স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো রাখার কিছু চমৎকার উপায়

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো রাখার উপায়

সংসারের সুখের ভরকেন্দ্র স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক এর মধ্যেই নিহিত থাকে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক যতই দৃঢ় বা মজবুত হয়, বাচ্চাদের ও সুখের জীবনের দেওয়ালগুলো ততই মজবুত হয়। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক এর ওপর গোটা পরিবারের সাস্থ্য নির্ভর করে।

যতই সভ্যতা এগোচ্ছে ততই পরিবারের দেওয়ালগুলো কেমন যেন আলগা হয়ে যাচ্ছে। আগেকার দিনের মতো বড় পরিবার এখন আর সচরাচর দেখা মেলে না।

রুচি অরুচি, পছন্দ-অপছন্দ,  ভালো লাগা আর না লাগার মধ্যে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাই না।

এর ফলে বেড়েছে অশান্তি, ঝগড়া, বিবাদ, বিচ্ছেদ, ইত্যাদি। প্রাচীনকালে, একটা পরিবারে ছিল একজন ই মালিক, পরিবারের বাকীরা থাকতো তার আন্ডারে। পরিবারের সবাই মালিকের ওপর নির্ভরশীল ছিল।

সাধারনত বাড়ীর মহিলারা থাকতো পুরুষদের অধীনে। তারা সব কিছুর জন্যই পুরুষদের ওপর নির্ভরশীল ছিল।

তাই নারীরা নীরবে ভালো না লাগা মেনে নিত, অত্যাচার সহ্য করে নিত। কিন্তু এখন যুগ বদলেছে। নারীরা বুঝতে শিখেছে। নারীরাই তো এখন সংসারের মালিক।

তাই একটা পরিবারে নারীরা সুখী থাকলে, গোটা পরিবার সুখে থাকবে।

সমীক্ষা করে দেখা গেছে একটা পরিবার সুখে থাকে যখন স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক মধুর হয়।

সম্পর্ক এমন জিনিষ যে সম্পর্ক যদি গাড় হয়, স্ত্রী স্বামীকে নিয়ে কুঁড়ে ঘরেও থাকতে পারবে, আবার সম্পর্ক যদি বিষাক্ত হয়, বিশাল রাজ প্রাসাদেও স্বামী স্ত্রীর মধ্যে নিত্য কলহ লেগে থাকবে।

ঘাবড়ে যাচ্ছেন কি করে সম্পর্ক গাড় করবেন, তাই ভাবছেন কি? একদমই ঘাবড়াবেন না।

জাস্ট কিছু টিপস যদি আপনি খেয়াল রাখতে পারেন, সম্পর্কের দেওয়ালগুলো নিজে নিজেই মজবুত হয়ে পরিবারে নিয়ে আসবে অসীম ভালোবাসা।

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গভীর করার জন্য কিছু টিপস

দেখে নিন কিছু টিপস যা এই সম্পর্ককে মজবুত করে তুলতে সাহায্য করবে-

১। আত্মত্যাগ

মাঝে মাঝে ছোটোখাটো আত্মত্যাগ করাই যায়। এতে যে ত্যাগ করে তার মধ্যে একটা আলাদা অনুভূতি জাগে, একটা ভালো লাগার অনুভূতি।

স্বামী স্ত্রীর জন্য এবং স্ত্রী স্বামীর জন্য যদি আত্মত্যাগ করতে পারে, তাহলে সেই সম্পর্ক জীবনভর মধুরতা বহন করে।

২। ক্ষমা

ভুল তো মানুষ মাত্রই হয়। কোন মানুষেই ১০০% নিখুঁত হয় না। দোষ- ত্রুটি তো সব মানুষেরই থাকে। ছেলে বা মেয়ে ভুল করলে, মা তার সন্তানকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু স্বামী বা স্ত্রী ভুল করলে, ক্ষমা করতে নিশ্চয়ই কষ্ট হয়?

কিন্তু ক্ষমা না করলে, যে ক্ষমা করে না ক্ষতি তারই বেশী হয়। ক্ষমা করলে, যে ক্ষমা করে সেই ব্যাক্তির মধে আলাদা একটা শান্তি অনুভুত হয় এবং অন্যজনের সাথে সম্পর্কও ভালো হয়।

৩। বিশ্বাস

বিশ্বাস
একে অপরের প্রতি বিশ্বাস

স্বামী স্ত্রী দুজনেই দুটি আলাদা পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা মানুষ। তাই এই দুই আলাদা প্রকৃতির মানুষ একে অপরের সাথে থাকতে পারে শুধুমাত্র ‘বিশ্বাস’ সেতুর ওপরে বসবাস করে।

এই সেতু ভেঙ্গে গেলে, ওই দুই সম্পর্ককে জোড়া লাগানো মুশকিল হয়ে ওঠে।

৪। নির্ভরতা

একে অপরের ওপর নির্ভরশীল
নির্ভরতা

স্বামী যদি কোন না কারনে তার স্ত্রীর ওপর নির্ভরশীল হয় এবং স্ত্রীও যদি কোন না কোন কারনে তার  স্বামীর ওপর নির্ভরশীল হয়, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক পেপার এবং পেন এর মতো দৃঢ় হয়ে ওঠে।

পেপার এর কোন ভেলু নেই যতক্ষণ না অবধি ওই পেপার এ পেন দিয়ে কিছু লিখা না হয়। পেন এরও কোন ভেলু নেই যদি না পেন দিয়ে লিখা হয়।

৫। শেয়ারিং

শুধুই কি স্কুল জীবনে বাচ্চারাই শেয়ারিং করবে? স্বামী স্ত্রী সম্পর্কেও শেয়ারিং মাধুর্য বাড়িয়ে দেয়। স্বামী স্ত্রীর সংসারের সমস্ত কাজ কর্ম শেয়ারিং করে করা উচিৎ।

কাজের মধ্যেও লিঙ্গ টেনে আনা উচিৎ নয়। এই কাজটি মেয়েদের, অমুখ কাজটি ছেলেদের- এইভাবে ভেদাভেদ করবেন না।

৬। কোন কিছু গোপন না করা

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে বিন্দুমাত্র গোপনতা থাকা উচিৎ নয়। আপনি যদি কিছু সমস্যা ফেস করে থাকেন, যা আপনি আপনার স্ত্রী কে বলতে পারছেন না, তাহলে আপনি লিখে সেই চিরকুট দিয়ে দিন আপনার স্বামীকে।

৭। উপহার

আপনি নিজের জন্য না কিনে যদি আপনি শুধু মাত্র আপনার স্ত্রীর জন্য কিনে থাকেন, আর আপনার স্ত্রীও তার জন্য না কিনে আপনার জন্য কিনে থাকে, তাহলে সম্পর্কের মধ্যে খুশীর জোয়ার আসে।

৮। স্পেস দেওয়া

স্পেস দেওয়া
কাপল স্পেস

একজনছেলের উচিৎ তার স্ত্রীকে স্পেস দেওয়া। মানে ওই সময়টিতে, মেয়েটি শুধু নিজের সাথেই থাকবে, শুধু নিজেকে নিয়ে ভাববে। আর মেয়েটিরও উচিৎ তার স্বামীকে স্পেস দেওয়া অন্ততপক্ষে ১৫ মিনিটের জন্য।

৯। সময় দেওয়া

এই ব্যস্ত জীবনে যেখানে স্বামী স্ত্রী দুজনেই চাকুরীজীবী, সেখানে দুজনেরই দুজনকে একান্তে সময় দেওয়া খুবই জরুরী।

১০। একই লোকেশেনে বাস করা

বর্তমানে দেখা গেছে যে স্বামী স্ত্রী দুজন দুই ভিন্ন রাজ্যে বসবাস করে। এর কারন তাদের চাকুরীতে পোস্টিং আলাদা।

অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী পরিবারের মধ্যে গ্রামের বাড়ীতে থাকে হাউস ম্যানেজার হিসেবে, আর তার স্বামীকে বহু দুরের রাজ্যে কিংবা বিদেশে যেতে হয় চাকুরী সুত্রে।

স্বল্প দিনের জন্য বা স্বল্প মাসের জন্য এই দুরত্ব তৈরি হলে তা খারাপ না। অনেকের ক্ষেত্রে এই স্বল্প দুরত্ব একে অপরের প্রতি অনেক টান বাড়িয়ে দেয়।

কিন্তু এই দুরত্ব যদি বহু বছরের জন্য হয়ে থাকে, তাহলে টান কমতে কমতে ক্রমশ শুন্যে পরিনত হয়।

তাই একই লোকেশেনে বাস করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিৎ।

১১। ব্যস্ততা

স্বামী স্ত্রী দুজনেই যদি দিনের পর দিন কাজ সেরে বাড়ীতে বসে থাকে, তাহলে বিভিন্ন রকমের বাজে চিন্তা এসে দুজনের মনকেই কলুষিত করে তুলে।

তাই দুজনেরই উচিৎ ফ্রি সময়টাকে খুব ভালো ভাবে কাজে লাগানো। যেমন ধর-

একসাথে সিনেমা দেখা

আপনি এবং আপনার স্ত্রী ঘরে বসে খুব সুন্দর একটা মুভি দেখতে পারেন কিংবা সিনেমা হলে গিয়েও দেখতে পারেন।

একসাথে রান্না করা

আপনার বাড়ীতে যদি রান্নার জন্য লোক থেকে থাকে, তাকে আপনাদের ফ্রি দিন গুলোতে ছুটি দিয়ে দেন। তারপরে, আপনি এবং আপনার স্ত্রী একসাথে কিছু ভালো খাবার বানান।

আপনি আপনার স্ত্রীর পছন্দমতো মেনু বানান। আপনার স্ত্রীও আপনার পছন্দমতো মেনু বানাবেন।

মেনুর টেস্ট যেমনই হোক না কেন একে অপরের প্রশংসা করুন।

একসাথে গাছ লাগানো

ফ্রি সময়ে একসাথে আপনার বাড়ীর উঠোনে কিছু গাছ লাগান। আজ আপনি কাল আপনার স্ত্রী গাছে জল দেবেন- এইভাবে রুটিন ঠিক করে নিন।

ঘর গোছানো

আপনারা দুজনে একসাথে ঘর গোছাতে পারেন। ঘরের জিনিষপত্রের পজিশেনগুলো মাঝে মাঝে পরিবর্তন করে ফেলুন।

পুরানো জিনিষ যা আপনারা ব্যবহার করেন না সেইসব জিনিষ আপনারা কাউকে দিয়ে দিন । এর ফলে ঘরের মধ্যে অনেকটা জায়গা পাবেন।

ঘর টাকে নতুন নতুন লাগবে। এর ফলে আপনাদের মন ভালো হয়ে যাবে।

একে অপর এর যত্ন নেওয়া

ফ্রি সময়ে আপনি আপনার স্ত্রী কে ফেস প্যাক লাগিয়ে দিতে পারেন, মাথায় হেনা লাগিয়ে দিতে পারেন।

আপনার স্ত্রীও আপনার মুখে ফেস প্যাক লাগিয়ে দিতে পারেন। এইভাবে আপনারা দুজনেই একে অপরের যত্ন নিন।

বাচ্চাকে নিয়ে একাসাথে রিলাক্স করুন

বাচ্চাকে আপনারা দুজনে একসাথে নাচ, গান শেখাতে পারেন। কিংবা তিন জন একসাথেই ছবি আঁকতে পারেন।

বাচ্চাকে নিয়ে আপনারা কিছুক্ষণের জন্য মজা করুন। আপনারা দুজনেই বাচ্চাটিকে হাসানর চেষ্টা করুন। আর এই সুযোগে আপনারাও হাসতে থাকুন।

এই ১১ টি উপায় অবলম্বন করে দেখুন তো। দেখবেন যে মানুষটার সাথে আপনার প্রায়ই ঝাগড়া বাধতো, সেই মানুষটাকে নতুন লাগছে। সম্পর্কের মধ্যে কে যেন ভালোবাসা ঢুকিয়ে দিয়েছে।

স্বামীস্ত্রীর সম্পর্ক তো এমনই হয়ে থাকে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক খুবই ফ্লেক্সিবেল। আর এই সম্পর্ক কে তো আপনারাই পারেন মজবুত করতে।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, সবাইকে ভালো রাখুন। চলুন, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে!  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট