বাড়ীর খেয়াল রাখি।

___________________________

যদি তোমরা ক্লাস ফোর এর ছাত্র ছাত্রী হয়ে থাকো আর তোমাদের পরিবেশ দূষণ রচনা টি লিখতে হয়, তাহলে তোমরা ভূমিকা, পরিবেশ দূষণের কারণ আর তার প্রতিকার লিখলেই হয়ে যাবে। আর যদি তোমরা ক্লাস সিক্স বা সেভেন এর হয়ে থাকো, তাহলে পুরো রচনা টিই লিখতে হবে।

সুস্থ থাকো, ভালো থাকো, সবাইকে ভালো রাখো। চলো, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে! পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা টি থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিবেশের খেয়াল রাখাতে সকলে মিলে একসাথে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়।  

2 thoughts on “পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা [ For Class 4,5,6, and 7]

  1. You’re so awesome! I don’t believe I have read a single thing like that before. So great to find someone with some original thoughts on this topic. Really.. thank you for starting this up. This website is something that is needed on the internet, someone with a little originality!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট