টাকায় কি সব (Is Money Everything)?

টাকা

নমস্কার বন্ধুরা! অনেকদিন পরে আবার একটা নতুন লিখা নিয়ে এসেছি তোমাদের কাছে। আশা করি তোমরা ভালো আছ। আজ এমন একটা টপিক নিয়ে আলোচনা করবো যা নিয়ে তোমাদের প্রায় সকলের মনে প্রশ্ন জাগে।

আজ আমি চেষ্টা করবো তোমাদের সকলের মনের প্রশ্নের উত্তর দিতে। পুরো লিখাটা পড়ার পরে তোমরা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানিও যে তোমরা তোমাদের প্রশ্নের উত্তর পেলে কিনা।

তাহলে শুরু করা যাক , দেখা যাক টাকায় সব কিনা।

টাকায় কি সব?

টাকায় কি সব?

সব কিছুই আপেক্ষিক। যে লোকটা তার পরিবারকে প্রত্যহ দুমুঠো অন্নের সংস্থান করে দিতে পারেন না, সেই লোকটার কাছে তো টাকায় সব।

মানুষের ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রাথমিকভাবে খাদ্য, আশ্রয় আর বস্ত্রের প্রয়োজন হয়। আর যাদের এই অভাব বিন্দুমাত্র নেই, তাদেরেই তো মন খুঁজতে থাকে নানান সমস্যা নানান দিক থেকে।

যে মানুষটা দুবেলা পেট ভরাতে পারে না, তার কাছে একটাই সমস্যা- টাকার অভাব। যে মানুষটা এক বিশাল তিন কামরার ফ্ল্যাটে বাস করে, যার দুই-তিনটে আলমারি নতুন নতুন পোশাক আশাকে ভর্তি, যার বাড়ীতে অর্ডার দেওয়া পিঁজা, বা বার্গার একটা ফোন কলে বাড়ীতে ঢুকে যায় ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য, সেই মানুষটার হাজারটা সমস্যা।

মেয়েটা একদম ভালো পড়াশুনো করছে না। কাজের লোক গত দশ দিন আসে নি। বাড়ীতে হাজারটা কাজ কি এক হাতে করা যায়? গাড়ীর ড্রাইভার দুদিন আসে নি বলে, গত দুদিন ধরে ভিড় বাসে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

করোনার জন্য কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয় নি। শ্বশুর মশাই অসুস্থ। ভাইয়ের এই অসময়ে সর্দি। কোনদিকে যে সে সামলাবে, কিছুই বুঝতে পারছে না।

এইরকমেই তো হয়। তবে যে মানুষটা এখন ভালোভাবে খেতে পাচ্ছে না টাকার অভাবের জন্য, কাল যদি সেই অভাব আর না থাকে, অন্য কোন সমস্যা চলেই আসে সেই শুন্যস্থান পুরন করতে।

টাকা কি?

প্রাচীনকাল থেকে টাকার বিনিময়ে জিনিষের নেওয়া দেওয়ার প্রচলন চলে আসছে। টাকা দিয়েই তো জিনিষের মূল্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। রুপোর চেয়ে সোনার মূল্য বেশী, তাই সোনা কিনতে বেশী টাকা লাগে।

টাকার মূল্য কতখানি?

কতখানি তা একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক। ধরে নেওয়া যাক টাকার কোন অস্তিত্ব নেই। তাহলে কি হবে? সকলেই গাছ লাগাচ্ছে, খাওয়ার জন্য। নিজের বাড়ীর বাগানে যা ফসল হয়েছে সেইসবই রান্না করে খাচ্ছে।

খেয়ে বেঁচে থাকা ছাড়া আর কি কোন কাজ মানুষ তাহলে করবে? করলেও আনন্দ পাবে না। বেশী পরিশ্রমের কাজ করতেও চাইবে না।

এমন কি চাষবাস ও কেউ তখন আর করবে না। সবার মনে একই প্রশ্ন জাগবে- চাষবাস করে এতো কষ্ট করে কি লাভ? মনে ইচ্ছের উদয় হলে কাজ করবে, নয়তো কাজ করবে না। যারা কাজ ছাড়া থাকতে পারে না, তারাই একমাত্র কাজ করবে, বাকীরা কিছুই করবে না।

টাকা হল এমন এক মাধ্যম যা দিয়ে কাজ, পরিশ্রম এই সব কিছু করানো যায় আর এই সব কিছুর মাধ্যমে সময় কে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। টাকা যেন সব কিছু কে বেঁধে রেখেছে।

টাকা দিয়ে কি সব কেনা যায়?

টাকা দিয়ে প্রায় সব কিছুই কেনা যায় শুধুমাত্র ভালোবাসা, যত্ন এইসব বাদ দিয়ে। মানুষের হৃদয় টাকা দিয়ে কেনা যায় না। এইসব কিছু ভালো ব্যবহার, সততা দিয়ে কেনা যায়।

টাকা দিয়ে আরও একটা জিনিষ কেনা যায় না- সুখ। তবে হ্যাঁ, সাময়িক সুখ কেনা যায়। যেমন ধরো- তোমার হাতে খুব টাকা, তাহলে তুমি চাইলেই একটা ভালো সিনেমা দেখতে পারো, কিম্বা একটা ভালো ঘড়ি কিনতে পারো- আর এইসব কেনাকাটার মাধ্যমে তুমি সাময়িকভাবে সুখ লাভ করতে পারো।

তবে টাকা কখনোই স্থায়ী সুখ দিতে পারে না। আবার টাকা না থাকলেই যে তুমি স্থায়ী সুখ পাবে, এমন ভাবনাটাও ভুল। সুখ এক অন্য জিনিষ যার সাথে টাকার খুব একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নেই বললেই চলে। আবার একদমই যে সম্পর্ক নেই তাও বলা যায় না। কারন টাকা দিয়ে তুমি সাময়িক সুখ অবশ্যই পেতে পারো, যেটা টাকা ছাড়া তুমি করতে পারবে না।

টাকা দিয়ে কি কি কেনা যায়?

টাকা দিয়ে যে কোন জিনিষ, খাবার, ভালো আশ্রয়স্থল, ভালো পোশাক কেনা যায়। আজকাল টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট কেনা যাচ্ছে, যার জন্য টাকা আজ নিজেই লজ্জিত।

আজকাল টাকা দিয়ে ডিগ্রী অর্জন করা যাচ্ছে, টাকা দিয়ে চাকুরী পাওয়া যাচ্ছে, আবার টাকা দিয়ে গুন্ডাও কেনা যাচ্ছে যার জন্য টাকা আজ কলঙ্কিত।

এইভাবে টাকার গুরুত্ত্ব কে নিগেটিভিটিতে ভরিয়ে তুলছে সমাজ।

টাকা দিয়ে কি কি কেনা যায় না?

টাকা দিয়ে আমি কখনোই তোমার মন জয় করতে পারবো না। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর উল্টোটাও ঘটতে দেখা যাচ্ছে। একটা গরীব মেয়ে যে লোকের বাড়ি বাসন মেজে জীবিকা নির্বাহ করে, সেই মেয়েটাকে তুমি যদি ভালো টাকা দাও, যা সবাই দিচ্ছে তার তিনগুন বেশী যদি তুমি দিয়ে দাও, আর যদি সাথে ভালো ব্যবহার করো, তাহলে সেই মেয়েটি তোমাকেই পছন্দ করবে।

টাকা দিয়ে বন্ধুত্ত্ব কেনা যায় না। টাকা দিয়ে ভালো ব্যবহার আদায় করা যায় না।

টাকা আর সুখ

অনেকেই বলে থাকে যেখানে টাকা আছে সেখানে সুখ নেই। আসলে ব্যাপারটা তেমনটা নয়। আসল তো হল এটা সুখ আসে আমাদের মনের ভেতর থেকে। কিছু মানুষের টাকাও আছে সুখও আছে। কিছু মানুষের টাকা আছে, সুখ নেই। কিছু মানুষের টাকা নেই কিন্তু সুখ আছে আবার কিছু মানুষের টাকাও নেই, সুখও নেই।

এই সব রকমের মানুষ তুমি দেখতে পাবে। টাকা থাকা ভালো কিন্তু তাকে বাক্সের মধ্যে বন্দী করে রাখা ভালো নয়। টাকার কাজই হল প্রবাহিত হওয়া।

সৎপথে প্রচুর পরিমাণে টাকা অর্জনের চেষ্টা করা অপরাধ নয় বরং একজন সৎ ব্যাক্তি যদি বাড়ীতে বসেই সময় কাটিয়ে দেয়, আর বেশী পরিমানে টাকা রোজগার করার চেষ্টা মাত্র না করে, তাহলে সেটাই অপরাধ।

তবে সেই ব্যাক্তি প্রচুর পরিমানে টাকা রোজগারে যদি সেই টাকাকে সমাজের যেখানে যেখানে সেই টাকার প্রবাহের দরকার, সেই সেই জায়গায় যদি তা প্রবাহিত না হয়, তাহলেও তা অপরাধ বলেই গন্য হবে।

তাহলে কি যা তুমি রোজগার করবে তার সবটাই কি সমাজের মধ্যে বিলিয়ে দেবে? না, সবার আগে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করবে, তারপরে পরিবারের হিত করার জন্য কিছু ব্যয় করবে, তারপরে নিজের ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয় করবে। এইসব কিছু করার পরে যা কিছু উদ্বৃত্ত থাকবে, সেইসব কিছু সমাজের হিতের জন্য সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেবে।

এরপরে বলি কেন প্রতিটি মানুষের টাকা রোজগারের দিকে ধ্যান দেওয়া উচিত? তুমি যদি সৎ ব্যাক্তি হয়ে বলতে থাকো যে –“ টাকায় কি সব? এতো টাকা নিয়ে কি হবে? বেশী লোভ ভালো না “। এটা ঠিক যে বেশী লোভ ভালো না। কিন্তু বেশী টাকা রোজগারের চেষ্টা না করাটাও ভালো না। কিন্তু এমনটা কেন?

তুমি যদি সৎ ব্যাক্তি হয়ে বেশী টাকা রোজগারের চেষ্টা না করো, তাহলে কি হবে? যারা অসত, অধার্মিক তারা কিন্তু তোমার উল্টোটা করবে, মানে বেশী টাকা রোজগারের দিকে মন দেবে। এরফলে বেশীরভাগ টাকাটা সমাজের অসৎ ব্যাক্তির হাতে চলে যাবে।

এমন কি তুমি যদি উচ্চাকাঙ্ক্ষা না রাখো, তুমি কোন বড় পোস্টে যাওয়ার ইচ্ছা না রাখো, তাহলে ওই সব বড় পোস্ট গুলো অসৎ ব্যক্তিতে ভরে যাবে। সমাজ নেগেটিভ শক্তিতে ভরে উঠবে। উঁচু পোস্টগুলো অসৎ ব্যক্তিতে ছেয়ে যাবে। আর একবার যদি এটা হয়ে থাকে, তাহলে ঘুষ খাওয়ার লোকের সংখ্যা বাড়বে। ধীরে ধীরে মাঝারি পোস্টগুলোও অসৎ ব্যাক্তিতে ছেয়ে যাবে।

আর যারা সৎ ব্যাক্তি তারা নিচু পোস্টে থেকে বলতে থাকবে – “ কি হবে এতো লোভ করে?” তারা কখনোই প্রয়াসই যদি না করে উঁচু পোস্টগুলোতে যাওয়ার, সমাজে শিক্ষাব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাবে।

উপসংহার

তোমাদের বলছি হাতে টাকা থাকলে, সমাজ কে উন্নত করতে সেই টাকা খরচ করে দেখতে পারো- তোমাদের ওপর সহস্র আশীর্বাদ বর্ষিত হবে। হাতে টাকা না থাকলে- সৎ উপায়ে টাকা রোজগারের চেষ্টা করো। কখনো এটা বল না যে টাকা দিয়ে কি হবে। সুখ আর ভালোবাসা ছাড়া টাকা দিয়ে সবই হবে।

তোমার হাতে টাকা থাকলে তুমি সমাজকে সাহায্য করতে পারবে আর যদি তোমার হাতে টাকা না থাকে, তাহলে তুমি সমাজের কাছে বোঝা হয়ে যাবে। এরপর তোমাকেই ভাবতে হবে যে তুমি সমাজের উপকার করতে চাও, নাকি সমাজের কাছে বোঝা হয়ে থাকতে চাও।                                     

আশা করি তোমরা সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছো। আরও কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখে পাঠাতে ভুলো না যেন। সুস্থ থেকো, ভালো থেকো, সবাইকে ভালো রাখো। চলো, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে!  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট