আধ্যাত্মিকতার গুরুত্ত্ব

আধ্যাত্মিকতা

আপনি কি আধ্যাত্মিকতার গুরুত্ত্ব জানতে প্রচুর গুগুল সার্চ করেছেন? কিন্তু কোন লিখাই আপনার মন কে শান্ত করতে পারে নি? আপনি কি মনের মতো উত্তর পান নি? আপনি কি এখনো জানতে ইচ্ছুক যে আধ্যাত্মিকতার গুরুত্ত্ব কি? তাহলে এই পোস্ট টি শেষ অবধি পড়তে থাকুন।

আধ্যাত্মিকতার গুরুত্ত্ব

আধ্যাত্মিক মানে কি

আধ্যাত্মিক মানে কি জানেন? আধ্যাত্মিক মানে হল আত্মা থেকে আগত। তাহলে আত্মা মানে কি? আত্মা হল এমন এক অংশ যার জন্য শরীর প্রান পেয়ে থাকে। সেই কারনেই মানুষের আত্মা যখন শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, মানুষটির তখন মৃত্যু ঘটে। অর্থাৎ শরীর হল আত্মার ঘর।

আত্মা কে ভালো রাখতে হলে শরীরের যত্ন নেওয়া আবশ্যক। আবার শরীর কে ভালো রাখতে হলে আত্মা কে ভালো রাখা আবশ্যক।

আধ্যা মানে হল কাজে প্রতি নিষ্ঠাবান। আত্মিক শব্দের অর্থ হল হৃদয় ঘটিত বা আত্মা সম্পর্কিত। তাহলে আধ্যাত্মিক শব্দের অর্থ এই দাঁড়ায় যে আত্মা সম্পর্কিত কাজে নিষ্ঠাবান। কিন্তু আত্মা সম্পর্কিত কাজগুলো কি?

এইসব কিছু জানতে শেষ অবধি পড়ুন।

আপনি কি জানেন যে তথাকথিত ভগবান বা গড বা আল্লাহ্‌ কে বিশ্বাস না করেও আধ্যাত্মিক হওয়া যায়, যা স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন। ঈশ্বর বা ভগবান বা গড বা আল্লাহ কে পূজা না করে বরং সৃষ্টি কর্তার পূজা করুন।

পূজা মানে ধুপ জ্বালিয়ে, ঘন্টা বাজিয়ে, ভোগ সাজিয়ে নয়, পূজা নয় যেসব জিনিষ সমাজ কে কষ্টে রেখেছে, সেই সব জিনিষ কে উপড়ে ফেলা। পূজা মানে পরিবেশ আর সমাজের যত্ন নেওয়া।

আধ্যাত্মিক চিন্তা

আধ্যাত্মিক চিন্তা হল জীবনের সঙ্কীর্ণ গণ্ডী থেকে বেরিয়ে এসে সৃষ্টির মঙ্গলের চিন্তা করা। আর এই জন্য আত্মবিকাশ বা আত্মশুদ্ধি প্রয়োজন। তাই আগে নিজের আত্মাকে উন্নত করুন।

আত্মা হল পরমাত্মার অংশ। আমার মতে পরমাত্মা হল সৃষ্টিকর্তা, অসীম শক্তির অধিকারী। যে শক্তি এই মহা ইউনিভার্স কে তৈরি করেছেন, কোটি কোটি সৌরজগৎ কে তৈরি করেছেন, সেই শক্তিই আমার কাছে সৃষ্টিকর্তা।

চিন্তা শুদ্ধ না হলে আপনি নানান দিক দিয়ে নানান কষ্ট পাবেন, যা আমরা সবাই কম-বেশি পেয়ে থাকি। পূজা করেও কাজ দেয় না- তখন হয়ত ভাবেন ঈশ্বর নেই। কিন্তু আসল জিনিষের ওপর ফোকাস করেন না। আর এখানেই তো ভুল করেন।

এই ঈশ্বর শক্তি শিব বা দুর্গা নয়, বরং এক শক্তি বা নিয়তি বলতে পারেন যিনি সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার প্রোগ্রামার। এই অসীম শক্তি কোডিং করে রেখেছেন। আত্মার উন্নতি না হওয়া অবধি সৃষ্টিকর্তা আত্মাকে উপলব্ধি করানোর জন্য নানান রকমের কষ্ট দিয়ে থাকেন।

কষ্টের মধ্য দিয়েই উপলব্ধি আসে। উপলব্ধি এলেই চিন্তার বিকাশ ঘটে। চিন্তার বিকাশ ঘটলে আত্মা শুদ্ধ হয়। কিন্তু ১০০% শুদ্ধ হলে পরেই ওই আত্মার কাজ শেষ হবে মানে ওই পরমাত্মা বা অসীম শক্তির মধ্যে মিলিয়ে যাবে।

আধ্যাত্মিক চিন্তা তাহলে কি? সহজ কথায় আধ্যাত্মিক চিন্তা হল সমাজের ভালোর চিন্তা করা। অনেক অনেক পরিবার নিয়েই তো সমাজ। তাই প্রতিটি পরিবার কে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়া, তাদের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া আর শেষে সমাজের মঙ্গল চিন্তা করাই হল আধ্যাত্মিক চিন্তা।

অনেক মুনি ঋষিরা আজও হিমালয় পর্বতে ধ্যানে ব্যস্ত। কারন তারা জানেন যে এই বৃহৎ সমাজ এর মঙ্গল করতে গেলে, ধ্যান দিয়েই তা সম্ভব। কারন আপনি কতজন মানুষ কে বোঝাবেন, অনেকেই আপনার কথা শুনবে না।

তাই আপনি আপনার কাজ করে যান, আপনি আপনার শুদ্ধ চিন্তা দিয়ে সমাজের মঙ্গলের কথা ভেবে যান। এইভাবে ধীরে আপনাদের বা আমাদের মতো মানুষের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে একদিন সত্যিই অনেক আত্মা ১০০% শুদ্ধ হয়ে যাবে। হয়ত কিছু মুষ্টিমেয় আত্মা পরিবর্তিত হবে না, আর তখন প্রকৃতি তার বিধ্বংসী রূপ দিয়ে পুরানো সমাজের শেষ করে নতুন সমাজ গড়ে তুলবেন।  

আধ্যাত্মিকতা অর্জনের উপায়

আত্মা কে উন্নত করে কাজে একনিষ্ঠ করার উপায় হল চিন্তার শুদ্ধিকরন। সবচেয়ে প্রথম স্টেপ হল চিন্তা গুলো কে শুদ্ধ করা, যে চিন্তাগুলো সবসময় মনের মধ্যে চলতে থাকে।

কিন্তু প্রথম স্টেপ টাই সবচেয়ে জটিল। আর এইজন্য আপনাকে খুব চেষ্টার সাথে লেগে থাকতে হবে। নিজের চারপাশে একটা কাল্পনিক ডাস্টবিন তৈরি করে ফেলুন। যে মুহূর্তেই কোন অশুভ চিন্তা আসবে, সেই মুহূর্তেই ফলের খোসার মতো সেই কাল্পনিক ডাস্টবিনে ফেলে দিন।

নিউটনের ইনারসিয়া ফর্মুলা পড়েছেন তো? যে বস্তু স্থির আছে, সেই বস্তু স্থিরই থাকবে, আর যে বস্তু ঘুরছে সেই বস্তু ঘুরতেই থাকবে। এই ফর্মুলা তো পুরো ইউনিভার্সের প্রতিটি সদস্য ফলো করছে। আর একইভাবে আপনি আর আমি ও ফলো করছি।

সেইজন্যই যে প্রোগ্রামিং বা কোডিং করা আছে আমাদের জীবন সেইভাবেই এগোচ্ছে। সহজ কথায় আমরা এটাকেই বলি- ভাগ্যে যা আছে তা হবেই। কথা টা একদম ঠিক। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনি সেটা কে বদলাতে পারবেন না।

আপনার লিখিত ভাগ্য কে বদলাতে গেলে আপনাকে এক্সট্রা বল প্রয়োগ করতে হবে। মানে ধরুন- শুরুটাই জোর করে করতে হবে। আপনার কিছুতেই ইচ্ছে করবে না ধ্যান করতে। কিন্তু আপনাকে তাও করতে হবে।

কোন গাড়ি খারাপ হলে, শুরুতে যেমন ঠেলতে হয়; ঠিক সেইরকম আপনাকেও নিজেকে ঠেলতে হবে। মনের মধ্যে খুব জোর ইচ্ছা রাখতে হবে যে আপনি পারবেন, আপনি প্রতিদিন ধ্যানে বসে, মন কে চিন্তা শুন্য করবেন।

মন কে চিন্তা শুন্য করা খুব কঠিন। সেই কারনেই মনের মধ্যে চোখ বন্ধ রাখা অবস্থায়, আপনি কিছু শুভ চিন্তা গুলো মোবাইলে রেকর্ড করে নিয়ে তা কানের মধ্যে ইয়ার ফোন লাগিয়ে বাজাতে থাকুন ধ্যানের সময়ে।

সেই শুভ চিন্তাগুলো আত্মকেন্দ্রিক যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। আর এই ক্রিয়াকেই পূজা বলে মানুন। প্রত্যহ চানের পর এই পূজা করুন।

ধীরে ধীরে আপনার মধ্যে পরিবর্তন আসবে। আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার কি রকম কাজ করা উচিত যাতে সমাজের উপকার হয়।

এইভাবে করতে করতে ধ্যানের সময় টা ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকুন। শুরুতে ১০ মিনিট এ করুন। পরে পরে ৩০ মিনিটের ধ্যান করুন।

প্রত্যহ এই পূজা করতে থাকলে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে। আপনি বুঝতে পারবেন আধ্যাত্মিক চিন্তা কি। তবে শুরুর দিকে এ বড় কঠিন কাজ, আর যখন আপনার অভ্যেস হয়ে যাবে সমাজের জন্য পূজা করা, তখন এ এক অদ্ভুত অনুভুতি।

আধ্যাত্মিক সাধনা

আধ্যাত্মিক সাধনা মানে আত্মার উন্নতির জন্য যে সাধনা সেই সাধনা নিয়মিত করলে আপনি এক অদুভত রকম অনুভব করবেন।

আপনি বুঝতে পারবেন এই পৃথিবীতে আপনার আসার উদ্দ্যেশ্য কি। আপনি কিভাবে সমাজের উপকার করতে পারেন। কিছু মানুষের দুঃখ কষ্টের পেছনে কারন কি। এইসব কিছু আপনার কাছে জলের মতো পরিস্কার হয়ে যাবে।

আপনি বুঝতে পারবেন মূর্তি পূজা সাময়িক শান্তি, কিন্তু আধ্যাত্মিক সাধনা প্রতি মুহুরতের শান্তি। আপনি যখন পুরো সমাজ কে নিজের পরিবার বলে মান্য করবেন, তখন দেখবেন ছোটোখাটো কষ্ট আপনাকে বিচলিত করছে না।

ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা

আধ্যাত্মিক সাধনার সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। এখানে ধর্ম বলতে মানুষের বানানো হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান এইসবের কথা বলছি। যদি আপনি ধর্ম বলতে যে কোন মানুষের কল্যান বা জাতি, বর্ণ, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান নির্বিশেষে সমাজের সার্বিক কল্যানের কথা বলেন, তাহলে আধ্যাত্মিক সাধনার সাথে ধর্মের অবশ্যই লিঙ্ক আছে।

আধ্যাত্মিক সাধনা আমাদের সমাজে প্রচলিত ধর্মের সঙ্কীর্ণ গণ্ডীর অনেক ওপরে আমাদের নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে আমরা অনেক পজিটিভ শক্তির অধিকারী হতে পারি।

আশা করি এরপর বুঝতে পেরেছেন আধ্যাত্মিকতার গুরুত্ত্ব কি, আধ্যাত্মিক সাধনা বলতে কি বোঝায়। কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন যে এই পোস্ট টি আপনাদের কেমন লাগলো। আপনারা কি এই আমার মতের সাথে একমত? যদি ভিন্ন মত পোষণ করে থাকেন, তাহলে তা লিখতেও দ্বিধা বোধ করবেন না। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

One thought on “আধ্যাত্মিকতার গুরুত্ত্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট