কিভাবে পরীক্ষার টেনশন কমানো যায়?

পরীক্ষার টেনশেন কমানোর উপায়

পরীক্ষার আগে কি আপনার হার্টবিট বেড়ে যায়? আপনি কি খুব টেনশন করেন আর তাই পরীক্ষার আগে ভালোভাবে খাবার খেতেও পারেন না, বমি বমি ভাব লাগে? আপনি কেন, বর্তমানে, ছোট ছোট বাচ্চারাও পরীক্ষার আগে টেনশন করে থাকে। বাচ্চারাও মনে মনে ভাবে-“কিভাবে পরীক্ষার টেনশন কমানো যায়”?

বাচ্চাদের কে টেনশন করতে তো বড়রাই শেখায়। কোন বাচ্চা যদি টেনশন না করে, তাহলে বাবা মা তাকে বলতে থাকে –“কি রে তোর একটুও টেনশন ও হয় না, সামনে পরীক্ষা, দেখে তো বোঝাই যায় না”। এই টেনশন এর বীজ গার্জেনরাই বপন করে থাকে বাচ্চাদের মনে।

বাচ্চা থেকে এডাল্ট সকলেই নোটিস পাওয়া মাত্র পরীক্ষার টেনশন করতে থাকে। যতই পরীক্ষার দিন কাছে আসে, ততই টেনশন বাড়তে থাকে। আর এই টেনশন খুবই ক্ষতিকারক। এই টেনশন এর জন্যই অনেকে দিনের পর দিন সময় নষ্ট করে, অনেকে পরীক্ষাতে রেজাল্ট বাজে করে থাকে, জানা জিনিষও ভুল করে আসে।

পরীক্ষার টেনশন কি

টেনশন একটি মনের অবস্থা যেখানে মনের মধ্যে ভয় কাজ করে। আর সেই ভয়ে আমরা অনেক ভুল ভ্রান্তি করে ফেলি। টেনশন আমাদের মনের দৃষ্টিশক্তিকে কমিয়ে দেয়। আর মনের দৃষ্টিশক্তি যেখানে কম, সেখানে যে কোন কাজই কঠিন হয়ে থাকে।

পরীক্ষার টেনশন হল মনের এক চাঞ্চল্যকর অবস্থা। এই অবস্থায় মন এক অজানা ভয়ে ভিতগ্রস্ত অনুভূতির মধ্য দিয়ে কাটাই।  

পরীক্ষার টেনশন কেন হয়?

আমরা নিজেরাই মনের মধ্যে অনেক কিছু কল্পনা করে নিই যার বেশিরভাগই নেগেটিভ হয়ে থাকে। আমরা অবান্তর কিছু ভাবতে থাকি। আমরা শেষ মুহূর্তে এসে পড়াশুনা শুরু করি। তারপর পুরো সিলেবাস শেষ করতে পারি না। সময়ের অভাবে তাড়াহুড়ো করে রিভাইজ করে থাকি।

আমাদের মনের মধ্যে ভয় এতোটাই জায়গা নিয়ে নেই যে আমরা আমাদের জানা জিনিষের ওপর সন্দেহ প্রকাশ করতে থাকি। এর ফলে আমরা অনেক ভুল করে আসি পরীক্ষা হলে।

পরীক্ষার টেনশন কমানোর উপায়

আসুন, দেখে নেওয়া যাক পরীক্ষার আগের এই ভয়াবহ পরীক্ষার টেনশন থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়ঃ

১। ভালো করে প্রস্তুতি নিন পরীক্ষার টেনশন দূর করতে

ক্লাসে পড়ানোর সাথে সাথে প্রস্তুতি নিন। আগের বছর কোন সময়ে পরীক্ষা হয়েছিল, তা নিশ্চয় আপনার জানা। তাহলে তার ৩-৪ মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নিন। যে চ্যাপ্টারটি সবে সবে পড়ে শেষ করলেন, সেই চ্যাপ্টারটি এর ওপর পরীক্ষা দিন। বাড়ীতে কাওকে দিয়ে প্রশ্নপত্র বানান।

ক্লাসের সাথে সাথে আপডেট থাকুন। যা আপনি গত দুই সপ্তাহে শেষ করেছেন, তা আবার মাঝে মাঝে পড়ুন যাতে করে পরীক্ষার আগে আকাশ থেকে না পড়েন।

পরীক্ষার প্রস্তুতি
প্রস্তুতি

২। নোট বানান আর পরীক্ষার টেনশন থেকে দূরে থাকুন

প্রতিটি বই এর ভলিউম খুব বেশী হয় যা পরীক্ষার আগের দিন রিভাইজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আর সেই কারনেই প্রতিটি বিষয়ের জন্য একটি করে খাতা রাখুন।

প্রতিটি চ্যাপ্টার পড়া শেষ হয়ে গেলে, সেই চ্যাপ্টারটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো খাতাতে সুন্দরভাবে সাজিয়ে লিখুন। তারপর রাফ খাতাতে ওইসবগুলো না দেখে আরেকবার লিখুন।

৩। গত কয়েক বছরের প্রশ্নপত্রের ওপর পরীক্ষা দিন

গত কয়েক বছরের প্রশ্নপত্র জোগাড় করুন। সেইসব প্রশ্নপত্রের ওপর পরীক্ষা দিন। নিজেই নিজের উত্তরপত্র চেক করুন। যেসব প্রশ্নের উত্তরগুলো ভুল করলেন, সেইগুলো আবার পড়ুন কিন্তু একবার না দেখে উত্তরগুলো লিখার চেষ্টা করুন।

আসল পরীক্ষার আগে অনেকবার পরীক্ষায় বসুন। বার বার এইরকম পরীক্ষা দিতে থাকলে পরীক্ষার টেনশন গুলো দূর হয়ে যায়।

পরীক্ষা
পরীক্ষা

৪। কিছু কম্পিটেটিভ পরীক্ষায় বসুন

অনলাইনের যুগ। ঘরে বসে আপনি অনেক পরীক্ষায় বসতে পারবেন। যখন আপনি এইসব পরীক্ষাতে বসবেন, প্রথম প্রথম আপনার খুব টেনশন হবে। বারে বারে পরীক্ষাতে বসতে থাকলে ধীরে ধীরে সেই টেনশন মিলিয়ে যাবে।   

৫। আত্মবিশ্বাস রাখুন

নিজের ওপর অগাধ বিশ্বাস আর রেজাল্ট ভালো করার অদম্য ইচ্ছাই আপনাকে পরিশ্রম করতে বাধ্য করবে। পরিশ্রম করলে, আত্মবিশ্বাস থাকলে ভয় কিছুতেই সেখানে প্রবেশ করতে পারে না।

৬। মেডিটেশন করুন

মেডিটেশন করলে মন হাল্কা হবে, আপনি পড়াশুনাতে মন বসাতে পারবেন। তাই প্রত্যহ সকালে ৫ -১০ মিনিট মেডিটেশন করুন।

যদি গতানুগতিকভাবে মেডিটেশন করতে আপনি না পারেন, তাহলে আপনি ৫-১০ মিনিট শুধু কোন ঠাকুরের চোখের বা আপনার কোন প্রিয় মহাপুরুষের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেন, আর সেই সময় মনকে চিন্তাশূন্য রাখুন।

মনোযোগ, একাগ্রতা
মেডিটেশেন

৭। জল খাওয়ার পরিমানের ওপর জোর দিন

নিয়মিত বেশী করে জল পান করুন। জল আমাদের শরীর কে শুদ্ধ করে। শরীর শুদ্ধ না হলে মনকে শুদ্ধ করা মুশকিল হয়ে যায়। আর মন শুদ্ধ না হলে মনকে নিজের নিয়ন্ত্রনে আনা মুশকিল। মন নিয়ন্ত্রনে না থাকলে আপনি মন থেকে টেনশন দূর করবেন কি করে?

৮। পরীক্ষার আগের দিন রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ুন

পরীক্ষার আগের রাতে মাথা ভারাক্রান্ত একদম করবেন না। পরীক্ষার বেশ কয়েকদিন আগেই চেক করুন পুরো সিলেবাস আপনি পড়েছেন কিনা। প্রয়োজনে পুরো সিলেবাসের ওপর নিজেই নিজের পরীক্ষা নিন। নিজেই প্রশ্নপত্র বানান।

পরীক্ষার আগের রাতে বেশী রাত কখনোই জাগবেন না। চেষ্টা করুন ১০ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে। ওইদিন বেশী রাত জাগলে, শরীর ফ্রেস থাকে না। শরীর ফ্রেস না থাকলে, মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে আর টেনশন করতে থাকে এই ভেবে যে পরীক্ষা ভালো হবে না।

তাই শরীর আর মন এই দুইকেই ভালো না রাখলে, টেনশন সেই শরীর আর মনের মধ্যে প্রবেশ করে যায়। 

৯। পরীক্ষার দিন সকালে শুধু গুরুত্বপূর্ণ নোটগুলো পড়ুন

পরীক্ষার দিন সকালে সব কিছু পড়তে যাবেন না। যেগুলো আপনার মনে হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোই শুধু পড়বেন। পুরো বই টা সকালে একবার রিভাইজ করতে পারলেন না বলে আফসোস করবেন না বা তার জন্য পরীক্ষা ভালো হবে না – এই আশঙ্কা বা অকারনে মনের মধ্যে নেগেটিভ চিন্তা আনবেন না।

বরং এই ভাবুন যে গতকাল রাতে আপনি যা কিছু পড়েছেন, সেইসব কিছুই আপনার মনে আছে।

১০। পরীক্ষার দিন সকালে কোন নতুন জিনিষ পড়বেন না   

পরীক্ষার দিনের সকালে নতুন জিনিষ পড়ে মনকে ভারাক্রান্ত করবেন না। যা কিছু পড়েছেন সেখান থেকেই আপনি খুব ভালো নম্বর তুলতে পারবেন- এই বিশ্বাস রাখুন।

পরীক্ষার দিনের সকালে আপনি ফরমুলা থাকলে ফরমুলা পড়তে পারেন, কিংবা গুরুত্বপূর্ণ জিনিষেই পড়ুন।

১১। পরীক্ষার আগের মুহূর্তে মনে করার চেষ্টা করবেন না

পরীক্ষার ঠিক আগের মুহূর্তে যখন আপনি পরীক্ষা হলে ঢুকে গেছেন, কিন্তু প্রশ্নপত্র হাতে পান নি, ঠিক সেই সময়ে আপনি যা যা পড়েছেন তা মনে করার চেষ্টা করবেন না। কেননা এইরকমটা করলে টেনশন আরও বেড়ে যায়।

এই সময়ে আপনি মনকে একটু চিন্তা শুন্য রেখে রিলাক্স থাকুন আর প্রশ্নপত্রের জন্য অপেক্ষা করুন। এই সময়ে চিন্তা করে কোন লাভ নেই কারন আপনি আপনার সব বইগুলো জমা করে দিয়েছেন।

এই ১১ টি স্টেপ্স ফলো করলে আপনি ধীরে ধীরে আপনার পরীক্ষার প্রতি টেনশন কমাতে পারবেন। যে মানুষটা কোনোদিন বাসে চড়ে নি, সেই মানুষটা যখন প্রথম বাসে উঠবে, সে কিছুতেই সিট ছাড়া বাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে ব্যালেন্স বজায় রাখতে পারবে না।

ঠিক সেইরকম, এবারের পরীক্ষাটা যদি আপনার প্রথমবারের পরীক্ষা হয়, তাহলে তো টেনশন হওয়াটাই স্বাভাবিক। একটা বাচ্চা যখন হাঁটতে শেখে, সেও টেনশন করে আর তাই তো কিছুতেই মাটিতে পা ফেলতে চায় না পাছে সে পড়ে যায়। সেই বাচ্চাটিই যখন খুব বড় হয়ে যায়, সে কি আর এইরকমের টেনশন করে?

সবই অভ্যেস এর ব্যাপার। তাইতো পরীক্ষার টেনশন দূর করতে গেলে পরীক্ষা দেওয়াটাকে অভ্যেস করে ফেলুন।    

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, সবাইকে ভালো রাখুন। চলুন, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে!  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট