একটি গাছ একটি প্রাণ রচনা

একটি গাছ অনেক প্রাণ

এই পোস্টে তোমরা শিখবে কিভাবে একটি গাছ একটি প্রাণ রচনা লিখতে হয়। এই রচনা টি অন্য অনেকভাবে আসতে পারে, যেমন- গাছের উপকারিতা রচনা, গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান রচনা, গাছ আমাদের বন্ধু, পরিবেশ সংরক্ষণে গাছ, কিম্বা গাছপালা থেকে আমরা কী কী উপকার পাই। এইসবের মধ্যে যে কোন একটি রচনা এলে, তোমরা এটি উত্তর হিসেবে লিখতে পারবে।

একটি গাছ একটি প্রাণ ছোটদের রচনা তে কী কী লিখবে তাও রচনাটির নীচে সারাংশ এর মধ্যে পেয়ে যাবে।

একটি গাছ একটি প্রাণ রচনা

তাহলে শুরু করা যাক রচনা টিঃ

একটি গাছ একটি প্রাণ রচনা ৭৫০ টি শব্দের মধ্যে-

ভূমিকা

নীরব সাক্ষী রূপে যারা সব কিছু দর্শন করতে থাকে তারা আর কেউ নয়, তারা এই বৃক্ষসমূহ। সভ্যতার সূচনাতে যারা সর্ব প্রথম পৃথিবীতে পা রেখেছিল তারাই এই বৃক্ষরা। স্বয়ং ঈশ্বরও বৃক্ষদের ওপর যেন গুরুদায়িত্ব দিয়ে জীব কুলের সূচনা করেছিল। জীবকুলের সৃষ্টির জন্য বৃক্ষদের আগমন ছিল খুবই জরুরী।

প্রকৃতিতে ভারসাম্য রক্ষার দায় যেন গাছেদের ওপর। সৃষ্টিকর্তা জীবকুল তৈরির আগে পৃথিবীকে ভরিয়ে তুলেছিলেন গাছপালা দিয়ে। পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল গাছগুলো। আর তাদের এলাকার নাম রাখা হল জঙ্গল। চারিদিকে শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল। জঙ্গল আর সমুদ্র এই ছিল পৃথিবীর প্রধান জায়গা। ধীরে ধীরে শুরু হল জীবকুলের সূচনা। বদলে গেল অনেক কিছু।  

প্রকৃতিতে গাছের ভূমিকা

জীবকুলের আগমনে শুরু হল আদান-প্রদান। গাছেরা খাদ্য বানায় কার্বন ডাই অক্সাইড, জল,  আর সূর্যালোক দিয়ে, আর ত্যাগ করে অক্সিজেন। জীবকুল শ্বাস নেওয়ার সময়ে গ্রহন করে সেই বর্জিত অক্সিজেন কে, আর শ্বাস ছাড়ার সময়ে ত্যাগ করে সেই কার্বন ডাই অক্সাইড কে। এইভাবে অক্সিজেন আর কার্বন ডাই অক্সাইড এর ভারসাম্য বজায় ছিল।  

গাছ আমাদের বন্ধু

বাড়ীতে না গাছ লাগালে “গাছ যে আমাদের বড় বন্ধু” তা ঠিক করে বোঝা যায় না, যেমন কুকুর, বেড়াল বাড়ীতে না রাখলে ওদের গুরুত্ত্ব বা ওদের প্রতি টান বোঝা যায় না। গাছ যে আমাদের বাড়ীর একজন সদস্যের মতোই, তা গাছ লাগালেই টের পাওয়া যায়। 

পরিবেশ সংরক্ষণে গাছ

পরিবেশ সংরক্ষণে গাছের ভূমিকা অনস্বীকার্য। গাছ ছাড়া পরিবেশ হয়ই না। গাছ দিয়েই তৈরি হল জীবনের পরিবেশ। পরিবেশ এর জন্ম হল গাছের গর্ভ থেকে। যেসব গ্রহে গাছ নেই, সেইসব গ্রহে বেঁচে থাকার পরিবেশও নেই। পরিবেশ এর রক্ষা কর্তা গাছ। পরিবেশ সংরক্ষণ এ গাছের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

কিন্তু পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ কিছু ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় গাছ কে তাদের পরিবেশ সংরক্ষণ কাজে বাধা দেয়। অনেক ক্ষয়, ক্ষতি, ভোগান্তির পরে মানুষ এখন বুঝতে শিখেছে যে গাছপালার ক্ষমতা তাদের চেয়ে অনেক গুনে বেশী। কারন সঠিক পরিবেশ না পেলে মানুষের বিলুপ্তি নিশ্চিত। আর সঠিক পরিবেশ একমাত্র গাছপালাই দিতে সক্ষম। 

গাছপালার উপকারিতা

শুধুই কি সঠিক পরিবেশ দিতে গাছাপালার ভূমিকা আছে, খাদ্য সরবরাহে, জ্বালানীতে, আসবাবপত্রে, কাগজ, বই, খাতা তৈরিতে গাছপালার ভুমিকাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রীষ্মের দুপুরের উত্তপ্ত আবহাওয়ায় ক্লান্ত পথিক গাছের ছায়ার শীতল হাওয়ায় জুড়ায় তার প্রান।

ওষুধ তৈরিতেও গাছের বিশেষ ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। নিম গাছের ডাল দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলে দাঁত সুস্থ থাকে, দাঁতের বিভিন্ন রকমের রোগ থেকে দূরে থাকে। নিম গাছের পাতা বেটে সেই রসের সাথে হাল্কা গরম জল মিশিয়ে খেলে বুকের মধ্যে জমে থাকা কফ বেরিয়ে যায়।

যকৃত ভালো রাখতে, হার্ট সুস্থ রাখতে, ওজন কমাতে, হজমশক্তি বৃদ্ধি করাতে, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এলোভেরা পাতার জুস এর জুড়ি মেলা ভার।

এইরকম নানান উদ্ভিদ আছে এই পৃথিবীতে যাদের মধ্যেই নিহিত রয়েছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ওষুধ। 

গাছপালা থেকে এমন এমন ওষুধ পাওয়া যায় যা ব্যবহার করলে কখনো কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। এলিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি – এই তিন ধরনের ওষুধেরই আসল উৎপত্তি দুটো জায়গা থেকে- এক- ঊদ্ভিদ এবং দুই কেমিক্যাল।

সুতরাং মানুষের শরীর সুস্থ রাখতে গাছের ভূমিকা অপরিসীম। এছাড়াও আমরা প্রত্যহ যা কিছু ব্যবহার করি, তার বেশীরভাগ জিনিষের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে গাছের ভূমিকা।

একটি গাছ একটি প্রাণ

একটি গাছ একটি প্রাণ – এই কথা টি মানুষ এতদিনে খুব ভালভাবেই বুঝতে পেরেছে। তাই তো আজ প্রতি বছর ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। গাছের মৃত্যু মানেই তো প্রাণহানি। গাছের মৃত্যু মানেই তো জীবকুলের মৃত্যু।

অরণ্য যখন গৃহবন্দী

সমুদ্রের বিনাশ করে যদি বাড়ীর মধ্যে কুয়ো রাখা হয়, তাহলে কি পৃথিবীতে জল আর স্থলের যে অনুপাত বজায় থাকা দরকার, তা কি থাকবে? ঠিক একিরকমভাবে, অরণ্যের পর অরণ্য ধ্বংস করে যদি বাড়ীর বেলকনি তে টবের মধ্যে গাছ লাগান হয়, তাহলে গাছ আর জীবকুলের যে অনুপাত থাকা দরকার তা কি থাকবে?

আর এই কারনেই তো – আর নয়, এবার জন্ম হোক অরণ্যের। আর টবের মধ্যে ছোট্ট গাছ নয়, বিশাল এলাকা জুড়ে মাটির মধ্যে হক বৃক্ষ রোপন। 

গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান-অভিযান

দেরীতে হলেও মানুষ বুঝতে শিখেছে গাছ না লাগালে প্রাণ এর মধ্যে রোগের সঞ্চার হয়ে প্রাণহানি হতে বেশী সময় লাগবে না। তাই তো এখন দিকে দিকে শুরু হয়েছে “গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান”- অভিযান। এই অভিযানের জন্য কিছুটা হলেও গাছের সংখ্যা বাড়ছে। অরণ্য এর জন্ম যদি দিতে না পারেন, অন্ততপক্ষে বাড়ীর আশেপাশে খালি জায়গাতে কিছু বৃক্ষ রোপণ করুন।  

উপসংহার

প্রযুক্তিবিদ্যা উন্নতির সাথে সাথে আমাদের শিকড় কে যদি আমরা ভুলে যাই, তাহলে প্রযুক্তিবিদ্যা সহ সমস্ত জীবকুল ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এই বোধ টুকু আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে আছে। নিজেদের কে ভালো রাখার জন্য, আমাদের দ্বারা তৈরি প্রযুক্তিবিদ্যা কে টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের সবার আগে অরণ্য এর যত্ন নেওয়া উচিত। আমরা সকলে একত্রিত হয়ে নতুন নতুন বিল্ডিং না বানিয়ে বরং যদি অরণ্য বানানোর দিকে ধ্যান দিতে পারি, পরিবেশ এর ভীত আরও শক্ত পোক্ত হয়ে উঠবে। আর সেক্ষেত্রে শক্ত, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বানানো প্রযুক্তিবিদ্যার ভীত ও হয়ে উঠবে মজবুত।

একটি গাছ একটি প্রাণ ছোটদের রচনা (৩০০ টি শব্দের মধ্যে)

একটি গাছ একটি প্রাণ – এই কথা ছোট বড় সকলেরই জানা। গাছ সর্বপ্রথম এই পৃথিবীতে এসেছে। গাছ পরিবেশ কে ভরিয়ে তুলল অক্সিজেন দিয়ে আর সরিয়ে ফেলল ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড কে। গাছই তৈরি করলো মানুষের বেঁচে থাকার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। আর সেই পরিবেশে বেড়ে উঠল সমস্ত প্রাণীকুল।

প্রাচীনকালে, সভ্যতার শুরুতে মানুষের আশ্রয়স্থল ছিল গাছের ছায়া, খাবার ছিল ফলমূল। তখনো মানুষ আগুনের সন্ধান পেয়ে ওঠে নি। তাই কাচা সবজি আর ফলমূলই ছিল প্রধান খাবার। গাছের পাতা দিয়ে তৈরি করেছিল লজ্জা নিবারনের বস্ত্র। জঙ্গলের অন্যান্য হিংস্র পশুর হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে আশ্রয় নিত কোন ঝোপে, কিম্বা উঠে পড়ত গাছের উঁচু কোন ডালে।

সন্তানের জন্মের সময়ে সে যেমন মায়ের নাড়ীর সাথে যুক্ত থাকে, ঠিক সেইরকমভাবে মানব সভ্যতার জন্ম ও যেন জড়িয়ে আছে গাছের নাড়ীর সাথে। কিন্তু অবুঝ মানুষ নিজেকে বিশাল ভেবে, প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি ঘটিয়ে কুড়ুল মেরেছে নিজেই নিজের পায়ে। দূষিত করেছে পরিবেশ। প্রচুর পরিমানে জঙ্গল কে নিশ্চিহ্ন করে দেখাতে চেয়েছিল নিজের জায়গা। কিন্তু প্রযুক্তি বিদ্যা হার মেনেছে গাছের অস্তিত্বের কাছে। স্বীকার করেছে যে গাছের সাহায্য ছাড়া এই বিশাল পরিবেশে অক্সিজেন সরবরাহ করা এই উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার পক্ষে দুঃসাধ্য। কাগজ বানানো, আসবাবপত্র তৈরি – এইসব কাজ গুলো কোন প্রযুক্তিবিদ্যাই গাছের সাহায্য ছাড়া করতে পারবে না।

ওষুধ তৈরি, পাকা পোক্ত বাড়ী, -এইসব কিছুতেই গাছের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভুমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। এই বিশাল সভ্যতার প্রতিটি সদস্য যেন গাছের পরিবারেরই একজন।

মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই কর্তব্য আমাদের পরিবেশ রক্ষা কর্তা তথা এই উদ্ভিদ জগত এর খেয়াল রাখা। পরিবেশ যদি আরও দূষিত হতে থাকে, জীবকুলের মধ্যে নানান রকম রোগ এর আগমন স্বাভাবিক। দূষিত পরিবেশ কমিয়ে দেয় জীবকুলের আয়ু। তাই জীবকুলের আয়ু বাড়াতে হলে গাছের সংখ্যা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তাই এই মুহূর্ত থেকে আমরা প্রত্যেকেই আমাদের আশেপাশে ভরিয়ে তুলবো সবুজ গাছ গাছালি তে।

_____________________________________

আশা করি রচনা টি তোমাদের ভালো লেগেছে। যদি রচনা টিকে ৭৫০ শব্দের মধ্যে লিখতে হয় তাহলে প্রথমের রচনা টি লিখবে আর যদি ৩০০ শব্দের মধ্যে লিখতে হয় তাহলে শেষের রচনা টি লিখবে। আর যদি ১০০০ শব্দের মধ্যে লিখতে হয় , পুরো দুটো অংশই একসাথে জুড়ে লিখবে।

‘একটি গাছ একটি প্রাণ’ রচনা টি তোমাদের আরও যেসব রচনাগুলি লিখতে সাহায্য করবে তা হল-গাছ আমাদের প্রাণ, গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান রচনা, গাছ আমাদের প্রয়োজন কেন, গাছের প্রয়োজনীয়তা, ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট