প্রেম করে বিয়ে করলে কি সুখী হওয়া যায়?

প্রেম করে বিয়ে করা ভাল না খারাপ

ভবিষ্যৎ তো অনিশ্চিত; জন্ম, মৃত্যু, আর বিবাহ নিয়ে কে বলতে পারে? তাই প্রেম করে বিয়ে করা ভালো না খারাপ তা সঠিকভাবে বলা অসম্ভব।

কিন্তু তবুও কিছু কিছু জিনিষ নিয়ে আমরা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারনা করতে পারি।

যেমন ধরুন, যদি ভালোভাবে পড়াশুনো করি আর মনে খুব জোর ইচ্ছে থাকে চাকুরী করার; তাহলে আমরা ভবিষ্যতে চাকুরী পাবোই পাবো।

আপনি কি প্রেমে পড়েছেন? আর ভাবছেন এই সম্পর্কে এগোবেন কিনা?

তাহলে অবশ্যই পড়ুন এই পোস্ট টি। এই পোস্ট টি পড়লেই আপনার একটা ধারনা হয়ে যাবে- আপনার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ নয়।

কিছু অভিজ্ঞতা আর কিছু লজিক দিয়ে দেখাবো প্রেম করে বিয়ে করা ভাল না খারাপ।

সব কিছুরেই ভালো দিক থাকে আর সাথে কিছু মন্দ দিক ও থাকে।

চলুন দেখে নিই প্রেম করে বিয়ে করা ভালো না খারাপ।

প্রেম করে বিয়ে করার খারাপ দিকগুলো

১। সময়ের সাথে সাথে সব কিছু ক্ষয়ে যায়

যে কোন জিনিষ বেশীদিন ব্যবহার করলে তা ক্রমশ ক্ষয়ে যায় সময়ের সাথে সাথে।

এমন কি যে কোন জীব এর ভেতরে থাকা অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোও সময়ের সাথে সাথে সাথে ক্ষয়ে যায়।

তাহলে সম্পর্কের বেলায় তা প্রযোজ্য হবেই না বা কেন?

একটা বাচ্চা যখন ছোট থাকে, তখন তার সাথে মায়ের সম্পর্ক খুবই মজবুত থাকে।

কিন্তু যখন বাচ্চাটি বড় হয়ে যায়, মেচিউরিটি অর্জন করে; তখন মায়ের সাথে তার সম্পর্কও ঢিলা হতে থাকে।

প্রেম করে বিয়ে করলে তো সম্পর্কের বয়স কিছুটা হলেও বেড়ে যায়।

২। জানা সম্পর্ক

যে সম্পর্কে আপনি অনেকদিন থেকেই জড়িয়ে পড়েছেন, সেই সম্পর্কের মধ্যে তো আর নতুন কিছু রইল না।

বিবাহ মানেই তো নতুন সম্পর্ক স্থাপন করা।

বিবাহ মানেই তো এমন এক সঙ্গী যার সাথে নতুন করে জেনে ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করা যায়।

৩। অনভিজ্ঞ অবস্থায় সিদ্ধান্ত

জীবন সম্পর্কে যখন তাদের অভিজ্ঞতা কম, তখনই তারা প্রেমে আবদ্ধ হয়ে থাকেন। অনভিজ্ঞ বয়সে নেওয়া সিদ্ধান্ত তো ভুল ও হতে পারে।

কিন্তু যারা জীবনে মেচিউরিটি অর্জন করার পরে জীবন সাথীর সাথে প্রেমে আবদ্ধ হয়, তাদের প্রেম দীর্ঘস্থায়ী হয়।

যারা অল্প বয়সেই প্রেমে আবদ্ধ হয়ে থাকে, তাদের সিদ্ধান্ত, তাদের মন বয়সের সাথে সাথে পরিবর্তন হতে থাকে। আর এই পরিবর্তনই তো ওই প্রেমের সম্পর্ককে নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট হয়ে থাকে।

৪। সম্পর্ক ভাঙ্গনে পিতা মাতার কোন ভূমিকা থাকে না

আপনি যদি ২৫ এর আগেই প্রেম করে বিয়ে করে থাকেন আর তার ১০ বছর পর সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ছটফট করতে থাকেন; পিতা মাতার কিছু করার থাকে না। তবুও উনারা চেষ্টা করে থাকেন তাঁদের সন্তান যেন সুখে থাকেন।

৫। প্রেম এ পড়লে পরিবার কে না জেনেই বিয়ে করে ফেলেন

আপনি হয়তো বলবেন- বিয়ে তো করবো পাত্র কে কিম্বা পাত্রীকে। তাহলে পরিবার সম্পর্কে জেনে কি হবে?

আপনি যদি পাত্র হয়ে থাকেন, তাহলে পাত্রীর পরিবার সম্পর্কে না জেনেও আপনি প্রেমে পড়ে বিয়ে করতে পারেন। কারন আপনাকে কখনোই শ্বশুরবাড়ি তে বেশী সময় কাটাতে কেউ বাধ্য করবে না।

কিন্তু আপনি যদি পাত্রী হয়ে থাকেন; তাহলে নতুন বাড়ীতে শিফট হওয়ার আগে আপনার জানা দরকার আপনি কোন বাড়ীতে যাচ্ছেন। নিষ্ঠুর হলেও এটাই সত্য যে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি টাই হবে আপনার বাড়ী।

আপনি হয়তো বলতে পারেন-“ কেন, আমরা দুজনেই চাকুরী করে শহরে ফ্ল্যাট কিনে আলাদা থাকব।“

সে আপনি আলাদা থাকতেই পারেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রায়ই আপনাকে শ্বশুরবাড়ি যেতেই হবে। কিন্তু ছেলেটিকে তার শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য কেউ বাধ্য করবে না। এটাই আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি।

তাই আপনি পাত্রী হলে, অবশ্যই পাত্রের পরিবার সম্পর্কে জানুন। এমন অনেক উদাহরন দেখেছি- প্রেম করেছে ৪-৫ বছর, একসাথে সংসার করেছে ৭-৮ বছর। বাচ্চাও আছে। তারপরেই হয়েছে বিচ্ছেদ।

একজন পাত্রের ও উচিৎ পাত্রীর পরিবার সম্পর্কে জানা যদিও পাত্র পাত্রীর বাড়ীতে থাকবেন না। কিন্তু পরিবার দিয়ে বোঝা যায় পাত্র বা পাত্রী টি কেমন।

সিভি দেখে একজন ইন্টারভিউয়ার বুঝতে পারেন যে ক্যান্ডিডেট তার কোম্পানির জন্য উপযুক্ত কিনা। ঠিক তেমনি, পরিবার দেখে বোঝা যায় ভালো সম্পর্ক স্থাপনের জন্য মাটি উর্বর কিনা।

প্রেম করে বিয়ে করার ভালো দিকগুলো

১। জীবন সাথীর সাথে বেশী সময় কাটাতে পারবেন

ভবিষ্যতে কি হবে কে বলতে পারে? তাই বর্তমান কে গুরুত্ব দিয়ে বেঁচে থাকতে গেলে প্রেমে পড়লে তো বিয়ে করতেই হবে।

আবার এটাও ধরে নিতে হবে ভবিষ্যতে যা হবে তার জন্য আপনি ই দায়ী। সম্পর্ক যদি ভেঙ্গে যায়, তাও আপনি ই দায়ী। কারন আপনিই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এইরকম মানসিকতা যদি রাখতে পারেন, তাহলে তো সমস্যা হওয়ার কথাই নয়।

বরং, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো প্রেমিক/ প্রেমিকার সাথে কাটাতে পারবেন। এর তো আনন্দই আলাদা।  

২।  পিতা মাতার দায়িত্ব কমিয়ে ফেলবেন

এখন সঠিক পার্টনার খুঁজে পাওয়াটাই এক বিশাল চাপের ব্যাপার। আপনারা যদি নিজে নিজেই পার্টনার খুঁজে নেন ; পিতা মাতার দায়িত্ব কিছুটা হলেও কমে যায়।  

৩। আত্মনির্ভর হতে শিখবেন

প্রেম করে বিয়ে করলে, কম বয়সেই দায়িত্ব চলে এসে। আর তখন দেখবেন আপনি দায়িত্ব নিতে শিখেও গেছেন।

আপনি কম বয়সে প্রেম করলে, আপনি খুব মন দিয়ে পড়াশুনো করে চাকুরী পাওয়ার চেষ্টা করবেন।

আপনি যদি চাকুরী পাওয়ার পরে বিয়ে করেন, তাহলে অসুবিধে কোথায়? আপনি শুধু আপনার না, বরং আরো একজনের দায়িত্ব নিচ্ছেন- এ তো ভালো ব্যাপার।

প্রেম তো কম বয়সেই হয়ে থাকে। জীবনে মেচিউরিটি চলে এলে প্রেম-ত্রেম সবই ফালতু লাগে,

যারা প্রেম করে বিয়ে করে থাকেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন এই ব্যাপারে।

তবে সার্ভে করে দেখা গেছে প্রেম করে বিয়ে তে বিচ্ছেদ এর হার বেশী। আপনি যখন গাছ লাগান, মাটি চেক করেন না?

গাছ লাগাবার আগে তো মাটির উর্বরতা দেখা উচিৎ। তাই তো? ঠিক তেমনি, সম্পর্কও একটা গাছের মতো। এই সম্পর্ক থেকেই তো আরও কতো ফুল, ফল, নতুন গাছ জন্ম নেবে।

প্রাচীনকাল থেকে কুষ্ঠি দেখে বিবাহ রীতি চলে আসছে। তবে আমিও এইসবে বিশ্বাস করি না।

কিন্তু কি বলুন তো একে অন্যের পরিবার আর তার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জেনে নিতে পারলে ভবিষ্যতে ভালো ফল আসার সম্ভাবনা থাকে।

তবে কিছুই নিশ্চিত রূপে বলা যায় না।

প্রেম করেও বিয়ে করতে পারেন তবে তার আগে এক অপরের সম্পর্কে, এমন কি একে অন্যের পরিবার সম্পর্কেও জেনে নিন। আর বিয়ে করার আগে অবশ্যই দুজনেই আত্মনির্ভর হন।

নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করার আগে সব কিছু জেনে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

এরেঞ্জ মেরেজ এ আলাদা একটা নতুনত্ব থাকে, আলাদা একটা আমেজ থাকে। যারা এরেঞ্জ মেরেজ করেছেন তারা নিশ্চয় ফিল করে থাকবেন। তবে এরেঞ্জ মেরেজ এ কি বিচ্ছেদ হয় না? অবশ্যই হয়।

আশা করি প্রেম করে বিয়ে করা ভালো না খারাপ সেই সম্পর্কে আপনি একটা ধারনা তৈরি করতে পেরেছেন। এই নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে বিনা দ্বিধায় আপনি/ আপনারা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, সবাইকে ভালো রাখুন। চলুন, সবাই মিলে একসাথে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোনা ভরে উঠুক ঈশ্বরের আশীর্বাদে!

2 thoughts on “প্রেম করে বিয়ে করলে কি সুখী হওয়া যায়?

  1. প্রেম করছি ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে তাকেই বিয়ে করবো।ভেবে দেখলাম ভালো মন্দ দুটোতেই সমান ।একজন ভালো মানুষ হবার চেষ্টা করবো শুধু সবসময় ,কখনো কাউকে না ঠকানো, এবং সৎ ভাবে জীবন যাপন করতে চাই। তাকে পাই বা না পাই সেটা সময় ই বলে দেবে।এবং বর্তমান সম্পর্কটি আমার জন্য ভালো কি খারাপ সেটাও সময়ে বলে দেবে।ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যেই করেন।

Leave a Reply to Tiulip Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট