একক পরিবার ও যৌথ পরিবার কাকে বলে ? যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ। (Reasons for Disintegration of Joint Family)

একক পরিবার ও যৌথ পরিবার

নমস্কার বন্ধুরা। এখানে আমি এখনকার সমাজে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক টপিক নিয়ে আলোচনা করবো, আর তা হল- একক পরিবার ও যৌথ পরিবার কাকে বলে, যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ গুলো কি কি।  এমন কি একক পরিবার এবং যৌথ পরিবার এই দুইয়েরই কি সুবিধা আর অসুবিধা তাও আলচনা করবো।

আপনি কি বাড়িতে একাকীত্বে ভোগেন? আপনি কি ভাবছেন – “যদি আমার বিশাল বড় পরিবার থাকতো, যদি আমি সবাই কে নিয়ে থাকতে পারতাম। কাকু, কাকিমা, দাদু, থাম্মি সকলকে নিয়ে এক বাড়িতে থাকতে পারতাম, তাহলে বোধ হয় সুখে ভরে উঠত।“

আপনি কি যৌথ পরিবারেই থাকেন? আপনার বাড়িতে অশান্তি লেগেই থাকে? আপনি কি ভাবছেন-“ যদি একা শুধু বাবা মা কে নিয়ে থাকতে পারতাম, তাহলে সব ভালবাসা, সময় আমিই পেতাম।“

আপনারা যদি যৌথ পরিবার কে টিকিয়ে রাখতে চান, তাহলে কিভাবে টিকিয়ে রাখতে পারেন সেই পথও দেখাবার চেষ্টা করবো।

পরিবারের কাঠামো অনুযায়ী পরিবার কে দুইভাগে ভাগ করা হয়- যৌথ পরিবার এবং একক পরিবার।

একক পরিবার ও যৌথ পরিবার কাকে বলে

যৌথ পরিবার কাকে বলে?

যে পরিবারে পরিবারের পুরুষ মানুষটির বংশের কোন ভাঙ্গন হয় না। যে পরিবারে বাবা,মা, কাকু,কাকিমা, দাদু, ঠাম্মি সকলে একসাথে থাকে, তাকেই যৌথ পরিবার বলা হয়। ইংরেজিতে যৌথ পরিবার কে জয়েন্ট ফেমিলি বলা হয়।

যৌথ পরিবারে পুরুষেরা একই বাড়িতে থেকে যায়, কিন্তু মহিলাদের সংযজন বা বিয়োজন হতে থাকে।

যৌথ পরিবারের বৈশিষ্ট্য

যৌথ পরিবারের বৈশিষ্ট্য গুলো হলঃ

যৌথ পরিবারে যেসব পুরুষ সদস্যগুলো আছেন, তারা বিবাহের পরও একই বাড়িতে সকলের সাথে বসবাস করে থাকেন। অন্যদিকে পরিবারের মহিলা সদস্য গুলো বিবাহের পর পরিবার ছেড়ে অন্য নতুন কোন পরিবারে বসবাস করেন।

যৌথ পরিবারে সমস্ত কার্যাবলী যেমন রান্না, বাজার একসাথে হয়ে থাকে।

এই পরিবারে একজন কর্তা থাকেন। পরিবারের সকল সদস্যরা তাদের আয় কর্তার হাতে দিয়ে থাকেন। সমস্ত খরচ পরিবারের কর্তার কাছে হিসেব দিতে হয়।

যৌথ পরিবারে কোন সদস্য বাড়ির বাইরে বেরোলে কর্তাকে জানিয়ে যেতে হয়।

যৌথ পরিবারের কর্তার কাছে শুধু টাকা-পয়সাই নয়, সমস্ত কিছুর সন্ধান থাকে।

যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ

  • বিদেশী সংস্কৃতির বিস্তার
  • উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যা
  • মানুষের স্বাধীনতার খিদে বৃদ্ধি
  • একই পরিবারে কেউ চাকুরে আর কেউ বেকার
  • কর্মরত বউ
  • পরিবারের সদস্যের ইনকামের মধ্যে বৈষম্য

যৌথ পরিবারের সুবিধা ও অসুবিধা

যৌথ পরিবারের সুবিধা

প্রথমে যৌথ পরিবারের সুবিধাগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক-

  • যৌথ পরিবারে পুরুষ মানুষদের যারা অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাদের জন্য খুবই সুবিধে। কারণ পরিবারের ব্যাপারে তাকে চিন্তা করতে হয় না যেহেতু মাথার ওপরে বাড়ির কর্তা আছেন মানে ওই পুরুষ মানুষটির বাবা মা সব দায়িত্ত্ব সামলে নেন।
  • যেসব মেয়েরা সবে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ির গেছেন, আর চাকরিও করে থাকেন, তাদের যৌথ পরিবারে নতুন সংসার নিয়ে বেশী ভাবতে হয় না। এমন কি বাচ্চা হওয়ার পরে বাচ্চাকে আয়ার কাছে রাখতে হয় না। বাচ্চা কে নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতে হয় না। তাই নিশ্চিন্তে অফিসের কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।
  • সবচেয়ে বড় সুবিধে পরিবারে কোন বিপদ-আপদ এলে, সবাই মিলে একসাথে বিপদ কে সামলানো যায়।
  • বড়দের ডিগ্রী কম থাকলেও, জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অনেক বেশী। আর এই অভিজ্ঞতাই একটা মানুষের সবচেয়ে বড় শিক্ষক। আজকাল ভাল কিছু শিক্ষা দেওয়ার লোকের বড়ই অভাব। আর যৌথ পরিবারে বিনা পয়াসায় বড়দের থেকে অনেক কিছু শেখা যায়।
  • আরও একটা বড় সুবিধে হল- যৌথ পরিবারে বাচ্চারা খুব আনন্দে সময় কাটায়। যৌথ পরিবারে অনেকগুলো বাচ্চা থাকার ফলে, নিজেরাই যখন তখন খেলতে পারে। ঝগড়া ও ভালবাসা দুইই হয়ে থাকে। আবার বাচ্চারা দাদু, দিদা,থাম্মি দের কাছে থেকে রূপকথার গল্প বা মহাভারতের কাহিনী শুনতে পারে।
  • যৌথ পরিবারে বাচ্চাদের বাবা মা কে বাচ্চাদের বড় হয়ে ওঠার বেসিক জিনিষগুলো নিয়ে ভাবতে হয় না।

যৌথ পরিবারের অসুবিধা

এরপর আলোচনা করা যাক যৌথ পরিবারের অসুবিধেগুলো নিয়ে।

  • যৌথ পরিবারে দুই জ্যা এর মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকে। কোন কোন ভদ্র পরিবারে ঝগড়া প্রকাশ্যে না হলেও মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি বোধ সব সময় কাজ করতে থাকে। আর এই অস্বস্তি থেকেই জন্ম হয় নেগেটিভ চিন্তা। আর নেগেটিভ চিন্তা থেকে দুশ্চিন্তা। দীর্ঘ সময় এই ফেজ এ কাটালে, এই দুশ্চিন্তা শরীরের মধ্যে নানান রকমের সমস্যা নিয়ে আসে।
  • শুধুই কি দুই জ্যা এর মধ্যে ঝগড়া হয়? যদি বাড়ির দুই ছেলে সমান রোজগার না করে, অথচ যৌথ পরিবার বলে খাওয়া দাওয়া, জীবন যাত্রা একইরকম ভাবে বাহিত হয়, সেইক্ষেত্রে দুই জ্যা দুই ভাইয়ের মধ্যেও বিবাদ ডেকে নিয়ে আসে। বেশীরভাগ পুরুষ মানুষ সংসারের ব্যাপারে বেশী মাথা ঘামায় না। কিন্তু একজন স্ত্রী আরেকজন স্ত্রী কে ভালোভাবেই বুঝিয়ে দেয় যে অন্যজনের মাইনে কম, তাই প্রত্যহ একইরকম খাবার খাওয়ার আশা যেন না রাখে।
  • যৌথ পরিবারে বাড়ির কর্তা আর কর্ত্রী দুজনে মিলে খুব চেষ্টা করে যেন তার সব ছেলে একইরকম জীবনযাত্রা অতিবাহিত করে, এমন কি তাদের মাইনে আলাদা হলেও। আর এখান থেকেই জন্ম হয়- অশান্তি, কলহ, ভাঙ্গন।
  • যৌথ পরিবারে এক ছেলের দুই পুত্র সন্তান আর অন্য ছেলের দুই কন্যা সন্তান যদি হয়ে থাকে, পরিবারের কর্তা ও কর্ত্রীই অন্যায় করে থাকে। তবে এর ব্যতিক্রম ও আছে। কিন্তু প্রশ্ন হল অন্যায় কিভাবে করে থাকে? যে ছেলের দুই কন্যা সন্তান সেই ছেলে পৈত্রিক জমি থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে, কারণ কন্যা সন্তানদের জমি দেওয়া মানে অন্য কোন পরিবার কে দেওয়া।
  • যদি এমন টা হয় যে দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলের বাচ্চা আছে, আর অন্যজনের বাচ্চাই হয় নি। পরিবারের কর্তা কর্ত্রী দুই ছেলে কে সব কিছু সমানভাবে দিতে চাইলেও, ছেলের বউ ই চায় না যে অন্য ছেলের বউ যার কোন বাচ্চাই নেই, সেও সব কিছুর সমান ভাগ নিক।
  • প্রকাশ্যে সব কিছু বলে দিলে এক জ্যা বুঝতে পারে যে তার জ্যা তার সাথে এমন ব্যবহার করছে কেন। কিন্তু সমস্যা তখন হয় যখন সেই জ্যা মুখে কিছুই বলতে পারে না, অথচ মন থেকে সে তার জ্যা কে কিচ্ছু দিতে চায় না।
  • এইসব কিছু সুপ্তভাবে প্রভাব ফেলে বাড়ির বাচ্চাদের মনে। বাচ্চারাও বলতে থাকে যে তার বাবা বেশী টাকা আনে না তাই সে ওই দামী খেলনা টা পাবে না। স্বার্থপরতা সুপ্তভাবে বাড়ির সর্বত্র বেড়ে ওঠে।
  • কোন কোন পরিবারে দুই জ্যা এর মধ্যে ভাব থাকে ঠিকই, কিন্তু দুই ভাইয়ের মধ্যে থাকে না। পৈতৃক সম্পত্তি এর জন্য অনেক সময়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে মারামারি অবধি হয়ে থাকে।

একক পরিবার কাকে বলে?

যখন একজন পুরুষ আর মহিলা নিজ নিজ বাড়ি ত্যাগ করে বিবাহের পর নিজেদের এক নতুন বাড়ি তৈরি করে, তখন সেই নতুন পরিবার কে একক পরিবার বলে। ইংরেজিতে একক পরিবার কে নিউক্লিয়ার ফেমিলি বলে।

একক পরিবারের সুবিধা ও অসুবিধা

একক পরিবারের সুবিধা

একক পরিবারের সুবিধা গুলো হল –

  • কেউই কারো গায়ে ঠেস দিতে পারে না। কোন পরিবারে ৩ টে ছেলে আর ২ টি মেয়ে থাকলে, মেয়েরা যেমন বিয়ের পর এক নতুন বাড়িতে নিজের সংসার করে, ঠিক তেমনি ছেলেরাও প্রত্যেকেই নিজ উপার্জিত টাকায় নিজ বাড়ি তৈরি করে নিজ দায়িত্ত্বে সংসার করে থাকে।
  • একক পরিবারে সবাই নিজ নিজ জায়গায় সুখী হয়। নিজের দুঃখের জন্য অন্যকে দায়ী করতে পারে না।
  • বাড়ির দুই ছেলেই নিজ নিজ একক পরিবার তৈরি করে যদি আলাদা ভাবে আলাদা বাড়িতে থাকে, তাহলে দুই ছেলের মধ্যে সম্পর্ক ভাল থাকে।
  • এ হেন পরিবারে মাঝে মাঝে বাচ্চাদের জন্মদিনে, গেট টুগেদার করতে পারলে, অনুষ্ঠান টি ছোট থেকে বড় সকলের কাছেই বেশ মজাদার হয়ে ওঠে।
  • একক পরিবারে মেয়েটি স্বাধীনভাবে সংসার করতে পারে। তাকে তার শাশুড়ির আজ্ঞা পালন করতে হয় না।  বেশী সংস্কার মেনে চলতে হয় না।

একক পরিবারের অসুবিধা

এরপর একক পরিবারের অসুবিধেগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক

  • বড় কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে অন্যদের মতামত নেওয়া যায় না । ভাল সম্পর্ক থাকলেও সবসময় সবাই কে ফোনে পাওয়া যায় না।
  • হটাত করে কোন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার পড়লে, খোলাখুলি আলোচনা তৎক্ষণাৎ করা যায় না, কারণ একক পরিবারের প্রত্যেকেই খুব ব্যস্ত থাকে।
  • বাচ্চার বড় হয়ে ওঠা নিয়ে প্রচুর চিন্তার মধ্যে সময় কাটাতে হয়। এই চিন্তা কে কম করার জন্য একটির বেশী বাচ্চা আজকালকার ছেলে মেয়েরা নিতেও চায় না। বাচ্চার খাওয়া, পড়াশুনো সব ব্যাপারে প্রচুর পরিশ্রম জড়িয়ে থাকে।
  • একক পরিবারে খরচ বেশী হয়ে থাকে।
  • একক পরিবারের জন্য সবচেয়ে বেশী পরিমানে খারাপ থাকেন বাবা মা রা। তাঁদের অবস্থা এক প্রকারের যাযাবর এর মতো হয়ে যায়। কখনো বড় ছেলের বাড়ি, আবার কখনো ছোট ছেলের বাড়ি।
  • একক পরিবারে বাচ্চারা দাদু থাম্মি কে কাছে পাই না বলে জীবনের এক দিকের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়। বাচ্চারা খুব বোরিং জীবন কাটায়। অনেক বাচ্চা মোবাইল বা টিভি এর প্রতি এডিক্টেড হয়ে ওঠে।

যৌথ পরিবার কে টিকিয়ে রাখার জন্য কি কি করা উচিত?

যুগ বদলেছে। মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার খিদে বেড়েছে। মানুষ আর আগের মতো নিজের সব কার্যকলাপের হিসেব দিতে পছন্দ করে না।

বিদেশী সংস্কৃতি ধীরে ধীরে শিকড় গাড়ছে আমাদের দেশের মাটিতে। তাই তো বর্তমানের বাচ্চারাও একা টিভি দেখতে, একা একা গেম খেলতে, কিম্বা একা একা রাত্রে বেলা ঘুমোতে চায়।

যৌথ পরিবার মানেই ভিড় ,কলহ, চিৎকার চেঁচামিচি। কিন্তু তাও কি আপনি চান আপনার বাবার দ্বারা টিকিয়ে রাখা যৌথ পরিবার কে টিকিয়ে রাখতে? আপনি কি বাড়ির বউমা হয়ে আপনার শাশুড়িমার মতো শ্বশুরবাড়িতে যৌথ পরিবার কে টিকিয়ে রাখতে চান?

আপনার চোখের সামনে কি আপনার বাবার দ্বারা টিকিয়ে রাখা যৌথ পরিবার ভাঙ্গতে চলেছে? আপনি কি এই পরিবার কে ঠিক আগের মতো করে টিকিয়ে রাখতে চান? তাহলে এক ঝলকে দেখে নিন যৌথ পরিবার কে টিকিয়ে রাখার জন্য আপনার কি কি করা উচিত?

আত্মত্যাগ

ছোটোখাটো জিনিষ যা Sacrifice করলে আপনার তেমন কিছু ক্ষতি হবে না, সেই রকম জায়গায় আত্মত্যাগ করুন। ব্যাপার টা খুব সহজ নয়। কিন্তু ইচ্ছে থাকলে অসাধ্যও সাধন হয়ে থাকে।

যেহেতু আপনিই চাইছেন যৌথ পরিবার কে টিকিয়ে রাখতে তাই এই টিপস গুলো আপনাকেই ফলো করতে হবে।

বোঝাপড়া

দুই বা তিন ভাই কিম্বা দুই বা তিন জ্যা এর মধ্যে বোঝাপড়ার করার প্রথম স্টেপ টা আপনিই নিন। একটা মিটিং এরেঞ্জ করুন। বাড়ির আসল সদস্যগুলো কে সেই মিটিং এ থাকতে বলুন।

একসাথে থাকতে কার কোথায় কিসে অসুবিধে হচ্ছে সেইসব ব্যাপারে সবাই কে খোলাখুলি বলতে বলুন।

আলাদা করে থাকলে, তাদের কতরকম অসুবিধে হতে পারে, তাদের বাচ্চারা একাকী অনুভব করতে পারে, সেই সবের আভাস দিন।

কাজগুলো ভাগ করে নিন

কোন ছেলের কত খরচ হয় মোটামুটি একটা হিসেব করে নিন। বাড়ির কমন খরচ গুলোকে আলাদা করে হিসেব করুন। বাড়ির সব ছেলেরা তাদের নিজ পরিবারের খরচ বাড়ির কর্তার হাতে তুলে দিন।

কর্তার ভূমিকা

যৌথ পরিবারে কর্তার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাড়ির কর্তা আর কর্ত্রীর ওপরেই নির্ভর করে যৌথ পরিবারের ভিত। কর্তা কে খুবই বিচক্ষন হওয়া দরকার।

একমাত্র কর্তাই বুঝতে পারবেন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভাঙ্গন কতখানি গভীর। খুব গভীর না হলেই যৌথ পরিবারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

আংশিক ভাবে আলাদা হতে পারেন

তাতেও কি আটকাতে পারছেন না? তাও কি তারা আলাদা হবেই- এই কি তাদের শেষ কথা? তাহলে পুরোপুরি আলাদা না হয়ে, রান্নাঘর টা কে শুধু আলাদা করুন। রান্নাঘর আলাদা হলেই অনেক ঝামেলা মিটে যায়।

রান্নাঘর আলাদা হলে, কেনা কাটা , বাজার করা –এই সব কার্যাবলী আলাদা হয়ে যায়। এর ফলে কে কি খাচ্চে বা কে কত খরচ করছে সেই ব্যাপারে আর কোন সমস্যা হয় না। আর বাথরুম টাকে আলাদা করুন। থাকার জন্য রুম গুলো কে আলাদা করুন, কিন্তু থাকুন একই বিল্ডিং এ।

এতেও কি তারা রাজী হচ্ছে না? একক পরিবারে যদি স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে রেগুলার ঝগড়া, অশান্তি লেগেই থাকে। তাহলে ওইরকম অশান্তির মধ্যে থাকার চেয়ে দুজন আলাদা হয়ে ডিভোর্স দেওয়া কি ভাল নয়? হতে তো পারে- দ্বিতীয় বারে দুজনেই ভাল স্বামী/ স্ত্রী পেয়ে সুখে ঘর করতে পারবে!

ঠিক একইরকম ভাবে, যৌথ পরিবারে ওপরে উল্লিখিত সব টিপস গুলো ফলো করার পরেও যদি আপনি সেই পরিবার কে টিকিয়ে রাখতে পারছেন না, যদি দিনের পর দিন অশান্তি চলছে, তাহলে কি যৌথ পরিবার থেকে একক পরিবার হওয়া শ্রেয় নয়? ভেবে দেখুন।

একক পরিবার থেকে যৌথ পরিবার

যৌথ পরিবারের লোকজন সহজেই একক পরিবারে যেতে পারে। কিন্তু একক পরিবারের লোকজন যৌথ পরিবারে সহজে যেতে পারে না। একক পরিবারে থাকতে থাকতে, পরিবারের সদস্যরা মানিয়ে চলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

যে পরিবার কোন দিক দিয়ে সমস্যায় আছে- হতে পারে শরীরের অক্ষমতা, কিম্বা মনের অক্ষমতা, মানে একা থাকতে না পারা- সেই সব পরিবারই একক পরিবার কে যৌথ পরিবার এ পরিবর্তিত করতে চায়।

তবে এইরকম উদাহরন বর্তমান সমাজে খুব কম পাওয়া যাবে। বর্তমানে মানুষ স্বাধীন হতে হতে একদম স্বাধীনতার পিক পয়েন্ট এ উঠতে চায়। শুধুই কি পরিবার ভাঙ্গছে? ভাঙ্গছে তো বাবা- মা এর সম্পর্ক। মেয়েরা এখন একা একা থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। দোষ কারোর না। আমরা তো সবাই নিমিত্ত মাত্র। সময়ের সাথে সাথে সমাজের পরিবর্তনই তো স্বাভাবিক।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, সবাইকে ভালো রাখুন। চলুন, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে!  

ধৈর্য সহকারে আর্টিকেল টি পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আশা করি বুঝতে পেরেছেন একক পরিবার ও যৌথ পরিবার কাকে বলে, যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ গুলো কি কি, যৌথ পরিবারের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি। আপনি এই ব্যাপারে আপনার মতামত কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না যেন।

One thought on “একক পরিবার ও যৌথ পরিবার কাকে বলে ? যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ। (Reasons for Disintegration of Joint Family)

Leave a Reply to create dummy email Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট