বাজে অভ্যাস দূর করার উপায় গুলো কি কি

বাজে অভ্যেস

আপনি যে বাজে অভ্যেস এর দ্বারা আসক্ত, তা কি আপনাকে বিচলিত করে তোলে? আপনি চান না সেই বাজে কাজ করতে, কিন্তু আপনার হাত সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে সেই কাজ করার দিকেই কি এগিয়ে থাকে? তাহলে দেখে নিন সেইসব বাজে অভ্যাস দূর করার উপায় গুলো কি কি।

আপনি কি ভাবেন যে অবচেতন মন ই এর জন্য দায়ী? তাই কি করবেন খুঁজে পাচ্ছেন না? অবচেতন মন কে কি করে কন্ট্রোল করবেন, তাই ভাবছেন তো? কেন, একবার এইভাবে ভেবে দেখুন তো- “না, আমিই এর জন্য দায়ী”। যখন আপনি নিজেকে দায়ী করবেন, তখন আপনার একটা সমাধান খোঁজার তাড়া থাকবে।

যেহেতু এর জন্য আপনিই দায়ী, তাই সমাধান টা আপনিই খুঁজবেন আর সেটা ফলো আপনিই করবেন।

আচ্ছা সমাধান দেওয়ার আগে আরও কয়েকটা ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া যাক-

এমন তো নয় যে আপনি ওই বাজে অভ্যেস এ লিপ্ত হয়ে আনন্দ পান খুব। আর অন্যান্য সময়ে যখন আপনি অনেক লোকজনের মাঝে থাকেন, আপনি শুধু খুঁজে বেড়ান কখন সব লোকজন যাবে আর আপনি একা থাকতে পারবেন যাতে করে ওই বাজে অভ্যেস এ লিপ্ত হতে পারেন আর মজা নিতে পারেন?

আপনি কি সত্যি সত্যিই এই বাজে অভ্যেস থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চান? আপনার মধ্যে কি সেই প্রবল ইচ্ছা মানে বাজে অভ্যেস থেকে নিজেকে মুক্ত করার জোরালো ইচ্ছে কি সারা দিনের কোন না কোন সময়ে জেগে ওঠে? বাজে অভ্যেস এ লিপ্ত হওয়ার পরে কি বিশাল পরিমানে আফসোস জাগে? তাহলে সেই সময় টিকে কাজে লাগান। কিভাবে কাজে লাগাবেন তা দেখে নিন সমাধানের মধ্যে।

কোন দিকের পাল্লা টা ভারী একবার বিচার করে দেখুন। মজা নেওয়ার পাল্লা টা নাকি আফসোস করার পাল্লা টা। যদি আফসোস করার পাল্লা টা ভারী হয়ে থাকে, তাহলেই কিন্তু এই সমাধান গুলো কাজে লাগবে। আর যদি আনন্দ করার পাল্লা টা ভারী হয়, তাহলে কিন্তু এই সমাধান গুলো আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না।

পৃথিবীতে সবচে বড় মানসিক ডক্টর ও এই ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন না যতক্ষণ না অবধি আপনার মধ্যে আফসোস করার পাল্লা টা ভারী হচ্ছে।

বাজে অভ্যেস দূর করার উপায়

বাজে অভ্যাস দূর করার উপায় গুলো কি কি

আপনি যদি সত্যি সত্যিই এই বাজে অভ্যেস থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চান, তাহলে অবচেতন মন কে দোষারোপ না করে সমাধান দেখে নিন।

১। আগে মন কে পরিষ্কার করুন

যেসব মানুষেরা বাজে অভ্যেস এ লিপ্ত থাকে, তাদের মন এর মধ্যে অবশ্যই বাজে চিন্তা চলে, বাজে ছবি ভাসে। সবার প্রথমে মনের মধ্যে যে রেডিও সারাক্ষণ বাজতে থাকে, সেই আওয়াজ গুলো কে শুদ্ধ করুন। মনের চোখ দুটোকে পবিত্র করে তুলুন।

মন কে ভালো জিনিস দেখান, ভালো কিছু ভাবনার গল্প শোনান। কয়েকদিন বেশ কয়েকটা ভালো মোটিভেশনাল গল্প শোনালে আর কয়েকটা ভালো ছবি দেখালেই ,দেখবেন মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই মনের সুর বদলে গেছে।

মন যেমন অবাধ্য, ঠিক তেমন বড্ড অনুকরনপ্রিয়। আপনি যা করবেন, যা ভাববেন, যা দেখবেন, যা চিন্তা করবেন, মন ও তাই করবে। 

২। বাজে অভ্যেস এ লিপ্ত হওয়ার পরে যখন আফসোস জাগে মনে- এই সময় টিকে কাজে লাগান

আফসোস না করে বরং কাঁদুন, আর নিজেই নিজেকে বলুন কাল আর এমন হবে না। একটা দিন অন্তত নিজেকে মুক্ত রাখুন এই বাজে অভ্যেস থেকে। এই একটা দিন সফল হওয়ার পরে বুঝতে পারলেন যে আপনি ই এর জন্য দায়ী। অবচেতন মন এর জন্ম তো সচেতন মন থেকেই। আপনার মনের ভাবনাগুলো অনেকদিন ধরে মনের মধ্যে জমে জমে অবচেতন মন কে শক্তিশালী করে তোলে। এখন যদি আপনি খুব ভালো ভাবনা চিন্তা করেন, তাহলে ভবিষ্যতে আপনার অবচেতন মন ভালো চিন্তার অধিকারী এবং তা শক্তিশালীও হবে।

৩। এক্সারসাইজ করুন

বাজে অভ্যেস এ লিপ্ত হওয়ার সময়ে দেখুন যে শরীরের কোন অঙ্গ গুলি এই কাজে নিযুক্ত। সেইসব অঙ্গ গুলোর জন্য আলাদা কিছু এক্সারসাইজ করুন।

৪। মন কে প্রত্যহ বলুন- আপনি পারবেন

মনের মধ্যে বিড় বিড় করে বলুন যে আপনি পারবেন। পৃথিবীতে কিছু মানুষ এতো জটিল কাজ করতে পারছে, আর আপনি সামান্য একটা অভ্যেস ত্যাগ করতে পারবেন না? ওই মহাপুরুষেরা কি অন্য জগতের?

একদমই না। ওই মহাপুরুষদের মধ্যে যে শক্তি আছে, সেই একই শক্তি আপনার মধ্যেও আছে। পার্থক্য শুধু ইচ্ছা শক্তির।

৫। মাত্র কয়েক দিনের জন্য টার্গেট সেট করুন

দীর্ঘ দিনের বদ অভ্যেস এক-দুদিনের মধ্যেই নির্মূল হচ্ছে না কেন – এই রকম চিন্তা করাটাও বোকামি। যে বদ অভ্যেস আপনি বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছিলেন, আজ হটাত করে নির্মূল করতে চাইলেই কি নির্মূল করা যায়? সেইজন্য এই নিয়ে বেশী চিন্তা না করে সময় দিন।

বদ অভ্যেস এর পরিমান টা কমান। আর কম সময়ের জন্য টার্গেট ঠিক করুন। ভাবুন শুধু আগামীকাল আপনি কিছুতেই এই বাজে অভ্যেস এ লিপ্ত হবেন না। তারপরে দেখবেন আপনি ঠিক পারবেন। আর যখন সেই লক্ষ্য পূরণে সফল হবেন তখন মনের জোর কে আরও বাড়ান।

একদিন যদি পারেন, তাহলে পর পর দুদিন ও পারবেন। এইভাবে ধীরে ধীরে বাজে অভ্যেস থেকে দূরে সরে থাকার সময় কে বাড়ান। মানে লক্ষ্যের পরিধি বাড়ান।

৬। আত্মবিশ্বাস রাখুন

আত্মবিশ্বাস মনের সবচে বড় ওষুধ। ডাক্তাররা যখন ওষুধ দেন, আপনি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে নেন, একবারের জন্যও আপনার মনে সন্দেহ জাগে না। আর সেই কারনেই তো ওষুধের শক্তি বেড়ে যায়। আর আপনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

সেইরকম এক্ষেত্রেও আপনি ভাবুন আপনার মনের সবচে বড় বন্ধু আপনি নিজে কারন আপনার মন কে আপনিই সবচে ভালো চেনেন। আর তাই আপনার মনের চিকিৎসা আপনিই সবচে ভালো করতে পারবেন। এই আত্মবিশ্বাস টা রাখুন। এটাই সবচে বড় ওষুধ।

৭। আপনিই আপনার মনের ডাক্তার

আপনি যদি মনের কোন ডাক্তার কে দেখান, আপনার মনের মধ্যে যে হাজার রকমের চিন্তা চলে তার সব কিছু কি বলেন ডাক্তারকে? হয়তো কিছু বলতে ভুলে যান, আবার কিছু মনে পড়লেও চেপে যান। কি তাই তো? তাহলে তো ওই ডাক্তার আপনার মন কে ১০০% চিনতেই পারেন নি। তাহলে উনি চিকিৎসা করবেন কি করে?

আর আপনি তো ১০০% চেনেন আপনার মন কে। আপনার মনের পুরো গতিবিধি আপনার জানা। তাহলে আপনিই বলুন –আপনার মনের ডাক্তার কে? আপনি না কি ওই ডাক্তার যার কাছে আপনি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছেন?

৮। বাজে সঙ্গ ত্যাগ করুন

যেসব মানুষের অভ্যেস খুব ভালো, তাদের সাথে বন্ধুত্ত্ব করুন। তাদের ভালো অভ্যেসগুলো শুনুন। সেই সব ভালো অভ্যেস গড়ে তোলার চেষ্টা আপনিও করুন। খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করুন। সঙ্গ যদি খারাপ হয়, তাহলে বাজে অভ্যেস ত্যাগ করা আপনার পক্ষে খুবই জটিল হয়ে উঠবে।

আপনার বাজে সঙ্গ বা সঙ্গীরা আপনার বাজে অভ্যেস এ উৎসাহ জোগাবে, আর মজা নেবে। কিন্তু মনে রাখবেন আপনার বিপদের সময়ে সেই বাজে সঙ্গরা কেউই পাশে থাকবে না।

বাজে সঙ্গরা যখন উৎসাহ জোগাবে বাজে অভ্যেস এ লিপ্ত হওয়াতে, তখন আপনার মন দু নৌকায় পা রেখে দুলতে থাকবে, আর কোন ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।

তাই মনের এই পরিস্থিতি যেন না হয়, সেইজন্যই বাজে সঙ্গ এই মুহূর্তে ত্যাগ করা উচিত।

৯। কোন ভালো কাজে নিজেকে নিযুক্ত করুন

নিজেকে ভালো কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখুন। ব্যস্ততা জীবনের সব রকমের সমস্যাকে দূরে রাখে। আপনি নানান কাজের মধ্যে নিজেকে এতখানিই ব্যস্ত করে তুলুন, যেন আপনি সময়ই না পান ওই বাজে অভ্যেস স্মরনে আনার। সারাদিন এতোই পরিশ্রম করুন, শারীরিক পরিশ্রম করুন যেন রাত্রে বিছানা তে যাওয়ার পর সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়েন।

১০। শক্তি ট্রান্সফার করুন

জানেন তো আপনার মধ্যে প্রচুর শক্তি রয়েছে। আর আপনি শারীরিক পরিশ্রম করেন না বলে, ওই শক্তি বেরোতে পারে না আর তাই আপনি ঘুমের মধ্যেও বাজে অভ্যেস এ লিপ্ত হয়ে পড়েন।

আপনার শরীরের শক্তি কে বাজে দিকে চালিত করবেন না। আপনিই পারেন সেই শক্তি কে ভালো দিকে চালিত করতে। যদি সেরকম কোন ভালো কাজ না খুঁজে পাচ্ছেন, প্রচুর ব্যায়াম করুন। এতোই ব্যায়াম করুন যেন আপনি হাঁপিয়ে পড়েন। দিনে দুবার এক ঘণ্টার মতো ব্যায়াম করুন।

পর্যাপ্ত ব্যায়াম করে শারীরিক ক্লান্তি যদি না নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে আরেকটা কাজ করতে পারেন। তবে এখানেও বিশ্বাসের ব্যাপার আছে।

ঘুমোতে যাওয়ার প্রাক্কালে, বিছানাতে শুয়ে শুয়েই মনের মধ্যে বিড় বিড় করে বলতে থাকুন –“ হে ঈশ্বর/ আল্লহা! আমায় আশীর্বাদ দিন, আমি যেন সঠিক পথে চলতে পারি। আর এই বাজে অভ্যেস থেকে খুব শীঘ্রই যেন নিজেকে মুক্ত করতে পারি”। এই লাইন গুলো বার বার বলতে বলতে থাকুন। দেখবেন বলতে বলতে কখন আপনি ঘুমিয়ে গেছেন, তা টেরই পান নি। সেটা পরের দিন সকালে উপলব্ধি করতে পারবেন।

এই উপায়গুলো আপনার কাজে লাগলো কিনা তা কমেন্ট বক্সে লিখে আমাকে আরও নতুন নতুন পোস্ট লিখতে উৎসাহ করুন। এইটুকুই আমার অনুরোধ। এরকম অন্যও কোন সমস্যার সমাধান যদি পেতে চান, কমেন্ট বক্সে লিখে অবশ্যই জানান।  

আশা করি বাজে অভ্যেস দূর করার উপায় গুলো আপনার কাজে লাগবে আর আপনি এই উপায়গুলো ফলো করে শীঘ্রই নিজেকে বাজে অভ্যেস থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হবেন। এই কামনাই করি। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, চলুন এক নতুন পৃথিবী গড়ে তুলি যেন সেই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ঈশ্বরের আশীর্বাদে ভরে ওঠে।

3 thoughts on “বাজে অভ্যাস দূর করার উপায় গুলো কি কি

  1. আপনি যে কথাগুলো বলেছেন তার প্রতিটা কথায় অনেক লজিক আছে। আমরা আমাদের মনে যদি সবসময় এই কথাগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি তাহলে আমার মনে হয় না আমাদের মধ্যে খারাপ বা কোনো বাজে অভ্যাস তৈরি হবে। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দরভাবে কথাগুলো এভাবে উপস্থাপনা করার জন্য। ভাল থাকবেন ভাইয়া, অলওয়েজ টেক কেয়ার।

    1. অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার কমেন্ট পেয়ে উৎসাহিত হলাম। আশা করি ,আর বেশী করে সমাজ কে উপকৃত করতে পারব এইভাবে আশীর্বাদ আর ভালবাসা পেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট