এই জটিল সমাজে ভাল থাকাটাও জটিল হয়ে উঠেছে। তাই তো আপনারা গুগুল করছেন –কিভাবে ভালো থাকা যায়। কিন্তু মনে রাখবেন কোন কিছুই জটিল নয়। আমরা মানুষেরা অনেক কিছু করতে পারি। একমাত্র মানবজাতিই পারে খুব ভাল কিছু করতে আবার খুব খারাপ কিছুও করতে।
এই টপিকে আমি সেই নিয়েই আলোচনা করবো –কি করে আপনি ভালো থাকবেন? আমি এমন একজন কে ভালো থাকতে সাহায্য করবো যার অবস্থা সবচেয়ে দুর্বিষহ। ধরে নেব –আপনিই সেই মানুষটি যার অবস্থা এতটাই বাজে যে ভালো থাকা যায় না। আর সেই অবস্থা থেকেই আমি আপনাকে ভালো থাকার অবস্থায় নিয়ে আসবো । আর এই কারনে আপনাকে শেষ অবধি এই লিখাটি পড়তে হবে।
যা যা বলবো, পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে সেইসব কিছু মেনে চলতে হবে। যদি আপনি ভালো থাকতে চান, আর সব কিছু মেনে চলতে রাজী আছেন তাহলেই লিখাটি পড়তে থাকুন, ভিডিওটি দেখতে থাকুন। আর শেষে আমাকে কমেন্ট করে জানান, আমি কি আপনার অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি?
আচ্ছা, সব সময় কি আপনার সাথে সব কিছু ভালো হতে হবে? তাহলেই কি আপনি ভালো থাকবেন? এই পৃথিবী তে কেউ কি আছে যার সাথে সবসময়ই ভালো হয়ে থাকে? যদি এরকম কেউ থাকে, তাহলে প্লীজ কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না যেন।
ভালো থাকার জন্য কি শর্ত থাকে? ভালো কিছু হলেই ভালো থাকবেন, যতক্ষণ ভালো কিছু হবে, ততক্ষন ভালো থাকবেন। আর খারাপ থাকার জন্য শর্ত গুলো কি কি , একটু ভেবে দেখুন তো। দেখবেন খারাপ থাকার পেছনে হাজারটা কারণ খুঁজে পাবেন, কিন্তু ভালো থাকার পিছনে কোন কারণ খুঁজে পাবেন না। কিন্তু এরকমটা কেন হয়, জানেন কি ?
এরকম হয় পরিবেশের জন্য। আমরা যে পরিবেশে বাস করি, সেই পরিবেশ দূষিত। এখানে বেশীরভাগ মানুষেই চিন্তিত, ভালো থাকতে পারে না। আর আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি যে কেউই ভালো নেই। তাই বড় হয়ে আমরাও ভালো থাকতে পারি না।
কিন্তু তা হলে কি কেউই ভালো নেই? না, এমনটাও নয় । যারা ভালো থাকার কলাকৌশল জানেন, তারা ঠিক ভালো থাকেন। তা হলে কি আপনি বলবেন তাঁদের জীবনে কোন দুঃখ কষ্ট নেই, তাই তারা ভালো থাকেন? না, এমনটাও নয়। তাঁদের জীবনেও প্রচুর দুঃখ কষ্ট আছে। কিন্তু তাও তারা ভালো আছেন।
চলুন, আজ আমি তারা কি করে ভালো আছেন, সেই কথাই আপনাকে বলবো। দেখে নিন কিভাবে ভালো থাকা যায়।
কিভাবে ভালো থাকা যায়?
ভালো এক খানা পোশাক কিনতে গেলে, আপনাকে অনেকগুলো ড্রেস নেড়েচেড়ে দেখতে হয় তো? কিম্বা অনেক দোকানে ঘুরতে হয় তো? ভালো খাবার খেতে গেলেও, খুব ভালো করে রান্না করতে হয়, কিম্বা ভালো টাকা রোজগার করে খাবার টা কিনতে হয়। তাই তো?
ঠিক তেমনিভাবেই, ভালো থাকতে গেলেও আপনাকে কিছু কাজ করতে হবে, তার জন্য কিছু সময় ব্যয় করতে হবে। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া কি সেই কাজ গুলো আর কতটা সময় তাতে ব্যয় করবেন।
নীচে উল্লিখিত কিছু টিপস ফলো করুন। আপনিও শিখে যাবেন ভালো থাকতে। সময় কম থাকলে ভিডিওটি দেখে নিন, নয়তো এই আর্টিকেল টি পড়া কন্টিনিউ রাখুন।
১। নিজেকে সময় দিন (৫ মিনিট)
প্রচুর মানুষ বলে থাকেন- “নিজেকে সময় কি করে দেব? ২৪ ঘন্টাই ব্যস্ত থাকি তো”। নিজেকে সময় কিভাবে দেবেন তা একটা সহজ উদাহরনের মাধ্যমে বোঝাই।
একটা আলমিরা এর কথা ভাবুন। আলমিরার ভেতরের জায়গাটাকে ২৪ ঘন্টা সময় ভাবুন। আর যেসব জিনিষপত্র রাখেন আলমিরার ভেতরে সেগুলোকে আপনার কাজকর্ম ভাবুন।
এরপর একইরকমের একই সাইজের দুটো আলমিরার কথা ভাবুন। একটা আলমিরাতে জিনসগুলোকে এলোমেলো করে রাখা আছে, আরেকটি আলমিরাতে জিনিষ গুলো গুছিয়ে রাখা আছে। দুটো আলমিরাতেই সম পরিমানে জিনিষ রাখা আছে।
সব জিনিষ গুছিয়ে রাখার পরও কোন আলমিরাতে বেশী খালি জায়গা পাওয়া যাবে, বলুন তো?
যে আলমিরাতে জিনিষগুলো গুছিয়ে রাখা আছে, সেই আলমিরাতে বেশী জায়গা পাওয়া যাবে, তাই কি নয়? এটা পরীক্ষা করেও দেখতে পারেন।
ঠিক একইরকমভাবে সময় বার করার জন্য আপনাকে কাজগুলোকে গুছিয়ে নিতে হবে। আপনি লক্ষ্য করে দেখে থাকবেন যে আপনি প্রচুর সময় নষ্ট করে থাকেন। কখনো মোবাইলে চোখ রেখে আবার কখনো অযথা অন্যের চর্চায় মেতে সময় নষ্ট করেন, যা আপনার চোখেই পড়ে না।
এরপর থেকে আপনি নিজের সারাদিনের কাজকর্মগুলোর ওপরে নজর রাখুন। আপনি চাইলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কোথায় কোথায় সময় নষ্ট হচ্ছে।
২। এক্সারসাইজ করুন (১০ মিনিট)
প্রত্যেকদিন অন্ততপক্ষে ১০ মিনিট এক্সারসাইজ করুন, যাতে শরীর থেকে ঘাম বেরোয়। এই ঘামের মাধ্যমে শরীর ও মন দুইয়েরই আবর্জনা বেরিয়ে যায়।
৩। প্রচুর পরিমানে জল খান (৪- ৫ লিটার)
সারাদিন কমপক্ষে ৪-৫ লিটার জল খান। গ্লাসে নিয়ে জল খান। বোতল থেকে হাঁ করে জল খাবেন না। বোতল থেকে জল খেতে পারেন, কিন্তু সেই ক্ষেত্রে বসে বসে মুখ লাগিয়ে জল খেতে হবে।
যদি কোনোদিন বাড়ীর বাইরে জল খেতে হল- তখন আপনি হাঁ করে বোতল থেকে খেতেই পারেন। কিন্তু বাড়িতে থাকাকালীন চেষ্টা করবেন গ্লাসে করে জল খেতে।
৪। জাঙ্ক ফুড বর্জন করুন (মাসে ১ বার)
ফাস্ট ফুড/ জাঙ্ক ফুড বর্জন করুন। ৩মাসে একবার বাইরের খাবার খেলে ঠিক আছে। যদি না পারেন, তাহলে দুইমাসে ১ বার খান। তাও যদি না পারেন মাসে ১ বার জাঙ্ক ফুড খান।
৫। ডিপ ব্রিদিং করুন (দিনে ৫ বার, প্রতিবার ২ মিনিট করে)
সকালে ঘুম থেকে উঠেই ২ মিনিট ডিপ ব্রিদিং করুন, বিছানা তে থাকা অবস্থাতেই। রাত্রেও ঘুমোতে যাওয়ার আগে ২ মিনিট ডিপ ব্রিদিং করুন। আর বাকী সময়ে আরও ৩ বার ডিপ ব্রিদিং করুন।
৬। রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার আগে বিছানা ব্যবহার করবেন না ( শুধু ঘুমবার সময়ে ব্যবহার করুন)
যে বিছানাতে আপনি রাত্রে ঘুমোবেন, সেই বিছানা সারাদিনে ব্যবহার করবেন না। এর ফলে রাত্রে ওই বিছানা তে ভাল ঘুমোতে পারবেন। সারাদিন যদি মাঝে মাঝে বিছানা তে সময় কাটান, তাহলে বিছানাতে উঠে ক্লান্তি ঘোচানোর এক অপরুপ আনন্দ অনুভব করবেন।
৭। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রশংসা করুন (২ মিনিট)
ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রশংসা করুন। নিজের পজিটিভ দিকগুলোকে তুলে ধরুন। আর ইউনিভার্স কে সেইজন্য ধন্যবাদ জানান।
৮। বাচ্চাদের সাথে খেলুন (১০ মিনিট)
বাচ্চাদের সাথে ১০ মিনিট খেলুন। এতে বাচ্চারও মন ভাল হবে। আপনারও ভাল লাগবে।
৯। অযথা সময় নষ্ট করা বন্ধ করুন
আপনি যদি সময় নষ্ট না করেন, দেখবেন আপনি অনেক বাড়তি সময় পাচ্ছেন।
১০। প্রায়রিটি সেট করুন
কোন কাজ টা কে কতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত, কোন কাজটা কতক্ষন ধরে করবেন এইসব কিছু সেট করে রাখুন।
প্রায়রিটি সেট করা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নিজেকে সময় দেওয়া, একটু এক্সারসাইজ করা- এইসব কিছুকে সবচেয়ে বেশী প্রায়রিটি দিন। মনে রাখবেন যে আপনি যদি নিজেকে ভাল রাখতে না পারেন, তাহলে বাড়ীর আর কাউকেই ভাল রাখতে পারবেন না।
সবার আগে নিজেকে ভাল রাখুন। নিজের যত্ন নিন, খেয়াল রাখুন।
উপসংহার
এখনকার দিনে নিজের জন্য সময় বার করে নেওয়া টা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি নিজের জন্য সময় বার করতে না পারেন, তাহলে আপনি কখনোই নিজেকে ভাল রাখতে পারবেন না। তাই সবার আগে নিজেকে সময় দিন।
আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে কিভাবে ভালো থাকা যায়। তাই আজ এই মুহূর্ত থেকে এই সব কয়টি টিপস মেনে চলুন। আর ১০-১৫ দিন পরে আমাকে কমেন্ট করে জানান যে আপনার মধ্যে কোন পরিবর্তন এল কিনা। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন আর সকলকে ভালো রাখবেন।