শুধু কি তোমাদের বাবা মা এর মনেই এই প্রশ্ন জাগে যে তোমাদের কি লাইনে পড়লে ভালো হবে? তোমাদের মনে কি একই প্রশ্ন জাগে না? তোমরাও তো ভাবো- যে কি নিয়ে পড়বো? তাই তো? তোমরা যাতে ঠিকঠাক প্ল্যান করতে পারো তার চেষ্টা করবো এখানে। তবে শুরু করার আগেই বলে দিই –এখানে আমি তোমাদের কি কি ভালো স্কুল বা কলেজ আছে সেইসবের নাম দেব না, কারন সেগুলো তোমরা অনেক সাইট থেকে পেয়ে যাবে।
এখানে আমি তোমাদের গাইড করবো। যাতে তোমরা এই লিখা টা পড়েই সিদ্ধান্ত নিতে পারো। যখন তোমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে, আর তোমাদের বাবা মা ও যদি এই লিখাটা পড়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে তোমরা দেখবে যে এই দুই সিদ্ধান্ত মিলে গেছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে বাবা মা যে লাইনে তোমাদের কে পড়াতে চান, তোমরা সেই লাইনে পড়তে চাও না। এই দুই পক্ষের মত কখনো মেলে না। এর ফলেই সমস্যার সৃষ্টি হয়। বাবা মা এর পছন্দ মত লাইনে যদি তুমি পড়তে যাও, তুমি অখুশীর সাথে পড়াশুনো করতে থাকো, মনে সব সময়ে অতৃপ্তি থাকে। আর যদি তুমি তোমার পছন্দ মতো লাইনে পড়তে যাও, তাহলে তোমার বাবা মা ভালো থাকবে না।
আর এই সমস্যার এই সমাধান দেব এই লিখাতে। তাই এই আর্টিকেল টি শুধুমাত্র তোমার জন্যই নয়, তোমার বাবা-মা এর জন্যও। তাহলে শুরু করা যাক।

মাধ্যমিকের পর কি নিয়ে পড়বো
যে কোন বিষয় নিয়েই পড়ো না কেন, সব কিছুতেই ভবিষ্যৎ আছে। কিন্তু তাও মনের মধ্যে হাজার প্রশ্ন আসে মাধ্যমিকের পর কি নিয়ে পড়বো? মাধ্যমিকের পর অনেক কিছু নিয়েই পড়ার স্কোপ আছে। যেমন ধরো- সায়েন্স, কমার্স, আর্টস।
বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকমের ভাল লাগা আছে। আবার এই ভাল লাগা গুলো বদলে যেতে থাকে সময়ের সাথে সাথে। সেইজন্যই তোমাদের খুব সাবধানে সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নীচে উল্লেখ করা জিনিষ গুলো তে মনোনিবেশ করোঃ
বাস্তববাদী হও
এই বয়স টা স্বপ্নের বয়স। এই স্বপ্ন বাস্তবের স্বপ্ন হয় না- দুর্ভাগ্য এখানেই। এই স্বপ্ন নানান রঙের হয়ে থাকে। এইরকম রঙবেরঙের স্বপ্ন কে দূরে ঠেলে বাস্তববাদী হয়ে ওঠো।
জানি, এই বয়সে বাস্তব বাদী হয়ে ওঠা টা খুবই কষ্টকর। যদি তুমি তোমার স্বপ্নের বশে বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত নাও, আর ৩-৪ বছর পরে যদি স্বপ্ন বদলে যায়, তাহলে কি করবে? আফসোস?
পরে যাতে আফসোস করতে না হয়, সেইজন্য জানো, খোঁজ নাও প্রতিটি লাইনে কি কি পড়ান হয়। প্রতিটি লাইনে কি কি টাইপের চাকুরী পাওয়া যায়? যত তুমি জানবে, তত তুমি বাস্তবের স্বপ্ন দেখতে পারবে। তারপরে দেখো তোমার কোন কোন বিষয় গুলো পড়তে ভাল লাগে?
বাস্তবের দিকে খেয়াল রেখে স্বপ্ন দেখাটা খুবই দরকার। এইজন্য খেয়াল রেখো স্বপ্ন এর দিক যেন পরে বদলে না যায়। যে দিকের স্বপ্ন তুমি এখন দেখছ, ৫-৬ বছর পরেও যেন সেই দিকেরেই স্বপ্ন দেখতে পারো। শুধু স্বপ্নের গভীরতা বাড়াতে থাকবে।
ধরো তুমি আর্টস লাইন এ পড়বে বলে ঠিক করলে! তারপরে ক্লাস ১২ এর পরে তোমার যেন কখনোই মনে না হয় যে কমার্স নিয়ে পড়লে ভাল হত। যদি এইরকম মনে হয়, তাহলে তুমি ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নিতেই পারো নি। উলটো দিকে যদি তোমার মনে হয় – History/ Geography নিয়ে গবেষণা করবে, আর যতই সময় অতিবাহিত হচ্ছে, ততই তুমি আর বেশী এই লাইনেই আগ্রহী হয়ে উঠছ, এই লাইনেই আরও নতুন কিছু জানার ইচ্ছে দিনে দিনে বেড়েই চলেছে তাহলে জানবে তুমি একদম সঠিক পথে এগোচ্ছ।
ইমোশেনের ফাঁদে পা দিও না
আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই ভাল লাগা গুলো বদলাতে থাকে। কিছু ভাল লাগার বিয়োগ ঘটে আবার কিছু ভাল লাগার যোগ হয়। ক্লাস সেভেনে যে বিষয়গুলো পড়তে ভালো লাগতো, ক্লাস টেন এ সেই বিষয়গুলো ভালো নাও লাগতে পারে। এইভাবে মেচিউরিটি অর্জন এর সাথে সাথে আমাদের ভালো লাগা গুলো বদলাতে থাকে।
কিন্তু এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কিন্তু এর মধ্যেও যদি একটুখানি গভীরে বিশ্লেষণ করো, তাহলে দেখবে তোমার বেসিক কিছু বৈশিষ্ট্য কখনো বদলায় না। ক্লাস ৫ থেকে ক্লাস ১০অবধি কিছু গুন অবশ্যই পাবে, যা আগের মতই রয়ে গেছে।
যেমন এইটুকু তুমি নিশ্চয়ই ক্লাস এইটে বুঝে গিয়েছো যে কি টাইপের পড়া তোমার ভালো লাগে। তোমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে কোন সাবজেক্ট ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়তে তুমি বিরক্ত হও না, তুমি নিশ্চয়ই সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে কোন দ্বিধা ছাড়াই।
কারো মুখস্থ করতে ভালো লাগে, কারো বোঝার জিনিষ গুলো ভালো লাগে, কারো যে কোন রকমের কেল্কুলেসেন খুব ভালো লাগে, আবার কারো সাহিত্য ভালো লাগে, লিখতে ভালো লাগে, নানান রকমের গল্প বই পড়তে ভালো লাগে।
এইগুলোর মধ্যে তোমার কোনটা ভালো লাগে যা আগেও ভালো লাগতো আর এখনও লাগে?
প্রতিটি লাইনেই ভবিষ্যৎ আছে
যদি তোমার জীবনে লক্ষ্য হয় শুধু মাত্র একটা ভালো চাকুরী পাওয়া, তাহলে বলবো যে মাধ্যমিকের পর তুমি কি নিয়ে পড়বে সেই নিয়ে বেশী মাথা না ঘামাতে। বরং, তুমি দেখে নিও কোন সাবজেক্ট গুলোতে তুমি ভালো মার্কস তুলতে পারো, সেই সাবজেক্ট গুলো যে লাইনে আছে, সেই লাইন নিয়েই পড়ো।
প্রতিটি লাইন সম্পর্কে জ্ঞান
যে লাইন নিয়েই পড় না কেন, সেই লাইনেই গভীর জ্ঞান সংগ্রহ করার চেষ্টা করো। তুমি যত বেশী ওই লাইনের সাবজেক্ট গুলো নাড়াচাড়া করবে, তত বেশী ওই সাবজেক্ট গুলো কে ভালোবেসে ফেলবে।
ভালো লাগছে না- এই কথা টি বিষ এর কাজ করে। তোমার কাটা ঘায়ে আরো নুন ছিটিয়ে দেবে এই কথা টি। বরং, ভালো না লাগলেও বল – বা! অনেক কিছু শিখলাম তো। আরও একটুখানি পড়া যাক। বা! খুব ভালো লাগছে তো!
আর্টস নিয়ে পড়তে হলে কি কি গুন থাকা দরকার?
তোমার কি আমাদের অতীত নিয়ে জানার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা আছে, যা তোমাকে বাধ্য করে নতুন নতুন বই পড়তে, আর ঘন্টার পর ঘন্টা ওই সব নিয়ে পড়লেও ক্লান্তি তোমাকে গ্রাস করে না? তাহলে তুমি নিশ্চিন্তে আর্টস নিয়ে পড়তে পারো।
তুমি কি মুখস্থ করতে ভালোবাসো? যে পড়া গুলোতে বোঝার কিছু থাকে না, শুধু কয়েকবার পড়ে নিলেই হয়ে যায়, সেই পড়াগুলো কি বেশী ভালো লাগে? তাহলে অবশ্যই আর্টস নিয়ে পড়ো।
কমার্স নিয়ে পড়তে হলে কি কি গুন থাকা দরকার
দেশের অর্থনীতি নিয়ে একটুও কি আগ্রহী? ইকোনোমিকস সাব্জেক্ট টি খুব একটা সহজ না। কিন্তু যদি তুমি সেইসব জানার জন্য প্রচুর পরিমানে ইচ্ছা রাখো, তাহলে সবই সম্ভব। আবার অঙ্ক কে যদি সহজ বা অঙ্ক করতে মজা পেয়ে থাকো তাহলেও কমার্স নিয়ে পড়তে পারো।
তুমি কি বুঝতে পারছ না যে তুমি কমার্স লাইন টাকে ভালোবাসো কি না? তাহলে হাতে সময় থাকলে, একটা প্রজেক্ট করে দেখতে পারো- বাড়ীর সব হিসেব নিকেশ এর দায়িত্ত্ব তুমি নিও- একটা মাসের জন্য। একটা মাসের জন্য তুমি হয়ে ওঠো বাড়ীর একাউন্ট্যান্ট।
একটা এক্সেল শিট বানাও। বাড়ীর খরচ যদি মাসে ৩০,০০০ হয়ে থাকে, তুমি চেষ্টা করো ২৮০০০ এর মধ্যে সব কিছু কে মেনেজ করতে। বাড়ীর প্রতিটি সদস্য কে বলে দিও, সব খরচের জন্য তোমার কাছে থেকে টাকা নিতে। যদি তুমি দিনের পর দিনে এই কাজ টিতে আগ্রহী হয়ে ওঠো, তাহলে তুমি কমার্স নিয়ে পড়তে পারো। আর যদি তুমি হাঁপিয়ে ওঠো, এই টাকা পয়সার হিসেব তোমাকে ক্লান্ত করে তোলে, তাহলে কমার্স তোমার জন্য নয়।
তবে চিন্তার কোন কারন নেই। কারন সায়েন্স নিয়ে পড়ার পর ক্লাস ১২ পাস করে যদি তোমার মনে হয় তুমি কমার্স এর সাবজেক্ট নিয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জন করবে, তুমি তা করতে পারো। কিন্তু আর্টস নিয়ে পড়ে পর তুমি যদি কমার্স লাইনে ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জন করতে চাও, তাহলে তোমাকে অনেক অসুবিধের মধ্যে পড়তে হতে পারে।
সায়েন্স নিয়ে পড়তে হলে কি কি গুন থাকা দরকার?
মুখস্থ করার চেয়ে, যে সব বিষয় গুলো তোমাকে বুঝে নিতে হয়, সেই সব বিষয় গুলো কি তোমার বেশী ভালো লাগে? আর যে কোন জিনিষ যেখানে বোঝার ব্যাপার আছে, সেই সব জিনিষ গুলো কি তুমি বুঝে গেলেই অটোমেটিক মুখস্থ করে ফেলতে পারো? এই সব ব্যাপার গুলো কি তোমার খুব সহজ আর মজাদার লাগে? তাহলে তোমার জন্য সায়েন্স লাইন এই বেষ্ট।
উচ্চ মাধ্যমিকের পর কি নিয়ে পড়বো
উচ্চ মাধ্যমিকের পর ফোকাস করো কি ধরনের ক্যারিয়ার এ তুমি নিজেকে দেখতে চাও সেই দিকে। ধরো তুমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাও, তাহলে তুমি অবশ্যই ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনো করো। তার জন্য কম্পিটেটিভ পরীক্ষা গুলো দিতে থাকো।
যদি তুমি ব্যাংকিং এ চাকুরী করতে চাও, তাহলে কমার্স লাইনে গ্র্যাজুয়েট করে কম্পিটেটিভ পরীক্ষা গুলোতে ফোকাস করো।
যদি তুমি টিচিং এ যেতে চাও, তাহলে তোমার পছন্দের সাবজেক্ট এর ওপরে গ্র্যাজুয়েট করে হাইয়ার স্টাডি তে ফোকাস করো আর সাথে সাথে বিভিন্ন কম্পিটেটিভ পরীক্ষা গুলোতে বসতে থাকো, আর ইন্টারভিউ দিতে থাকো।
উচ্চ মাধ্যমিকের পর কি কি কোর্স আছে
উচ্চ মাধ্যমিকের পর নানান রকমের কোর্স আছে। যেমন তুমি জেনারেল লাইনে তোমার ইচ্ছেমত সাবজেক্ট এ পড়তে পারো, আবার মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনে পড়তে পারো।
নীচে দেওয়া লিঙ্ক টি তে ক্লিক করলে সেইসব নানান রকমের কোর্সের খোঁজ তোমরা পেয়ে যাবে।
কোন লাইনে পড়া ভালো
যে কোন লাইন নিয়েই পড়া ভালো, শুধু খেয়াল রেখো, বারে বারে মত যেন বদলে না যায়। যে লাইন নিয়েই পড় না কেন, সেই লাইনেই পড়াশুনো চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো। সব লাইনেই ভবিষ্যৎ আছে। শুধু তোমাকে হতে হবে সেই লাইনে দক্ষ, সেরা।
কোন বিষয় নিয়ে পড়লে ভালো চাকরি পাওয়া যাবে?
যে কোন বিষয় নিয়ে পড়লেই ভালো চাকুরী পাওয়া যায়। তবে সায়েন্স, আর্টস আর কমার্স লাইন গুলো তে অপেক্ষাকৃত বেশী চাকুরী পাওয়া যায়। কিন্তু বরাবরই তোমাকে মোটামুটি ভালো নাম্বার পেতে হবে।
ভালো চাকরি পাবে কিনা তা নির্ভর করছে গ্রাজুয়েসেন এর পরে তুমি কি রকম কোম্পানিতে এপ্লায় করছ, আর তার জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছ? ভালো চাকুরী পাওয়ার জন্য কি কি করবে দেখে নেওয়া যাক এক ঝলকেঃ
১। লক্ষ্য স্থির করো। মানে প্রাইভেট কোম্পানি তে চাকরি করবে নাকি সরকারী কোম্পানিতে ?
২। প্রয়োজনে কোন কোচিং নিতে পারো।
৩। প্রচুর পরিমানে মক টেস্ট দিতে থাকো।
৪। ইন্টারভিউ এর জন্য নিজেকে রেডি করো।
৫। প্রচুর পরিমানে ইন্টারভিউ দিতে থাকো।
আশা করি, তোমাদের ভালো লেগেছে আর তোমরা বুঝতেও পেরেছ কি নিয়ে পড়বে। তোমরা যদি কমেন্ট করে জানাও, তাহলে আমিও বুঝতে পারবো, তোমাদের সাহায্য করতে পারলাম কিনা। নিজে উৎসাহিতও হবো। আর এর ফলে আরও নতুন লিখা উপহার দিতে পারবো।