প্রকৃতি বলতে কি বোঝায়?

দা আল্টিমেট পাওয়ার

ছায়াপথ কি প্রকৃতির অংশ নাকি প্রকৃতি ছায়াপথের অংশ? প্রকৃতি কি? কি তার শক্তি? আমরা সকলেই কি প্রকৃতিরই সৃষ্টি? এইসব নানান প্রশ্ন এক বিশাল কৌতূহলের উদ্রেক করে। আপনিও কি এইসব নিয়ে মাঝে মাঝেই ভাবতে থাকেন?

কখনো কি খোলা আকাশের নিচে ঐ নক্ষত্র পুঞ্জের কথা ভেবেছেন? নিশ্চয় কখনো কখনো মন এই ভাবনায় বিচলিত হয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে নিশ্চয় ভিজেছেন? আবার রামধনুও দেখেছেন নিশ্চয়। সমুদ্রের বিশাল ঢেউ এ ভয় পেয়ে পিছিয়ে এসেছেন। আবার বাড়ীর ছাদে দাঁড়িয়ে বাবুই পাখিরা কি সুন্দর ভাবে খেজুর গাছে বাসা তৈরি করে তাও নিশ্চয় দেখেছেন।

প্রকৃতি
ঝিম ঝিম বৃষ্টিতে

আবার শহরে লোকের ভীড়, বাসে ওঠার জন্য ঠেলাঠেলি, বাসের বিকট হর্ন। হাওড়া স্টেশন এর ভীড়, বিশাল বড় বড় হাইওয়ে, মন্দিরে মানুষের ঢল, রাত্রে শপিং মলে লাইটের ছড়াছড়ি।

অন্যদিকে গ্রাম্য বাড়ী, ঢুকতেই সামনে এক উঠোন। বাড়ীর বউ একটা সাদা শাড়ীর ওপরে চাল শুকোতে দিয়েছে, পাশের বাড়ীতে ভদ্রমহিলা কাঠের উনুনে মুড়ি তৈরি করছে। ভদ্রমহিলার এক বিশাল বড় বাগান বাড়ী। সেই বাগানে রকমারি গাছ। ফুলের কি বাহার! এমন সৌন্দর্য খুব কমই দেখা যায়।

এর মধ্যে কোন গুলোকে আপনি প্রকৃতির অংশ বলে আখ্যা দেবেন না বলতে পারবেন? নিশ্চয় আপনি শহরের দূষিত চিত্রগুলোকেই ভাবছেন। কেন বলুন তো? প্রকৃতি কি শহর কে তেজ্য পুত্র করেছে?

আচ্ছা কোন মানুষের সব সন্তান কি একইরকম হয়? হয় যে না – তা আপনি ভালোভাবেই জানেন। কোন মায়ের দুটো যমজ সন্তান থাকলেও তাদের মন রুচি সব কিছু ভিন্ন প্রকৃতির হয়।

ওপরে যা কিছু বললাম, সবই প্রকৃতির অংশ। এরপর আপনি বলবেন শহর আবর্জনা আর ধোঁয়া তে গা ঢাকা নিয়েছে। তা কি করে প্রকৃতির অংশ হতে পারে? জানেন তো সন্তান কভু কুসন্তান হতে পারে কিন্তু মাতা কভু নয়।

প্রকৃতি কি

ছায়াপথ প্রকৃতির অংশ। আমি, আপনি যে টুকু আকাশ বাতাস দেখতে পাই, সেইসব তো অবশ্যই প্রকৃতি, কিন্তু প্রকৃতির সাইজ ওইটুকুই শুধু নয়। প্রকৃতি এই বিশাল বিশ্ব ব্রম্ভান্ড জুড়ে বিরাজমান। প্রকৃতির মধ্যেই তো নানান রকমের শক্তির খেলাঘর। প্রকৃতির সাইজকে মাপা যায় না। প্রকৃতির শক্তিকেও মাপা যায় না।

যা কিছু আমার আপনার চোখ দেখে, মন শুনে, নাক গন্ধ পায়, জ্বিহা স্বাদ পায় –সেইসব কিছুই প্রকৃতি।

শ্রেণীবিভাগ

প্রকৃতির শক্তিকে আমরা দুইভাবে ভাগে করতে পারি- মহাকাশ শক্তি এবং শুন্য শক্তি। আর এই মহাকাশ শক্তিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়-  প্রাকৃতিক শক্তি, প্রান শক্তি, জড় শক্তি। প্রাকৃতিক শক্তি যেমন সমুদ্রের ঢেউ এর শক্তি, বিদ্যুতের শক্তি, বাতাসের শক্তি, জলের শক্তি, ভুমি শক্তি, ইত্যাদি। প্রান শক্তি পাঁচ প্রকারের হয়- মনুষ্য শক্তি, বন্য শক্তি, পশু শক্তি, কীট পতঙ্গ শক্তি, উদ্ভিদ শক্তি। মনুষ্য শক্তি দুই প্রকারের হয় –  শারীরিক শক্তি এবং মানসিক শক্তি। মানসিক শক্তি দুই প্রকারের হয়- বুদ্ধি শক্তি, কাল্পনিক শক্তি বা চিন্তা শক্তি।

শক্তির ভাণ্ডার

কোটি কোটি ছায়াপথের মাঝে মাঝে যে বিশাল শুন্যতা তার শক্তিও কিন্তু কম নয়। জানেন তো শুন্যের শক্তি বিশাল। সে তো আপনি গনিত পড়ার সময়েই বুঝেছেন। প্রকৃতির এই শুন্য শক্তি থেকেই তো জন্ম হয়েছে কোটি কোটি ছায়াপথের।

প্রকৃতি শক্তির এক বিশাল ভাণ্ডার। নানান রকমের শক্তি নিয়ে প্রকৃতি শুধু খেলা করতে থাকে। এক শক্তির সাথে আরেক শক্তি মিশিয়ে প্রকৃতি শুধুই খেলতে থাকে।

প্রকৃতি –এক বিজ্ঞানী

প্রকৃতি তার সব রকম শক্তি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যায়। প্রকৃতিই তো মানুষের বুদ্ধি শক্তি থেকে বিজ্ঞান শক্তির জন্ম দিয়েছে। আর এই বিজ্ঞান শক্তি প্রযুক্তিবিদ্যা উন্নতির কাজে ব্যস্ত। আর এই সব কিছু নিয়ন্ত্রন করে মানসিক শক্তি। মানসিক শক্তি ছাড়া বুদ্ধি শক্তি ঠিক পলাশ ফুলের মতো যা কোন কিছুতে কাজে লাগে না।

আপনি যখন আপনার ফ্ল্যাট এর ড্রয়িং রুমটাকে ভালোভাবে সাজাতে যান, নিশ্চয় অন্য একটা রুম কে আবর্জনায় আচ্ছাদিত করেন কিংবা এই বিশাল পরিবেশে ফেলে দেন। কোথাও না কোথাও তো আপনাকে আবর্জনা ফেলতেই হয়।

এটাই তো নিয়ম। ভালো জিনিস গ্রহন করে, খারাপ জিনিষকে কোন না কোন ভাবে বর্জন করতে হয়। সব যেন ইনপুট আর আউট পুটের খেলা। ঠিক সেইরকম প্রকৃতিকেও কোথাও না কোথাও আবর্জনা ফেলতেই হত। গ্রাম গুলোতে প্রযুক্তিবিদ্যা উন্নত নয় বলে গ্রামে আবর্জনাও কম। শহরে তৈরি আবর্জনা তো শহরেই ফেলতে হবে। কিন্তু তাই বলে কি শহর প্রকৃতির সন্তান নয়?

প্রকৃতি উদার

শক্তি কি কখনো খারাপ হয়? খারাপ কিভাবে হয়? যে শক্তি কাউকে আঘাত দেয় সেই শক্তিই খারাপ, তাই তো? কিন্তু শক্তির মধ্যে প্রান সঞ্চার কে করে?

যেমন ধরুন, আপনি কিছু জিনিষ পড়ে পরীক্ষা দিতে গেছেন। পরীক্ষা হলে গিয়ে দেখলেন আপনি যেগুলো পড়েন নি সেইগুলো থেকেই বেশীরভাগ প্রশ্ন এসেছে। যথারীতি আপনি পরীক্ষায় পাস করতে পারলেন না। আপনি পরীক্ষার এক মাস আগে থেকে পড়া শুরু করেছেন কিন্তু প্রশ্নপত্র দুমাস আগেই তৈরি হয়েছিল।

এই ক্ষেত্রে আপনার পাশ না করার পেছনে কে দায়ী? আপনিই দায়ী। কারন আপনার পছন্দগুলো ঠিক ছিল না। ঠিক সেইরকম আপনাকে বাড়ী থেকে খুব বারন করছিল – আজ অফিসে যেতে। কিন্তু আপনি যাবেনেই। গেলেন ও। আর তারপরেই বাসে এক্সিডেন্ট হল আর আপনি আহত হলেন।

কে দায়ী? আপনার ভাগ্য? না, আপনিই দায়ী। কারন আপনি আপনার মানসিক শক্তিকে কাজে লাগান নি।

আর প্রকৃতি তো নিঃশব্দে এক শক্তির সাথে আরেক শক্তি মিশিয়ে দেখে চলেছেন -কোন মিশ্রনে রেজাল্ট ভালো হয়? যেদিন প্রকৃতি ঐ বাসের জড় শক্তি কে ভুমি শক্তিতে রুপান্তরিত করতে চেয়েছিলেন সেই দিনই আপনি ঐ বাসের জড় শক্তির মধ্যে প্রবেশ করেছিলেন। তাহলে এতে কার দোষ?

প্রকৃতির কাছে সবাই সমান যেমন মায়ের কাছে সব সন্তানের প্রতি সমান ভালোবাসা গচ্ছিত থাকে। কিন্তু প্রকৃতির কাজই হল সব শক্তিকে নিয়ে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করা। এইসবের মধ্যেই তো প্রকৃতি ব্যস্ত থাকে।

প্রকৃতির সৌন্দর্য

সব মায়েরই নিজেকে সাজাতে ভালবাসে। নিজেকে সুসজ্জিত করার ফলে কার না মন ভালো হয়ে যায়? প্রকৃতিও তাই। বিভিন্ন পরিবেশে নিজেকে বিভিন্ন ঢং এ সুসজ্জিত করে। বিভিন্ন শক্তি নিয়ে খেলতে খেলতে , প্রকৃতি যখন দেখে রেজাল্ট তার মনের মতো, তখন সে অপরুপ সাজে নিজেকে সাজায়, আর যখন রেজাল্ট মনের মতো হয় না, প্রকৃতি নগ্ন হয়ে নাচতে থাকে, সে এক তাণ্ডব।

শরতকালের আকাশে ছাদে দাঁড়িয়ে নক্ষত্র গুনেছেন কখনো? চাঁদের মধ্যেকার দাগ গুলো প্রত্যহ কি একইরকম দেখতে লাগে? মুষলধারে বৃষ্টির পরে হটাত রৌদ্রের ঝলকানিতে আকাশে দু-তিনতে রামধনু দেখেছেন কখনো? শরতের সকালে শিউলি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ফুলের বাহার দেখেছেন?

নদী, পাহাড়, সমুদ্র তো নিশ্চয় দেখেছেন? আর আগ্নেয়গিরি দেখেছেন? ভুমিকম্পের কম্পন নিশ্চয় একটু হলেও অনুভব করেছেন? পুকুরের মধ্যে শালুক পাতা ভর্তি , যেন বাড়ীতে অনেক অতিথি আসবে বলে প্রকৃতি শালুক পাতা দিয়ে থালা সাজিয়েছে।

প্রকৃতির সৌন্দর্য
শালুক পাতার থালা

গভীর জঙ্গলে কখনো গেছেন? সেখানে পশু পাখিরা কেমন প্রতি মুহূর্তে খাদ্যের আর আত্মরক্ষার উপায় এর খোঁজ করে চলেছে, তা কখনো মনের চোখ দিয়ে দেখেছেন?

প্রকৃতি থেকে সাহায্য

আপনার মনে নিশ্চয় প্রশ্ন জাগছে- করোনার সময়ে প্রকৃতি আমাদের সাহায্য করছে না কেন? আবার ভুল করছেন –প্রকৃতি এই সব কিছুর ঊর্ধ্বে। আমরা সকলেই এক শক্তি মাত্র। তাহলে কিসের এই সাহায্য? শক্তির কি কখনো মৃত্যু হয়? শক্তি শুধু এক রূপ থেকে আরেক রূপে নিজেকে বদলায়।

এই যেমন ধরুন –আমি যদি মরেও যায়, প্রকৃতির শক্তির ভাণ্ডারে কোন পরিবর্তনই আসবে না। বিশাল সমুদ্রের মধ্যে কিছু জলকনা যদি বরফে পরিনত হয়, সমুদ্র কি তা বুঝতে পারবে , নাকি সমুদ্রের আঘাত লাগবে?

আর তাই তো প্রকৃতির কিছু যায় আসে না। প্রকৃতি তো খেলছে। প্রকৃতি খেলতে খেলতে অন্য কোন শক্তি কে ঐ ভাইরাস এর মধ্যে নিহিত করে ফেলেছে। এখনো খেলেই চলছে। হয়তো এই শক্তির দিকে আর ধ্যান নেই। এরপর অন্য কোন শক্তির সাথে খেলাতে মেতেছে এই প্রকৃতি।

তবে যেহেতু প্রকৃতি সমস্ত শক্তির ভান্ডার, আর তাই আমি আপনি আমাদের মানসিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রকৃতির লক্ষ্য আমাদের দিকে ফোকাস করাতে সম্ভবপর হব।

কিন্তু আমাদের মধ্যে একতার অভাব। আমাদের মধ্যে সমস্যাগুলো ভিন্ন, তাই চিন্তাধারাও ভিন্ন। চিন্তাধারা ভিন্ন হলে, মানসিক শক্তিও ভিন্ন রকম হবে। আর তাই তো তার সেই মানসিক শক্তির ক্ষমতা থাকে না। তবে বেশী চিন্তা করবেন না, আমাদের উদার মাতা আমাদের নিশ্চয় খেয়াল রাখবেন।

প্রকৃতি থেকে সাহায্য
প্রকৃতি থেকে সাহায্য

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, সবাইকে ভালো রাখুন। চলুন, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে!  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট