কিভাবে মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে?

আপনার সাথে কি এমনটাই হয় যে আপনি একরকম চাইছেন, কিন্তু আপনার মন অন্যরকম চাইছে। আর তখন আপনি কি বুঝতে পারেন না আপনার কি করা উচিত? আপনি কি খুজে বেড়ান, বইএর পাতা ওলটান? কিম্বা গুগুলে সার্চ করেন – কিভাবে মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে? নাকি বন্ধুদের জিগ্যেস করে বেড়ান এই সমস্যার সমাধান কি কি?

আপনি যদি মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করার উপায় গুলো জানতে চাইছেন, তাহলে আপনি একদম ঠিক জায়গায় এসেছেন। এই পোস্টে আমি সেইসব উপায়ই তুলে ধরবো যা ফলো করলে আপনি অনায়াসেই মনের সাথে বোঝাপড়া করে উঠতে পারবেন।

কিভাবে মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে

কিভাবে মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে?

মনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আমাদের বোঝাপড়া করতে হয়, কখনো হয়তো অজান্তেই আমরা তা করে থাকি। আপনি যদি বাড়ীতে এতজনের সাথে বোঝাপড়া করতে পারেন; অফিসে এতো লোকের সাথে মিলেমিশে চলতে পারেন; তাহলে যে মন আপনার শরীরেরই অংশ, যা আপনার সাথেই থাকে, তার সাথে বোঝাপড়া করতে অসুবিধে কোথায়?

আগে এইসব অসুবিধেগুলো দেখে নেওয়া যাক, তারপরে তুলে ধরবে সেইসব অসুবিধেগুলোকে কাটিয়ে ওঠার উপায়।

মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে কিরকম অসুবিধের সম্মুখীন হয়ে থাকেন?

১। চঞ্চল মন

একটু আগেই মন বলেছিল- মেয়েটি বেশ ভালো, বন্ধুত্ব করে নেওয়াই উচিত। কিভাবে বন্ধুত্ব করবেন খুঁজে পাচ্ছিলেন না। একটা উপায় চলেই এল সামনে। কিন্তু যেই উপায়টি সামনে এল- মন বলল –‘না এইসবের মধ্যে না থাকাই ভালো’। মন বন্ধুত্বের অন্য কোন অর্থ খুঁজে খাড়া করলো আপনার সামনে। আপনি তখন ঠিক করলেন, না, বন্ধুত্ব করবেন না। মন ঠিকই বলছে- একটা মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব মানে তো তাই।

যেই আপনি মনের দ্বারা খাড়া করা লজিকে সাড়া দিলেন, তখন মন আবার আপনাকে অন্য কথা বলতে লাগলো- ধুর, বন্ধুত্ব তো ভালো জিনিস। যা যা, বন্ধুত্ব করে নে। একটা ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করতে গেলে এতো ভাবতে হত?

এইভাবে মন আপনাকে ঘোরাতে থাকে। মন খুবই চঞ্চল আর তাই মন আপনাকেও চঞ্চলতায় ভরিয়ে রাখতে চায়।

২। হৃদয়ের আওয়াজ শুনতে না পাওয়া

যখন কোন নতুন কাজ আপনি করতে যান, আর বুঝতে পারেন না কিভাবে এগোনো উচিত; তখন মন এর সাথে সাথে হৃদয় ও কিছু বলতে থাকে। মন এতোই উপদেশ দিতে থাকে যে আপনি হৃদয়ের আওয়াজ শুনতেই পান না।

৩। মন আর হৃদয় কে মিশিয়ে ফেলা

আপনি যা মনে মনে চাইছেন, তা কি আপনি চাইছেন নাকি আপনার চঞ্চল মন চাইছে? আপনি কি তা বুঝতে পারেন? কোনটা মন চাইছে আর কোনটা হৃদয় চাইছে –এই দুটোর স্বর যদি চিনতে না পারেন, তাহলে তা সমস্যা ডেকে আনতে পারে।

৪। মনের জ্বালে জড়িয়ে পড়া

মন আপনাকে গোটা দুনিয়ার সমস্যা দেখাতে থাকে। প্রচুর অপ্সেন দিতে থাকে। ভালো, খারাপ সবরকম আইডিয়া দিতে থাকে। আর আপনি কি সেইসব নিয়ে ভাবতে থাকেন?

৫। মনের রাজনীতি

আপনি কি ভাবেন আমাদের রাজ্যের রাজনীতি সবচেয়ে বেশী তিক্ত? না, মনের রাজনীতি আরো তিক্ত। মনের রাজনীতি থেকেই জন্ম দেশের রাজনীতি। মনের রাজনীতিতে যদি হৃদয় ও জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তো সেই দেশে রক্তপাত হবেই।

মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করার উপায়গুলো কি কি?

এরপর দেখে নেওয়া যাক এই উল্লিখিত সমস্যা গুলোর সমাধান কি কি?

১। মনের চঞ্চলতা কে থামাতে শিখুন

চঞ্চল শিশুকে কখনো সামলে উঠেছেন? মন হল আপনার শরীরের ভেতরে আশ্রয় নেওয়া এক চঞ্চল শিশু। যার জন্ম আপনার সাথে, আবার মৃত্যুও আপনার সাথে। যে শিশু টি আপনি যা যা দেখেন বা যা যা কাজ করে থাকেন –সেইসব কিছু একটু বেশী গভীরভাবে দেখতে থাকে বা ভাবতে থাকে।

এই শিশুটি ভালো খারাপ কিছু বিচার করতে পারে না। এই শিশুটি সবসময় আপনার এটেনশেন চাই। লক্ষ্য করে দেখে থাকবেন- আপনি যদি এই শিশুটির কথা না শুনে চোখ বন্ধ করে কিছু কথা বলেন, বা ঈশ্বরের নাম নেন; এই শিশুটি তখন নানান রকমের ছবি দেখাতে থাকে আপনার সামনে।

এটেনশেন পাওয়ার জন্য এই শিশুটি যা খুশী করতে পারে আপনার সাথে।

এইসব কিছু শুধু আপনার সাথে সবার সাথে কম বেশী হয়ে থাকে। একে কাটিয়ে ওঠার শ্রেষ্ঠ ও সহজ উপায়- আপনি আপনার গুরুদেব কিম্বা আপনার রোল মোডেল এর ফটো এর দিকে ৫ মিনিট তাকিয়ে বসে থাকুন। চোখ বন্ধ করবেন না। বন্ধ করলেই ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা শিশুটি আরো বেশী বিরক্ত করবে আপনাকে।

আপনি যখন মন কে কিছুটা হলেও কন্ট্রোল করতে পারবেন তখন ধীরে ধীরে মেডিটেশেন শুরু করুন।

২। হৃদয়ের আওয়াজ কিভাবে শুনতে পাবেন

হৃদয়ের আওয়াজ শুনতে চাইলে, আগে মন, শরীর, আর আপনি –এই তিনজনকে আলাদা ভাবে চিনতে শিখুন। আপনি একটা এনার্জি। আর শরীর টা কিন্তু আপনি নন। মন টাও আপনি নন। আপনি শুধুই এনার্জি। শরীর আর মন টা আপনার। আপনি যেহেতু এনার্জি , আপনার ক্ষমতাও বেশী। আপনি চাইলে শরীর আর মন দুটোকেই শান্ত করে রাখতে পারবেন।

এইভাবে বিশ্লেষণ করতে থাকলে ধীরে ধীরে দেখবেন আপনি হৃদয়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন।

৩। মন আর হৃদয় কে আলাদা করে চিনতে শিখুন

আপনি যেটা ভেতর থেকে চাইছেন, সেটাই আসলে আপনার হৃদয়। আর যা আপনাকে কনফিউসেন এর মধ্যে ফেলছে, তা আসলে আপনার মন। মন আর হৃদয় কে আলাদা করে চিনতে শিখুন। হৃদয় সবসময় সঠিক পথ দেখায়। হৃদয় এর সাথে এনার্জির লিঙ্ক আছে। আর এনার্জির সাথে সৃষ্টিকর্তার লিঙ্ক আছে।

৪। মনের জ্বালে জড়াবেন না

মন সবসময় খেলতে ভালবাসে। তাই নানান রকমের ফাঁদ পাততে ভালবাসে। আর আপনি সেই ফাঁদে পড়লেই আপনি কষ্ট পাবেন, তখন মন আরো চঞ্চল হয়ে উঠবে, আপনাকে দিয়ে বাজে কাজ ও করিয়ে নিতে পারে, আপনার বাজে সময়টার সুযোগ নিয়ে।

হৃদয়ের কথা শোনা অভ্যেস করুন। ধীরে ধীরে দেখবেন মন কে আপনি বশে আনতে পেরেছেন। সব কিছুই অভ্যেস এর ব্যাপার। মানুষ তো অভ্যেস এর দাস। যে কোন কিছুরেই ট্রানজিশেন পিরিয়ড এ খুবই পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রম করতে করতে একদিন দেখবেন তা আপনার অভ্যেস হয়ে গেছে, তাই আর পরিশ্রম করতে হচ্ছে না।

৫। মনের রাজনীতিকে পাত্তা দেবেন না 

মন যখন নানান রকমের উপদেশ দিতে থাকবে, তখন মনের মধ্যেই বিড়বিড় করে বলবেন- “না এইসব ভুল। আমি মনের এই বাজে কথা কানে দেবো না।“ আরেকটা কথা বলবেন –“ হে সৃষ্টিকর্তা, সঠিক পথ দেখান।“

৬। প্রার্থনা করবেন কিন্তু শান্তি ছাড়া আর কিছু চাইবেন না

যদি আপনি ধ্যানে বসতে না পারেন, প্রত্যহ প্রার্থনা করার অভ্যেস করুন। সকাল ও সন্ধ্যে ১০ মিনিটের জন্য আসনে বসুন। প্রার্থনার বই কিনুন। সেইসব বলতে থাকুন।

৭। কৃতজ্ঞতা জানান

কৃতজ্ঞতা জানান আপনার শরীরের প্রতিটি কোষকে যারা আপনাকে ভালো রাখার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে। কৃতজ্ঞতা জানান এই প্রকৃতিকে, এই আকাশ, বাতাস,জল,মাটি কে। কৃতজ্ঞতা জানান আপনার পিতা মাতাকে, আপনার স্পিরিচুএল গাইড কে, আপনার পূর্বপুরুষদের।

৮। খুশীতে থাকুন

যেখানে খুশী, সেখানে সুখ। যেখানে সুখ, সেখানে শান্তি। মন্দির প্রাঙ্গনে বেড়ে ওঠা গাছটিতে যে মৌচাকটি জন্ম নিয়েছে, সেই মৌচাকের মৌমাছিরাও মন্দিরের ভেতরের শান্তি তে জল ঢালতে পারে না। ঠিক তেমনি, আপনি যদি এক অনাবিল আনন্দের রাজ্যে বাস করেন, তাহলে চঞ্চল মন ও সেই শান্তির পরিবেশে, শান্ত হয়ে যায়।

যখন দেখবেন আপনি খুব দুঃখে, কষ্টে আছেন, তখনই মনের চঞ্চলতা আরো বেড়ে যায়।

তাই সর্বদা খুশীতে থাকুন।

৯। মেডিটেশেন করুন কিম্বা ৫ মিনিট চুপচাপ বসে থাকা অভ্যেস করুন

মেডিটেশেন করতে বলা খুব সহজ। কিন্তু যারা কখনো করে নি, তাদের পক্ষে মেডিটেশন করা খুবই টাফ মনে হতে পারে। অভ্যেস সব কিছু কে সহজ করে দেয়।

তাই প্রথম প্রথম ৫ মিনিট চুপচাপ বসে থাকা অভ্যেস করুন, যদি সেটাও না পারেন- তাহলে ৫ মিনিট কোন একটা মন্ত্র উচ্চারন করুন মনে মনে। ৫ মিনিট পর নিজেকে চেক করে দেখুন ওই ৫ মিনিটে কি মন কিছু বলছিল। যদি বলে থাকে, তাহলে আপনি মনের মধ্যে বিড় বিড় করে মন্ত্র উচ্চারন করুন।

খেয়াল রাখবেন ওই ৫ মিনিটে মন যেন কিছু বলতে না পারে। মন কে একদম চুপ করিয়ে রাখবেন। আর এই কারনেই তো মনের মধ্যে বিড়বিড় করে মন্ত্র উচ্চারন করতে হবে।

যখন ৫ মিনিট আপনি সহজেই চুপ করে থাকতে পারছেন, তারপর থেকে এই সময়টা বাড়ান, ১০ মিনিট চুপ করে থাকা অভ্যেস করুন।

তারপর ধীরে ধীরে মেডিটেশন প্র্যাকটিস করুন।

আর এইভাবেই মন কে নিজের বশে আনুন। মন কে যখন নিজের বশে আনতে পারবেন, তখন দেখবেন খুবই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই মনের সাথে বোঝাপড়া হয়ে যাচ্ছে।

মন যদি আপনার কথা শোনে, তাহলে তো নিজে নিজেই বোঝাপড়া হয়ে যায়, নতুন করে বোঝাপড়া করার জন্যও কোন উপায় ভাবতে হয় না।

তাহলে কিভাবে মনের সাথে বোঝাপড়া করতে হবে জানার জন্য সবার আগে আপনাকে আপনার মন কে কিভাবে শান্ত করতে হবে তা জানতে হবে। আর মন কে শান্ত করার উপায়গুলোই তো তুলে ধরলাম। আশা করি, এইসব উপায়গুলো ফলো করলে, আপনিও ভালো ফল পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট