আমিষ ও নিরামিষ আহার (Amish O Niramish Ahar)

আমিষ ও নিরামিষ

আমিষ ও নিরামিষ আহার নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা এখানে আলোচনা করবো। এইসবের আগে আহার নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।

বেঁচে থাকার জন্য আহার তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্ত তা কিভাবে? আমরা যা কিছু খাই সেইসব কিছু আমাদের শরীরের ভেতরের প্রতিটি কোষের মধ্যে মিশে যায়। আর আমরা খাই বলেই তো আমাদের বৃদ্ধি হয়।

খাবার ছাড়া বেড়ে ওঠা অসম্ভব। আর এর মানে তো এই দাঁড়ায় যে আমরা যা খাই, আমাদের কোষ তথা সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো তাই দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে।

আমাদের খাদ্যসমুহ কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে- নিরামিষ ও আমিষ। এরপর দেখে নেওয়া যাক কোন খাবার কিরকম।

আমিষ ও নিরামিষ আহার (Amish O Niramish Ahar)

আমিষ ও নিরামিষ কাকে বলে

আমিষ শব্দের অর্থ প্রোটিন। প্রচলিত অর্থে ডিম, মাছ, মাংস এইসব খাবারকে আমিষ বলা হয়ে থাকে।

পেঁয়াজ, রসুন কি আমিষ?

পেঁয়াজ বা রসুন আমিষ নয়, কিন্তু কোন বিশেষ কারনে এদের কে আমিষের পর্যায়ে ফেলা হয়ে থাকে। পেঁয়াজ বা রসুনে যে খুব বেশী প্রোটিন থাকে তাও নয়, তাহলে প্রশ্ন হল কেন এদের কে আমিষের গ্রুপে ফেলা হয়?

আমাদের আহার দিয়ে আমাদের দেহকোষ তৈরি হয়ে থাকে। তাই আমার মতে আমিষ আর নিরামিষের সংজ্ঞা কি তা একবার দেখে নিও। তবে তোমাকেও যে তাই ভাবতে হবে এমনটা কিন্তু নয়। তবে আমিষ ও নিরামিষের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে নিলে, বুঝতে পারবে যে পেঁয়াজ বা রসুনকে প্রাচীনকালে কেন আমিষ পর্যায়ে ফেলা হত।

আমিষ ও নিরামিষ

আহারটি সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়া উচিত। তুমি যা খাও, সেইসব কিছু খাবার এর জন্যই তোমার বৃদ্ধি হয়। এমনকি তোমার চিন্তা ভাবনাগুলোও তোমার খাবারের ওপর নির্ভর করে থাকে।

পেঁয়াজ, রসুন বেশী পরিমানে খেলে সত্ত্ব গুনের হ্রাস হয়ে থাকে। তার বদলে দুধ,দই, এইসব খাবার খেলে সত্ত্ব গুনের বৃদ্ধি হয়। পেঁয়াজ, রসুন খাওয়ার পরে মুখ থেকে বিশ্রী রকমের একটা উগ্র গন্ধও আসে। এইসব কারনেই পেঁয়াজ, রসুন কে আমিষের মধ্যে ধরা হয়।

আমিষ খাওয়ার ভালো দিক

আমিষের মধ্যে মাছ হল সর্বশ্রেষ্ঠ। মাছের মধ্যে যথেষ্ট পরিমানে প্রোটিন থাকে। মাছ খেলে শরীর খুব বেশী ভারী ও লাগে না। মেদ জমে না। কিন্তু মাংস খেলে শরীরে মেদ জমতে পারে।

তবে তুমি কিভাবে রান্না করছ সেটা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। তুমি যদি রান্নাতে বেশী পরিমানে পেঁয়াজ, রসুন, তেল, ঘি এইসব দিয়ে থাকো, তাহলে সেইসব খাবার তোমার শরীরে ক্ষতি করতে পারে।

তুমি যদি মাংস টা হাল্কা তেলে, কম আঁচে রান্না করো; আর পনীর টা প্রচুর পরিমানে পেঁয়াজ, রসুন, তেল দিয়ে রিচ রান্না করো, সেইখেত্রে কিন্তু পনীর এর চেয়ে মাংস রান্না টাই ভালো খাবার হিসেবে গন্য হবে।

প্রাণী হত্যা বলেই যে আমিষ খাবার কে বাজে খাবারের তালিকায় রাখা হয় তা কিন্তু নয়। উদ্ভিদের মধ্যেও প্রান আছে।

লক্ষ্য করে দেখে থাকবে যেসব খাবার তামসিক গুন বাড়িয়ে তোলে, সেইসব খাবারকেই আমিষ বলে গন্য করা হয়ে থাকে।

খেয়াল করে দেখে থাকবে যে যারা প্রচুর রিচ মানের আমিষ রান্না খেয়ে থাকে, তারা সহজেই রেগে যায়, শান্ত মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাদের মন চঞ্চল হয়ে থাকে। তাদের কর্মক্ষেত্রে তাদের মালিক তাদের ওপর রাগারাগি করলে, তারা সেই রাগ দুর্বলের ওপর ঝেড়ে ফেলে। পরে আফসোস করে।

অনেকেই এই সমস্যায় ভুগে- রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারে না। রাগ কে কন্ট্রোল করতে হলে, সবার আগে খাবার কে কন্ট্রোল করতে হবে। যে খাবার কে কন্ট্রোল করতে পারে না, তার পক্ষে রাগ কে কন্ট্রোল করা প্রায় অসম্ভব।

নিরামিষ খাওয়ার ভালো দিক

নিরামিষ খাবার খেলে তুমি ক্রমশ হয়ে উঠবে ধীর স্থির, শান্ত স্বভাবের। তবে নিরামিষ খাবার হলেই হবে না, রান্নাটিও উৎকৃষ্ট প্রকৃতির হতে হবে। যে নিরামিষ খাবার বেশী তেল, ঘি দিয়ে রান্না হয় না, এবং পেঁয়াজ, রসুন দিলেও অল্প পরিমানে দেওয়া হয়ে থাকে, সেইসব খাবার কয়েক মাস খেলেই তোমার আচার, আচরণ বদলাতে থাকে। তুমি নিজেই সেইসব কিছু টের পাবে।

তুমি শান্ত মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তোমার মধ্যে অনেক ভালো চিন্তা আসবে। খারাপ সময়ে হুট করে রেগে যাবে না। কর্মক্ষেত্রে ঝাড় খেলেও সেই রাগ অন্যের ওপর ঝেড়ে ফেলবেন না। রাগ কে পুরোপুরি নিজের কন্ট্রোলে আনতে পারবেন।

আমিষ ও নিরামিষ দুইই খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা

আমিষ নাকি নিরামিষ? এইসবে কিছুই যায় আসে না। কিভাবে আর কি দিয়ে রান্না করছেন- এইসব বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আর সেইসব খাবার কিভাবে খাচ্ছেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।

সব খাবারের মধ্যেই ভালো দিক আছে, বিশেষ করে সবরকম সব্জির মধ্যে। আর আমিষ খাবারের মধ্যে যে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন থাকে, তা আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকার। তুমি যদি আমিষ না খাও, তাহলে তোমার দুধ, দই, পনীর এই জাতীয় খাবার খুবই দরকার।

তুমি যখন খাও, তখন সচেতনতার সাথে খাও তো? অন্ততপক্ষে খাবার সময়টাতে, নিজের শরীরের অঙ্গগুলোর কথা ভেবে খাবার গ্রহন করো তো? যেমন ধরো- খাওয়ার সময়ে কথা না বলে, ভালো করে খাবার টা চিবিয়ে তাকে খাদ্যনালীতে পাঠানো –এইসবের দিকে ধ্যান দেওয়া উচিত। খাওয়ার আগে তা সৃষ্টি কর্তাকে নিবেদন করে, খাবারটিকে প্রসাদ বানিয়ে গ্রহন করা উচিত।

প্রাপ্ত বয়স্কদের কখনোই পেট ভর্তি করে খাওয়া উচিত নয়। এতে পাকস্থলীর ওপর চাপ পড়ে। দুটো বড় মিল (meal) এর মাঝে যথেষ্ট গ্যাপ দেওয়া উচিত। বেশী রাত্রিতে ডিনার করা উচিত নয়। বিয়ে বাড়ি বা কোন অনুষ্ঠান বাড়ীতে গেলে সেখানে কখনোই বেশী খাওয়া উচিত নয়।  

ভালো রান্না করে খাবার খেলেই যে শরীর ভালো থাকবে, তাও নয়। সারাদিন ভালো খাবার খেয়ে তুমি যদি বসে শুয়েই সময় কাটিয়ে দাও, তাহলে ওই ভালো খাবারও শরীরের মধ্যে চর্বির জন্ম দেবে। আবার প্রত্যহ মাছ, মাংস খেয়েও তুমি যদি প্রচুর পরিশ্রম করো, অন্যের ভালো করার চিন্তা রাখো, তাহলে সেই খাবার তোমার শরীরে চর্বির জন্ম দিতে সাহস পাবে না।

উপসংহার

কর্মই ধর্ম। খাবার আমাদের কর্ম করার জন্য আবশ্যক। ভালো খাবার না খেলে, শরীর পুষ্টি পাবে না। শরীর দুর্বল হয়ে যাবে। শরীর দুর্বল হয়ে গেলে, আমরা কোন কাজেই মন বসাতে পারবো না। তাই সঠিক সময়ে সঠিক পরিমানে সঠিক খাবার খাওয়াটা খুবই জরুরী।

আমিষ খাবার তুমি খেতেই পারো, কিন্তু লোভে পড়ে অনেকটা খেয়ে নিও না। নিজের ওপর কন্ট্রোল রেখে তুমি যদি পরিমিত আমিষ খাবার খেতে পারো, তাহলে সেই খাবার তোমার শরীর ও মনে কোন বাজে প্রভাব ফেলতে পারবে না।

তাও তোমার যদি মনে হয় যে তুমি বুঝে উঠতে পারছ না –তোমার আমিষ খাওয়া উচিত কিনা, তাহলে অবশ্যই একবার Nutrition Specialist এর সাথে পরামর্শ করে নিও।

আর তুমি যদি আধ্যাত্মিক জীবনে যেতে চাও, তোমার যদি ধ্যান সাধনা নিয়ে থাকতে ভালো লাগে, তাহলে তুমি দেখবে যে তুমি নিজে থেকেই আমিষ খাবার থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছ।

যারা আধ্যাত্মিক জীবন ভালবাসে, তারা কখনোই আমিষ খাবার পছন্দ করে না। আর কেন তাঁরা পছন্দ করেন না, সেইসব কারন তো আগেই বলেছি। আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য সাত্ত্বিক খাবারের প্রয়োজন হয়।

আশা করি তোমরা তাহলে বুঝতে পেরেছ তোমাদের কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত। আমিষ ও নিরামিষ আহার এর ভালো দিক এবং খারাপ দিক –দুইই তাহলে বুঝতে পেরেছ। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, সবাইকে ভালো রাখুন। চলুন, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে!  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট