ভুঁড়ি কমানোর কিছু সহজ ঘরোয়া উপায়

ভুঁড়ি কমানোর এক্সারসাইজ

আপনার অতিথিরা আপনাকে কোন ড্রেস দেওয়ার সময়ে আপনার সাইজ জানতে চাইলে তা বলতে কি আপনার লজ্জা লাগে? ভুঁড়ি কমানোর উপায় জানতে অনেক ম্যাগাজিন পড়েছেন? অনেক ব্যায়াম করেছেন?

টিভির পর্দায় স্লিম মানুষদের দেখে আপনার কি আফসোস হয়? বাড়ীর কেউ কেউ কি আপনাকে মোটু মোটু বলে ডাকতে থাকে? সবার সামনে যেতে আপনার কি খারাপ লাগে?

এতো ব্যায়াম করা সত্বেও কি ভুঁড়ি কমাতে সক্ষম হন নি? তাই চিন্তায় আছেন?

কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না? আবার খেতে তো খুব ভালোবাসেন? খাওয়া বাদ দিয়ে থাকা যায় নাকি? অনেকে আপনার খাওয়া কমানো উচিৎ বলে সাজেসেন দিয়েছে? কিন্তু আপনি কম খেয়ে থাকতেই পারেন না?

অনেক চেষ্টা করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন? এমন কি ওষুধ কিনেও খেয়েছেন? তাও কাজে দেয় নি? তাহলে কি হাল ছেড়ে দিয়েছেন? আর মনে মনে কি এটাই ভাবছেন-“ভুঁড়ি কমিয়ে লাভ নেই/ যে আছে তাকে সযত্নে, ভালোবেসে রাখি।“ ঠিক আঙ্গুর ফল টকের মতো।

ভুল করেও এইরকম সিদ্ধান্ত নেবেন না। আপনি কি জানেন খুব বেশী ভুঁড়ি কি পরিমানে ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসে?

ভুঁড়ি থাকার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া  

  • ফ্লেক্সিবিলিটি কমে যায়।
  • খুব বেশী পরিমানে ভুঁড়ি হলে রক্ত চলাচল কমে যায়।
  • ওবেসিটি রোগের সম্ভাবনা থাকে।
ভুঁড়ি থাকার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া- ওবেসিটি    রোগ
ওবেসিটি
  • ভালো ড্রেস পরাই যায় না।
  • মানসিক শক্তিও কমে যায়।

তাই এখানে এমন কিছু টিপস দেবো যা ফলো করলে আপনি আপনার খাওয়া না কমিয়েও আপনার ভুঁড়ি কমাতে পারেন। তবে হ্যাঁ, খাওয়ার স্টাইল আপনাকে বদলাতে হবে।

ভুঁড়ি কমানোর সহজ উপায়

১। হাল্কা গরম জলে লেবু আর মধু মিশিয়ে খান- ভুঁড়ি কমানোর অন্যতম উপায়

এক গ্লাস খাবার জল গরম করুন। সেই গরম জলে অর্ধেক লেবুর রস মেশান। তার মধ্যে এক চামচ মধু মেশান। খাঁটি মধু মেশাতে পারলে খুবই ভালো।

এরপর সেই জল পান করুন প্রত্যহ সকালে, খালি পেটে। এইভাবে লেবু জল পান করতে কোনোদিন মিস করবেন না যেন।

২। জিরা ভেজা জল খান

রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আক গ্লাস জলের মধ্যে জিরা মিশিয়ে রাখুন। সকালে উঠেই তা ছেঁকে সেবন করুন।

জিরা ভেজা জল আপনার শরীরের মেদ কমাতে খুবই সাহায্য করে। এছাড়াও আরো অনেক উপকারিতা আছে এই জিরা ভেজা জলের। জিরা ভেজা জল ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের মধ্যে শর্করা নিয়ন্ত্রনে খুবই সাহায্য করে।

৩। ভুঁড়ি কমাতে ব্যায়াম করুন নিয়মিত

 ভুঁড়ি কমাতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম করুন

আপনি কি ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে কম্পিউটার এর সামনে বসে কাজ করেন? তাহলে ব্যায়াম করাটা আপনার পক্ষে খুবই জরুরী। সকালে লেবু জল বা জিরা ভেজা জল খেয়ে পর মিনিমাম ১০ মিনিট ব্যায়াম করুন।

প্রত্যহ যদি ব্যায়াম করতে নাও পারেন, সপ্তাহে ৩-৪ দিন অবশ্যই ব্যায়াম করুন।

কি ব্যায়াম করবেন তাই ভাবছেন? যদি আপনার সময় বা অন্য কোন সমস্যা থাকে ফিটনেস ক্লাবে জয়েন করতে, আর কিভাবে ব্যায়াম করতে হয় সেই সম্পর্কে ধারনা যদি না থাকে, তাহলে জগিং করুন কিংবা দৌড়ান।

এক্সারসাইজ ঠিকঠাক জানা না থাকলে শুধু দৌড়ান। দৌড়ালেও ভুঁড়ি কমে।
দৌড়ানো

কিছু সহজ ব্যায়াম আপনি ইন্টারনেট এ সার্চ করলে পেয়ে যাবেন। যদি আপনার কোন সমস্যা না থাকে আর হাতে যদি সময়ও থাকে তাহলে কয়েক মাসের জন্য কোন ফিটনেস ক্লাবে জয়েন করুন।

৪। সকালে উঠে Morning Walk এ যান

মর্নিং ওয়াক এ যান, ভুঁড়ি কমবে।
হাঁটুন

সকালে উঠে লেবু জল খেয়ে হাঁটতে যান। সবুজ ঘাসের ওপর হাঁটতে পারলে আরো ভালো হয়। হেঁটে এসে পর ব্যায়াম করুন। তারপর ব্রেকফাস্ট করুন।

খুব ধীরে ধীরে হাঁটলে তা কাজে দেয় না। তাই জোরে জোরে হাঁটুন, আর মিনিমাম এক কিমি হাঁটুন।

৫। দুপুরে লাঞ্চ করার পর ঘুমোবেন না যদি ভুঁড়ি কমাতে চান

দুপুরে লাঞ্চ করার পর ঘুমোবেন না। তবে বিশ্রাম নিতে পারেন মানে ১০-১৫ মিনিটের জন্য শুয়ে থাকতে পারেন।

কিন্তু খেয়াল রাখবেন যেন ঘুমিয়ে না পড়েন। যদি দেখেন যে প্রায়ই আপনি শুয়ে থাকলেই ঘুমিয়ে পড়ছেন, তাহলে চেয়ারে বসে বিশ্রাম নিন।

৬। ভুঁড়ি কে দূর করতে হলে জাঙ্ক ফুড বাদ দিন

অত্যধিক তেল মশলা যুক্ত খাবার বর্জন করুন। জাঙ্ক ফুড ভুলে যান। যদি খুবই খেতে ইচ্ছে করে, আপনি সেই খাবারগুলো বাড়ীতে বানিয়ে খান।

আপনি যখন সেই খাবারগুলো বাড়ীতে বানাবেন, তেল মশলা কম দেবেন। কম তেল মশলা দিয়েও খুবই সুস্বাদু খাবার বানানো যায়।

৭। ভুঁড়ি কমাতে শাক সব্জি ফলমূল খান নিয়মিত

ওজন কমাতে খান শাক সব্জি বেশী পরিমানে। ভুঁড়ি কমবে খুব সহজেই।
শাকসবজি

নিয়মিত লাঞ্চ এর পর এক বাটি ফলমূল খান। বিভিন্ন টাইপের ফলমূল খান। বাড়ীতে কোনোদিন ফল না থাকলে সেলাড খান। শসা, গাজর,পেয়াজ ইত্যাদি স্যলাড হিসেবে খান।  

৮। বেশী পরিমানে জল পান করুন

প্রচুর পরিমানে জল পান করুন। কখনোই যেন গলা শুষ্ক না হয়। তবে রাত্রে বেলা বেশী জল খাবেন না। দিনের বেলায় ২-৩ লিটার জল খাওয়ার চেষ্টা করুন।

৯। ধীরে ধীরে খাবার খান

কখনোই খাবারগুলো গোগ্রাসে গিলবেন না। ধীরে ধীরে চিবিয়ে চিবিয়ে খান। খাবার তাড়াতাড়ি খেলে, ঠিকভাবে তা হজম হয় না আর মেদ হিসেবে তা জমা হতে থাকে।

১০। খালি পেটে মিষ্টি খাওয়া বাদ দিন যদি ভুঁড়ি কে বাদ দিতে চান

একদম মিষ্টি খাওয়া চলবে না, এমনটা নয়। মিষ্টি খান, তবে রেগুলার খাবেন না। আর খালি পেটে একদম মিষ্টি খাবেন না। খালি পেটে মিষ্টি খেলে কোলেস্টেরল খুব সহজেই বেড়ে যায়।

১১। রাত্রে ডিনার করার পরই ঘুমোতে যাবেন না

রাত্রে ডিনার করার পর ১০ মিনিট হলেও পায়চারী করুন। ডিনার করার পরই, সাথে সাথে ঘুমোতে যাবেন না।

১২। কাজের ফাঁকে হাঁটা চলা করুন

একটানা অনেকক্ষণ বসে কাজ করবেন না। মাঝে মাঝেই কাজের ফাঁকে বিরতি নিন। চেয়ার থেকে উঠে ৫ মিনিটের জন্য হলেও পায়চারী করুন।

১৩। ভুঁড়ি কমাতে শারীরিক পরিশ্রম করুন

সবই হয়তো করছেন, যা যা আগেই বলেছি। কিন্তু তাও ভুঁড়ি কমছে না? তাহলে আপনি কি এই ভুলটাই করছেন?

সকালে লেবু জল খাচ্ছেন, ব্যায়াম ও করছেন ,জাঙ্ক ফুড ও খাচ্ছেন না, তাও কেন ভুঁড়ি কমছে না?

তাহলে আপনি কি সারাদিন এ আর কোন কাজই করেন না? সারাদিন কি বসে শুয়ে কাটিয়ে দেন?

অনেক হোম মেকার আছেন যারা বাড়ীতে প্রচুর কাজ করেন, তারা ক্লান্তও হয়ে যান। কিন্তু তা সত্বেও তাদের ভুঁড়ি বেড়েই চলেছে।

কিন্তু তারা ভাবে তারা প্রচুর কাজ করছেন, কিন্তু তারা একটা নির্দিষ্ট সময়ে অনেক খানি কাজ করে থাকেন। আর তারপরে বাকি পুরো সময়টা বসে শুয়েই কাটিয়ে দেন।

সারাদিনে পরিশ্রমের সাথে সময়ের কার্ভ টা যেন ইউনিফর্ম হয়-সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। মানে সকাল বেলাটা আপনি প্রচুর কাজ করলেন আর দুপুর বেলাটা একেবারে জিরো কাজ। এরকম টা যেন না হয়।

১৪। ব্যায়াম করে পর ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়বেন না

ব্যায়াম বা যে কোন পরিশ্রমের পর শুয়ে পড়বেন না যেন। এতে কিন্তু উল্টো ফল পাবেন।

১৫। দায়িত্ব নিন

পারিবারিক কাজগুলোর মধ্যে কিছু কাজের দায়িত্ব নিন। দায়িত্ব যেখানে, সেখানে ফাঁকিবাজি আসতে পারে না।  

১৬। মানসিক চিন্তা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন

দায়িত্ব নেবেন কিন্তু মানসিক চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। এইজন্য আপনার পছন্দমতো নাচ বা গান করুন আপনার অবসর সময়ে।

নাচ যেমন মানসিক চিন্তা থেকে আমাদের দূরে রাখে , ঠিক তেমনি চর্বি কমাতেও সাহায্য করে। নাচ আমাদের মন ও ভালো রাখে।

মোটিভেশনেল বই পড়ে মানসিক চাপ কমান যা ভুঁড়ি কমাতে সাহায্য করে।
বই

কিংবা মটিভেশনেল ব্লগ পড়ুন বা বই পড়ুন।

১৭। আলসেমি বর্জন করুন যদি ভুঁড়ি কে আপনার থেকে আলাদা করতে চান

দিনের এক ভাগে কঠোর পরিশ্রম আরেকভাগে একদম বসে থাকা – এমনটা করবেন না। কাজের যে ঘনত্ব তা যেন ইউনিফর্ম হয়।

সব নিয়মকানুন মেনে আপনি যদি দুপুরের পর থেকে আলসেমি করতে থাকেন, আপনার সব পরিশ্রম বিফলে যাবে।

১৮। পর্যাপ্ত ঘুমোন

প্রচুর পরিশ্রম করবেন, আলসেমি করবেন না, ব্যায়াম করবেন, সাস্থ্যকর খাবার খাবেন। সবই তো ঠিক আছে। তাহলে কি ঘুমবেন না? রাত্রেবেলাতেও পরিশ্রম করবেন?

না, এই ভুল করবেন। রাত্রি হল বিশ্রামের সময়। তাই ৮-৯ টার মধ্যে ডিনার সেরে ফেলুন। আর ১০-১০.৩০ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ুন।

১৯। সকালে তাড়াতাড়ি ওঠা অভ্যেস করুন

সকালে ৬-৬.৩০ টার মধ্যে উঠে যান।

২০। আত্মবিশ্বাস রাখুন ভুঁড়ি কমবেই

যতই আপনি ওষুধ খান, বা ডাক্তারের পরামর্শ মতো চলুন না কেন, যতক্ষণ না অবধি আপনি আপনার শরীরের ওপর বিশেষ ধ্যান দেবেন, সেই ওষুধ কাজে লাগবে না।

আপনি যখন এতো পরিশ্রম করার সাথে সাথে আপনার শরীরের ওপর বিশেষ ধ্যান দেবেন, আপনার শরীর কে ভালোবেসে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলবেন যা খুবই দরকার।

আত্মবিশ্বাস রাখুন আর ওপরের স্টেপ্স গুলো ফলো করতে থাকুন।  

২১। কন্টিনুয়েটি বজায় রাখুন

কন্টিনুয়েটি খুবই প্রয়োজন। যে কোন কাজেই কন্টিনুয়েটি না থাকলে তা সফল হয় না। আপনি যদি রেগুলার অফিসে না যান, আপনার যেমন চাকুরী চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ঠিক তেমনি আপনি যদি  আপনার এই নিয়ম গুলোতে কন্টিনুয়েটি না রাখেন, নতুন করে আবার চর্বি জমা হতে পারে আপনার শরীরে।

২২। ধৈর্য ধরুন

যে কোন এচিভমেন্ট এই সময় লাগে। তাই ধৈর্য ধরুন। হয়তো আপনার চর্বি ঠিক হারেই কমছে কিন্তু আপনি তা খালি চোখে বুঝতে পারছেন না।

ধৈর্য ধরুন আর ১৫ দিন ছাড়া টেপ দিয়ে মেপে চেক করুন, দেখবেন ভুঁড়ি কমছে।
টেপ দিয়ে সাইজ মাপুন

তাই আপনি একটা টেপ দিয়ে মেপে দেখতে পারেন। আর নিয়ম গুলো ১৫ দিন করার পর টেপ দিয়ে কোমরের এবং থাই এর সাইজ চেক করুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন।

আর বুঝতে পারলে, একটু হাসুন, আনন্দ করুন। কারন এটা আপনার এচিভমেন্ট।

ওপরের এই ২২ টি স্টেপ্স মাত্র ১০-১৫ দিন ফলো করে দেখুন তো ফল পান কিনা। আশা করি ১৫ দিনের মধ্যেই বুঝতে পারবেন যে ভুঁড়ি অনেকটাই কমে গেছে। আর কমেন্টবক্সে লিখে জানাতে ভুলবেন না যেন।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, সবাইকে ভালো রাখুন। চলুন, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে!  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট